এমন কোনো দিন নেই, যেদিনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নেই। ১৪ থেকে ২৫ বছরের কিশোর-তরুণেরা সারা দেশে বেঘোরে প্রাণ হারান বেশি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ২৮৪। মোট মৃত্যুর শতকরা ৩৫ ভাগ হয় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। কমবেশি দুই হাজার মৃত্যু ঘটেছে মোটরসাইকেলের চালকদের। বছর বছর এই সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এই মৃত্যুর মিছিল কমানো দরকার। অবাক করা একটি তথ্য তুলে ধরছি।
ভিয়েতনামে ৯ কোটি ৬০ লাখ জনতার অর্ধেকসংখ্যক অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মোটরসাইকেল আছে। ভুল বললাম, কারণ, মোটরসাইকেল নয়, আছে ৫০ সিসির স্কুটার। বাংলাদেশে ১৭ কোটি জনতার আছে মাত্র শতকরা ৭ ভাগের কিছু বেশি বা ১২ লাখ মোটরসাইকেল। পৃথিবীর মধ্যে ভিয়েতনামে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ আর বাংলাদেশে সর্বনিম্ন। কিন্তু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ও ভিয়েতনামে সর্বনিম্ন। তথ্যটির সপক্ষে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় করা বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউটের (এআরই) গবেষণা ফলাফল বলছে ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে বাংলাদেশে মারা যাচ্ছে ২৮ জন কিন্তু ভিয়েতনামে মারা যাচ্ছে মাত্র ৪ জন, ভারতে এই সংখ্যা ৭।
একটি ব্যক্তিগত যানের মালিক হওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশে ৫০ সিসির স্কুটার সংস্কৃতির বিকাশ না হয়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ সিসির মোটরসাইকেলের। ভিয়েতনামের এত কম দুর্ঘটনার মূল কারণ হলো সেখানে ১০০ থেকে ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল নয়, বরং ৫০ সিসির স্কুটারের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এই নিবন্ধকারের সুযোগ হয়েছে দেড় বছরের মতো ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে থাকার। সকালে অফিসে যাওয়ার রাশ আওয়ারে একটি ট্রাফিক লাল সিগন্যালে হাজার হাজার পুরুষ-মহিলাকে স্কুটার নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সবই ৫০ সিসির স্কুটার, কিন্তু একটিও মোটরসাইকেল নয়। সেই ৫০ সিসির স্কুটারে রাইড শেয়ারও হয়, তবে একজনের বেশি নয়।