বাংলাদেশের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হলেও সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রধান হাতিয়ার বাজেটে, বিশেষ করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অতীতে এর প্রতিফলন ঘটেনি এবং বর্তমানেও ঘটছে না।
এর ফলে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোতে দারিদ্র্যহার বেড়েই চলেছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় পর্যালোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১১-১৫) বলা হয়, দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসের গতিতে তারতম্য ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে (সে সময় বর্তমান রংপুর বিভাগের জেলাগুলো রাজশাহী বিভাগের এবং বর্তমান ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলো ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল) দারিদ্র্যহার শুধু ধীর গতিতে হ্রাস পায়নি, বরং কোনো কোনো শ্রেণিতে (ক্যাটেগরি) দারিদ্র্যহার বেড়েছে। অন্য দিকে অন্য তিনটি বিভাগ-ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে দারিদ্র্যহার দ্রুত গতিতে হ্রাস পেয়েছে।
২০০৫ সালে সর্বোচ্চ তিনটি দরিদ্র বিভাগ বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনায় দারিদ্র্যহার ছিল যথাক্রমে ৫২, ৫১ দশমিক ২ ও ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্য দিকে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে দারিদ্র্যহার ছিল যথাক্রমে ৩২, ৩৩ দশমিক ৮ ও ৩৪ শতাংশ (সূত্র : হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিউচার সার্ভে (হায়েস)-২০০৫)।
দেশের আঞ্চলিক বৈষম্য সমস্যা সমাধানের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এবং এজন্য কিছু কৌশল নির্ধারণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে ছিল-ক. পিছিয়ে পড়া অঞ্চল বা বিভাগগুলোর জন্য এডিপিতে একটি পৃথক তহবিল সংরক্ষণ এবং এ তহবিল থেকে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের মতো পশ্চাৎপদ অঞ্চল বা বিভাগগুলোর উন্নয়নে বিনিয়োগ করা;
খ. উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনকালে আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাসে অবদান রাখবে এমন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার প্রদান করা; গ. পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন; ঘ. কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোয় শিল্পায়ন সম্প্রসারণ এবং এ জন্য উদ্যোক্তাদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা প্রদান; ঙ. কৃষির এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এমন কার্যাবলির সম্প্রসারণ করা;