বন্যা মোকাবিলা: প্রকৃতির ভ্রুকুটি ও আমাদের বিস্কুট দৌড়

বাংলা ট্রিবিউন এরশাদুল আলম প্রিন্স প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২২, ২০:৩৯

সিলেট-সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনায় আকস্মিক বন্যায় মানবিক বিপর্যয় আমরা দেখেছি। এছাড়া নীলফামারী-কুড়িগ্রামেও বন্যা হয়েছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বন্যা দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।


সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সেখানকার বেশিরভাগ এলাকা এখনও পানির নিচে। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে।


এসব এলাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গা বা ভবনে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অধিকাংশই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক জনপদই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যত্র যাওয়ার নৌকাও নেই। পানির অভাবে, খাদ্যের অভাবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপেই অনাহারে-অর্ধাহারে মানুষ দিন কাটাচ্ছে।


বন্যার কারণ কী


বন্যার কারণ কী সে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নানা মত রয়েছে। বন্যা, পানি ও নদী বিশেষজ্ঞদের কথা থেকে কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে।


এক.


প্রতি বছর এ সময়ে উজানে অর্থাৎ ভারতের মেঘালয় ও আসামে এবং সিলেট অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবারে ওই অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। আসামের চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই অতিবৃষ্টিকে সিলেটের বন্যার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


দুই.


এদিকে আসামের পাহাড় থেকে আসা পানি বরাক নদী দিয়ে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারায় প্রবেশ করছে। এটিও সিলেটের বন্যার কারণ।


অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসা জলপ্রবাহ ব্রহ্মপুত্র হয়ে কুড়িগ্রাম দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি করছে।


তিন.


বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রতিক্রিয়া আমরা অস্বীকার করতে পারি না। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার ও ভয়াবহতা বাড়ছে। সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যাও এর বাইরে নয়। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে গত দুই বছর ধরে ‘লা নিনা’ অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে বলে মনে করা হয়। যদিও এ অঞ্চল প্রশান্ত মহাসাগর থেকে দূরে, কিন্তু এর প্রভাব (ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক) থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয় বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।


চার.


আসাম-মেঘালয় অঞ্চল ও আমাদের সিলেট অঞ্চলের পাহাড় ও টিলা কেটে, বন উজাড় করে ঘরবসতি করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও একই পরিস্থিতি। এর ফলে পাহাড় বা উচ্চ ভূমি থেকে মাটি ক্ষয়ে ভাটিতে আসছে। কিন্তু প্রবাহ পথে সে পলিমাটি আরও নিম্নভূমি বা ভাটিতে নামতে পারছে না। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সিলেট বা আশপাশের অঞ্চলে মাটির স্তর বৃদ্ধি করে পানির ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস করছে। নদীর নাব্যও হ্রাস করছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই সেখানে বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে।


পাঁচ.


জলীয় বাষ্প পাহাড়ে বাধা পেয়ে ওপরের দিকে উঠে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়, যা আমরা সবাই জানি। একই সময়ে এখন আসাম-মেঘালয় অঞ্চলে একটি সক্রিয় মৌসুমি বায়ু বিরাজ করছে। এবার সেখানে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভাটিতে যা প্রবাহিত হয়ে বন্যায় রূপ নিচ্ছে।  


ছয়.


সিলেট ও সুনামগঞ্জের সাম্প্রতিক বন্যার জন্য কিশোরগঞ্জ হাওরের অল ওয়েদার রোডকেও কেউ কেউ দায়ী করছেন। বলা হচ্ছে, এই সড়ক মেঘালয় থেকে আসা বৃষ্টির পানির স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এই সড়কের জন্য পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট পানি ও পলি নিষ্কাশনের সুযোগ না পেয়ে ওই অঞ্চলের হাওর ও নদীর নাব্য হ্রাস করছে। ফলে, উজানের পানি ও পলি কিছুই ভাটিতে নামতে পারছে না। অতিবৃষ্টি সহসাই বন্যায় রূপ নিচ্ছে ।


সাত.


জলবায়ু পরিবর্তনের যে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে আমরা ইতোমধ্যে তার মুখোমুখি হচ্ছি। সিলেট-সুনামগঞ্জ এলাকায় সম্প্রতি যে পানির উচ্চতা তা ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের চেয়েও বেশি। হাওরে অসময়ে বন্যা, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত- সবই জলবায়ু পরিবর্তনের একেকটি অভিঘাত মাত্র। এগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us