জ্বালানি তেল আমদানির আগে ভাবতে হবে

কালের কণ্ঠ আবু আহমেদ প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:৪৯

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয় এবং জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের রাশিয়া থেকে সস্তায় জ্বালানি তেল আমদানির চিন্তাটি লক্ষণীয়। সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি সম্ভব নয় বলেই অভিমত পাওয়া গেছে। কিন্তু আমি মনে করি, এ সম্ভাবনাটি জিইয়ে রাখা উচিত।


এতে বাংলাদেশকে ঝুঁকি নিতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর ঝুঁকির পেছনে বড় দুটি যুক্তি হলো রাশিয়ার তেল দামে সস্তা এবং বাংলাদেশকে জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়টি যে পর্যায়েই থাকুক, এ ব্যাপারে সরকারের তৎপরতা যথার্থ। রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আনতে গেলে অন্য পক্ষ আমাদের চাপে রাখবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তার অবস্থান ও যুক্তি স্পষ্ট করতে হবে, ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে হবে, তার কূটনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সব অস্ত্র কাজে লাগাতে হবে।


রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় করতে হলে বড় বাধাটি আসছে অর্থ পরিশোধ প্রশ্নে। আমি মনে করি, রুবল-টাকার বিনিময় বা সোয়াপিং করতে হবে এবং এটা সম্ভব। তবে প্রস্তুতি লাগবে। রাশিয়া আমাদের কাছ থেকে যেসব পণ্য নেবে তা রুবলের বিনিময়ে নেবে। আর আমরা তাদের কাছ থেকে যা ক্রয় করব তার মূল্য টাকা দিয়ে পরিশোধ করা হবে। এটা সম্ভব। কারণ অতীতে আমরা না করলেও অন্যরা এই দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি করেছে। এখানে যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায়, সেটা হচ্ছে আমরা রাশিয়ায় তেমন কিছু রপ্তানি করি না। সুতরাং রপ্তানি না করলে রুবল আয় করা সম্ভব নয়। এটারও ব্যবস্থা একটাই, সেটা হলো তাদের রাজি করানো যে আপনারা আমাদের কাছ থেকে আমদানির পরিমাণ কিছুটা হলেও বাড়ান।  


বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসেবে ডলার সংরক্ষণ করতে হলে দ্বিপক্ষীয় পেমেন্ট বা মূল্য পরিশোধব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে আমরা তাদের মুদ্রায় এবং তারা আমাদের মুদ্রায় লেনদেন করবে। এটার যেহেতু নজির আছে, তাই সম্ভব। এখানে প্রশ্ন আসবে, মুদ্রার বিনিময় হার কিভাবে নির্ধারণ হবে। এ ক্ষেত্রে মুদ্রার মূল্য নির্ধারণে মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে অথবা ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রার মূল্যকে ভিত্তি হিসেবে ধরা যেতে পারে—এ বিষয়টি ব্যাংকাররা ভালো বলতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার আছে। এখানে আরেকটি ঘটনা ঘটবে, সেটি হচ্ছে এর মাধ্যমে বৈশ্বিক লেনদেনে আরেকটি জানালা খুলে যাবে।


সত্যটা হচ্ছে, আগামী দিনে সারা পৃথিবীতেই ডলার তার একক অবস্থান থেকে অনেক নিচে নেমে যাবে। তার পরও ডলার আধিপত্য বিস্তারকারী মুদ্রা হিসেবেই থাকবে, তবে অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাবে। এটা যুক্তরাষ্ট্র দেখছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেখছে, সবার নজরেই পড়ছে।


ইউক্রেন-রাশিয়ার এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন আসছে। এর ফলে যা ঘটতে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক লেনদেনব্যবস্থা আগের মতো থাকবে না। এরই মধ্যে সুইফটের বিকল্প দুটি বের হয়েছে। একটি রাশিয়া বের করেছে, অন্যটি চীন করছে। সুইফটের বিকল্প বের হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সুইফট সিস্টেমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে। এর ফল হচ্ছে, অনেক রাষ্ট্র বিকল্প ব্যবস্থায় চলে যাচ্ছে। ভারত তো ঘোষণা দিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ক্রয় করছে। তা-ও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে। তারা এই তেল এনে অন্যত্র ব্যবসাও করছে।   দেশটি কম দামে তেল ক্রয় করার পর রিফাইন করে আবার বাইরে বিক্রি করছে। এতে ভালো একটা ব্যবসা হয়ে যাচ্ছে ভারতের। অথচ ভারত পশ্চিমাদের মিত্র। বিশেষ করে কোয়াডের সদস্য দেশ। তার পরও তারা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারছে।


ভারতের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে দুই কারণে। প্রথমত, তারা সাহস দেখিয়েছে। দ্বিতীয়ত, বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে তাদের কেউ চেপে ধরতে পারছে না। সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো  দেশগুলোর, যাদের রয়েসয়ে, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তার পরও আমি বলব, বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হোক। এরই মধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা সম্ভব নয় বলে অভিমত এসেছে। এর বড় দুটি কারণ দেখানো হয়েছে দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় তেল ক্রয়ে বাংলাদেশের পক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে রুবলের জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, রুশ তেলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ডলারের মাধ্যমে ক্রয় করাও কঠিন হবে। তবে সার ও খাদ্যপণ্য নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে না।


আমার মনে হয়, রাশিয়ার তেল কেনায় পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে এ ব্যাপারে একটি কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো দরকার। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসবে না। কারণ এখানে বাংলাদেশের পক্ষে বড় যুক্তি হিসেবে দেখানো যেতে পারে যে যেহেতু অন্যরা ক্রয় করছে, এমনকি ইউরোপের কিছু দেশও ক্রয় করছে, তাহলে বাংলাদেশের মতো দেশ কেন পারবে না। বাংলাদেশকে নিজের নীতিতে চলা উচিত। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দক্ষতা ও সততা বাড়ানোর বিকল্প নেই। একই সঙ্গে ভারত থেকে সাশ্রয় মূল্যে তেল আনা যায় কি না সেটাও বাংলাদেশের বিবেচনা করা দরকার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us