নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের তত্ত্ব কি ভুল হতে চলেছে?

ইত্তেফাক এম এ খালেক প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২২, ০৯:৩৫

ব্যাংক ঋণের সুদ ও নীতি সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ধারণা কি ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে? করোনার বিপর্যয় এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি এখন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক রেট ও নীতি সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। কিন্তু তার পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সাধারণভাবে মনে করা হয়, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ও নীতি সুদের হার বাড়ালে ঋণগ্রহণ তুলনামূলক ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মুদ্রাবাজারে মানি সাপ্লাই কমে যায় এবং একপর্যায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।


অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেছেন, সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যে ধারণা এতদিন বিশ্বব্যাপী প্রচলিত ছিল, তা ইতিমধ্যে ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। নীতি সুদের হার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামান্যতম সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না, বরং এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতির প্রচলিত ধারণা মোতাবেক, কোনো দেশ বা অঞ্চলে যখন মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক উচ্চতায় চলে যায়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে সহজ পম্হা থাকে ব্যাংক রেট ও নীতি সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়া। ব্যাংক রেট ও নীতি সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়া হলে ঋণগ্রহণ অধিকতর ব্যয়বহুল হয়ে যায়। সেই অবস্থায় একজন উদ্যোক্তা চাইলেই ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন না। এতে বাজারে মানি সাকু‌র্লেশন স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন মনে করে দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, তখন তারা বাজারে সরবরাহকৃত অর্থ থেকে কিছু মুদ্রা তুলে নেয়। আবার যখন বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানোর দরকার হয়, তখন কিছু মুদ্রা বাজারে ছেড়ে দেয়। অবশ্য ব্যাংক রেট ও নীতি সুদের হার কমানোর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও অর্থনীতির ওপর পড়ে। এতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে গেলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে বেকার সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে।


করোনা-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হলে প্রতিটি দেশেই উন্নয়ন কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু একই সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্হিতি সম্পূর্ণ পালটে যায়। প্রতিটি দেশেই করোনা-উত্তর অর্থনৈতিক পুনর্বাসন কার্যক্রম স্হবির হয়ে পড়ে। সবচেয়ে সমস্যা দেখা দেয় মূল্যস্ফীতির ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহত্ অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম নীতি সুদের হার বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা এ পর্যন্ত কয়েক দফায় নীতি সুদের হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক গত কিছুদিন ধরে প্রায় প্রতি মাসেই নীতি সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এ বছরের মধ্যেই নীতি সুদের হার অন্তত ৩ থেকে ৪ শতাংশ বাড়াতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ব্যয় ইতিমধ্যে অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। মার্কিন অর্থনীতির ৭০ শতাংশই আসে ভোক্তা ব্যয়ের মাধ্যমে। তাই ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়ার অর্থই হলো দেশটির অর্থনীতিতে চরম মন্দা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠেছে। গত ২৯ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক একবারে নীতি সুদের হার শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। মার্কিন অর্থনীতি দ্বিতীয় প্রান্তিকেও প্রথম প্রান্তিকের মতো সংকুচিত হয়েছে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিতভাবেই ভয়াবহ মন্দার করলে পড়তে যাচ্ছে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেছিলেন, এই পদক্ষেপের ফলে তাদের দেশে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ভবিষ্যতে এই প্রত্যাশা পূরণ হবে এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। গত ৪০ বছরের মধ্যে এটা দেশটির সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। ১৯৮২ সালের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা এত স্ফীত মূল্যস্ফীতি আর কখনোই প্রত্যক্ষ করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নীতি সুদের হার বাড়ানোর ফলে তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি কমেনি। কিন্তু এতে তাদের অন্যভাবে লাভ হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের যে বিনিয়োগ রয়েছে, তা তারা প্রত্যাহার করে অধিক মুনাফা অর্জনের প্রত্যাশায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বার্থপর আচরণ বিশ্বের উন্নয়নশীল ও বিকাশমান অর্থনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনছে। এসব দেশের ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। প্রতিটি দেশই উচ্চ মূল্যস্ফীতির অভিজ্ঞতা অর্জন করে চলেছে। শুধু তাই নয়, তারা পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় বিশ্ব এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us