ঢাকা থেকে দূরে গেলেই ফিকে হয়ে আসে উন্নয়ন

প্রথম আলো সোহরাব হাসান প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০২২, ১৬:৫০

যাঁরা ভাবেন ‘ঢাকাই বাংলাদেশ’, তাঁরা যেভাবে দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি ও সমাজকে দেখেন, ঢাকার বাইরের মানুষগুলোর চিন্তাভাবনা তাঁদের সঙ্গে একেবারেই মেলে না। ঢাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা তোলপাড় করি, পত্রিকায় কিংবা টিভি টক শোতে ঝড় তুলি কিন্তু গ্রামগঞ্জে থাকা মানুষের কাছে এসব সামান্যই রেখাপাত করে। তাঁরা রাজধানীকেন্দ্রিক নেতাদের মুখস্থ কথায় বিশ্বাস করেন না। এমনকি নির্বাচনী ঢাকও তাঁদের কাছে দূরের বাদ্য বলে মনে হয়।


বৃহস্পতিবার একটি পারিবারিক কাজে গিয়েছিলাম শরীয়তপুরের ডামুড্যার এক প্রত্যন্ত গ্রামে। এলাকাটি আওয়ামী লীগের এককালীন প্রভাবশালী নেতা আব্দুর রাজ্জাকের। তাঁর ছেলে নাহিম রাজ্জাক এখন সেখানকার সংসদ সদস্য। পদ্মা সেতু পার হয়ে এক্সপ্রেস সড়ক সোজা চলে গেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। আর বাঁ দিকের ২৭ কিলোমিটার সরু সড়কটি শরীয়তপুরের দিকে। এক্সপ্রেস সড়কের পাশে এটি মনে হবে উজ্জ্বল আলোর পাশে ‘আবছা অন্ধকার’। খানাখন্দে ভরা এ সড়কে দুটি গাড়ি পাশাপাশি যেতেও বেগ পেতে হয়। কিছু দূর যেতেই আমাদের থামতে হলো। সামনে অনেক গাড়ি আটকা পড়েছে। খবর নিয়ে জানলাম, রাতে একটি ট্রাক রাস্তার পাশে পড়ে গিয়েছিল, সেটি তোলার চেষ্টা হচ্ছে। স্থানীয় তরুণেরা পরামর্শ দিলেন গঙ্গানগর হয়ে ঘুরপথে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। আমরা তা-ই করলাম। শরীয়তপুরে বাস টার্মিনালের পাশে একটি রেস্তোরাঁয় চা খেতে খেতে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলো। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তাঁরা বললেন, রাজধানী থেকে আমরা যত দূরে আছি, উন্নয়ন থেকেও তত দূরে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও লোডশেডিং আমাদের ভীষণ বিপদে ফেলেছে। প্রতিদিন শহরে তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি।


শরীয়তপুরে যেতে সড়কের দুই পাশে আড় বেঁধে পাট শুকানোর দৃশ্য দেখলাম। বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রতিটি জেলায় প্রচুর পাট হয়। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, গত দুই বছর তাঁরা পাটের ভালো দাম পেয়েছেন। তাই চাষও হয়েছে বেশি। তাঁরা জমিতে তিনটি ফসল ফলান। জমিতে পানি থাকতে পাট চাষ করেন। পাট ওঠার পর ধান চাষ হয়। আর ধান উঠে গেলে শীত মৌসুমে সবজি চাষ করেন তাঁরা।


সেখানেই কথা হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন, এ রকম তৃণমূলের এক নেতার সঙ্গে। একবার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনও করেছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, দলের অবস্থা কী? উত্তরে জানান, এখানে তো আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাহিম রাজ্জাক, আরেক গ্রুপের সংরক্ষিত আসনের সদস্য পারভিন হক সিকদার। ১৫ আগস্ট তাঁরা শোক দিবসও পালন করেছেন আলাদাভাবে। পাশের জেলা মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিভাজনের কথা সবাই জানেন। একদিকে শাজাহান খান, অন্যদিকে বাহাউদ্দিন নাছিম। এখন দেখা যাচ্ছে, দলীয় কোন্দল থেকে শরীয়তপুরও মুক্ত নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারের কেউ না কেউ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। একজন গেলে তিনি আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে যান। এখন কেউ কেউ আমেরিকা-ইউরোপ যাওয়ারও চেষ্টা করছেন।


আরেকজন সাংবাদিককে শরীয়তপুরের হালহকিকত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বললেন, বৃহত্তর ফরিদপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া মন্ত্রিসভায় যে দ্বিতীয় সদস্য আছেন, তিনি শরীয়তপুরের এনামুল হক শামীম। অথচ শরীয়তপুর বরাবরের মতোই অবহেলিত।


দুই পাশাপাশি জেলার পার্থক্যটি সহজেই চোখে পড়ে। মাদারীপুরের সড়কগুলো ঝকঝকে। আর শরীয়তপুরের সড়কগুলো বেহাল। পথে পথে আরেকটি বিষয় খেয়াল করলাম, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের, তাঁদের বাবা-দাদার নামে বিরাট বিরাট ফলক, পোস্টার। সবাই ইতিহাসে নিজেদের নাম খোদাই করতে তৎপর। তাঁরা জানেন না মানুষের হৃদয় জয় করতে পারলে এভাবে পথে ও পাথরে নাম খোদাই করার প্রয়োজন হয় না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us