মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকট

বণিক বার্তা মো. শফিকুল ইসলাম প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২২, ০২:২৪

করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা কাটিয়ে উঠতে সব রাষ্ট্রপ্রধান হিমশিম খাচ্ছেন। তারপর শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা বিশ্বকে অবাক করে নতুন সংকটে ফেলে দিয়েছে। রেহাই পায়নি উন্নত দেশগুলোও। আমাদের দেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যার জন্য জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মান কমে গিয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে অনেক গুণ, যা গত নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি মানুষকে কঠিন বিপদে ফেলে দিয়েছে। গরিব মানুষ খুবই নাজেহাল অবস্থায় তাদের জীবন অতিবাহিত করছে। শুধু গরিব নয়, মধ্যবিত্তও সংকটে। পারে না বলতে, কিন্তু সহ্য করছে। বাজারে গেলেও চোখে চিন্তার ভাঁজ দেখা যায়। কারণ সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধ্বগতিতে দরিদ্র দেশগুলোয় গত তিন মাসে ৭ কোটি ১০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে। যদিও প্রত্যেক দেশের সরকার গত দুই বছর অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার পরও অনেক মানুষের উপার্জনক্ষমতা কমে গিয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। শ্রমের বিনিময়ে যে পরিমাণ আয় বেড়েছে, তার চেয়ে খরচ বেড়েছে বেশি। তাই মানুষ বিপদে।


গণমাধ্যমে দেখলাম একজন মানুষ মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করেও তার পক্ষে মাসের ব্যয় বহন কঠিন হয়ে পড়েছে। সাধারণ এবং গরিব মানুষের অস্বস্তির জীবন পণ্যমূল্য বৃদ্ধি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনে নিয়ে এসেছে অন্ধকার। এছাড়া পানি ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জ্বালানি সংকট সাধারণ মানুষের জীবনে এক কালো মেঘ হিসেবে হানা দিয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অনেক দিন চলছে। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি সংকট জীবনে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। জ্বালানি সংকট নিয়ে সরকার যে পদ্ধতি নিয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর। এ অবস্থায় জ্বালানি সাশ্রয় ছাড়া কোনো উপায় নেই। সরকারকে এ বিষয়ে আরো কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে জ্বালানি ব্যবহারে। জ্বালানি সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি এখন বিশ্বসংকট। জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান করে তা উত্তোলন করতে হবে। আমরা গ্যাস উত্তোলনে কেন পিছিয়ে বা নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান কেন করতে পারছি না, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। বিদেশী ফল ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি বন্ধ করতে হবে। দেশীয় ফল খাওয়ার বিষয়ে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদার রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে। এছাড়া বিদেশ থেকে বিলাসপণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে।


প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ বা তার বেশি দামে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দরে এখনো সয়াবিন তেল কেনা যাচ্ছে না। চাল কিনতাম ২০ কেজি ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। এখন কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৯৫০ বা ২০০০ টাকায়। তাহলে মানুষ কী খাবে। আমাদের চালের উৎপাদন বাড়িয়ে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারলে এ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।


বিশ্ববাজারে দাম কমলে আমাদের দেশে আগের দামে জিনিসপত্র বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু অন্যান্য দ্রব্যের বাড়তি দাম বহনে পিষ্ট হচ্ছে প্রান্তিক, শ্রমজীবী ও সীমিত আয়ের মানুষ। সরকার ভোজ্যতেল আমদানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুল্ক কমিয়ে আনতে পারে। ফলে তেলের দাম কমতে পারে বাজারে। মোটা চাল ২০২১ সালে বিক্রি হতো কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা, এখন অনেক বেশি দামে ওই চাল কিনতে হচ্ছে। মানুষ কী খাবে এবং কী করবে। বাজারে গেলে মানুষ এখন অসহায় হয়ে যায়। গরিব মানুষ খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে।


মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকট অর্থনীতির জন্য এক অশনিসংকেত। এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো বড় বিপদ হতে পারে। সেজন্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সঠিকভাবে অর্থ বাজার মনিটরিং করতে হবে। মূল্যস্ফীতিতে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা ও লবণের দাম যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে থাকে সে ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশ, গত ৯ বছরে সর্বোচ্চে, যা সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলছে। তাই মূল্যস্ফীতি সামলে কীভাবে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়া যেতে পারে—সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সরকারকে দেশের হতদরিদ্র মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী খাতে ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে।


তবে আমাদের মারাত্মক সমস্যা তেল ও চালের মূল্যবৃদ্ধি। সরকার তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সেই অনুসারে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না কেন, সে বিষয়ে সরকারকে বাজারে তদারকি বাড়াতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পেঁয়াজ বা চালের সমস্যা থেকে উত্তরণে অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ বাজারে কঠোর তদারকির মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, সে অনুসারে মানুষের আয় বা মজুরি বাড়েনি। তাই ভোগান্তি বেশি হচ্ছে সাধারণ বা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। এ ভোগান্তি কমাতে না পারলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।


টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি বাড়াতে হবে। কারণ অতীতে শুধু দরিদ্র মানুষকে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে দেখা যেত, এখন মধ্যবিত্তও যোগ দিয়েছে সে কাতারে। ভোর থেকে সাধারণ মানুষ টিসিবির ট্রাকের অপেক্ষায় থাকে। ট্রাক আসতেই হুড়োহুড়ি লেগে যায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us