কাউকে পরোয়া করার সময় নেই। নিজেদের রাজ্যে ছাত্রলীগ একাই রাজা। আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেয় ছাত্রলীগ। পছন্দ না হলে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার কাজটাও সারেন সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছেলেদের ১১ আবাসিক হলের প্রশাসনিক 'ক্ষমতা' হল প্রাধ্যক্ষদের হাতে থাকলেও ছাত্রলীগই সেখানে ছায়া প্রশাসন। অধিকাংশ হল প্রাধ্যক্ষ 'পুতুল' ভূমিকায়। ছাত্রলীগের এসব ধারাবাহিক অপকর্ম নীরবে মেনে চলেছেন তাঁরা।
যেসব প্রাধ্যক্ষ ছাত্রলীগের ক্ষমতাকে অগ্রাহ্য করে কোনো ছাত্রকে সিটে তুলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে ছাত্রলীগ। হলগেটে তালা ঝোলানো, এমনকি প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করছেন নেতারা। ছাত্রলীগের এসব অপকর্ম বন্ধের দাবিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক। গত রোববার প্রতীকী অনশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক। একজন আমরণ অনশনেরও ঘোষণা দিয়েছেন, মানববন্ধন করেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তবু থামছে না হলের এসব ঘটনা।
সিট থেকে শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেওয়া কিংবা মারধরের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব ঘটনার মধ্যে মাত্র দুটির ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রশাসন। তবে উপাচার্য বলছেন, এসব বন্ধে হার্ডলাইনে যাচ্ছি। অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের অপকর্ম ঠেকাতে প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে রাজত্ব শুরু করে। এক সময় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের আধিপত্য থাকলেও ধীরে ধীরে তারা বনে যায় 'ডুমুরের ফুল'। সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় ক্যাম্পাসে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি হয়। এক বছরমেয়াদি ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি হন গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। এর পর থেকে এই কমিটি দিয়েই চলছে রাবি ছাত্রলীগ। মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটিতে পদ পাওয়ার পর অনেক নেতা বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক ও ছাত্র নির্যাতন, চাঁদাবাজি, হলের সিট বাণিজ্য, শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া, আম-লিচু বিক্রি, শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণের মতো নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। করোনার দীর্ঘ বিরতির পর হলগুলোতে ছাত্রলীগ এখন আরও রগচটা। আবাসিক ছাত্রদের বের করে দিয়ে নিজেদের পছন্দের ছেলেকে তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। সিট থেকে না নামলে শিক্ষার্থীকে মারধরও করা হচ্ছে।