খেলাপি ঋণে নতুন আরেক মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। ব্যাংক খাতে এখন খেলাপি ঋণ সোয়া লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সময় উত্তরাধিকারসূত্রে খেলাপি ঋণ পেয়েছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর একের পর এক আর্থিক খাত কেলেঙ্কারি এবং ঋণখেলাপিদের বারবার সুযোগ দেওয়ার পর সেই খেলাপি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
খেলাপি ঋণের এ তথ্য ব্যাংকগুলোর দেওয়া। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এর পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি। কেননা খেলাপি ঋণের এ তথ্য ব্যাংকগুলোর নিজেরই দেওয়া। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন করে দেখতে পারে প্রকৃত চিত্রটা কী। এ জন্য আপাতত একটি উদাহরণই যথেষ্ট।
যেমন বেসরকারি খাতের ইউনিয়ন ব্যাংকের নিজের হিসাবে তাদের খেলাপি ঋণ ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকই গত এপ্রিল মাসে ইউনিয়ন ব্যাংক পরিদর্শন করে বলেছে, আসলে তাদের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও গত সপ্তাহে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০টি ব্যাংককে দুর্বল বলে চিহ্নিত করেছে।
আইএমএফ বলেছিল প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি। সেই হিসাব ধরলে এখন প্রকৃত খেলাপি ঋণ আসলে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী খেলাপিদের নানা সুবিধা দিয়েছেন, এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা গেছে।
মইনুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি
এ ছাড়া গত ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে একটি রিপোর্ট দিয়ে বলেছিল, বাংলাদেশে খেলাপি আড়াল করে রাখা আছে। খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার তুলনায় অনেক বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ হবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি মইনুল ইসলাম এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, আইএমএফ বলেছিল প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি। সেই হিসাব ধরলে এখন প্রকৃত খেলাপি ঋণ আসলে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী খেলাপিদের নানা সুবিধা দিয়েছেন, এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখা গেছে। সুতরাং এখন যে সোয়া লাখ কোটি টাকার তথ্য দেওয়া হচ্ছে, সেই হিসাব অসত্য।