বিশ্বের বড় বড় সেতুগুলো সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ দিলাম। জানা গেলো সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু চীনের ডানইয়াং-কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ, যা আজ থেকে একযুগ আগে নির্মিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১৬৪.৮ কিলোমিটার। আর আমাদের পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য মাত্র ৬.১৫ কিলোমিটার। দৈর্ঘ্যের দিক বিবেচনায় পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে বিশ্বের ১২২তম সেতু। তারপরও বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো এই সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছে। চীন, রাশিয়া, জাপান, ইতালি, সৌদি আরব, ভারতের মতো দেশগুলোর পর সবশেষে অভিনন্দন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান। এই দুটো দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, দেরি করলেও শেষ পর্যন্ত অভিনন্দন না জানিয়ে পারেনি। একটা সেতুর জন্য বিশ্বের কাছ থেকে এমন প্রশংসা অস্বাভাবিক মনে হওয়াই স্বাভাবিক। এটা সম্ভব হবার কারণ- এটি শুধু একটি সেতু নয়।
পদ্মা সেতু বিশ্বদরবারে দেশের সক্ষমতার সর্বশেষ এবং বিশেষ প্রতীক। আমাজন নদীর পর বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মার ওপর এ সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে তিনটি বিশ্বরেকর্ড হয়েছে।
খরস্রোতা পদ্মাকে বশে আনতে যে পাইল পোতা হয়েছে তা বিশ্বে গভীরতম। এজন্য জার্মানি থেকে তৈরি করে আনতে হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হ্যামার। মোট ২৯৪টি পাইলে ভর করে মাথা তুলেছে সেতুর ৪২টি পিলার, যার ওপর বসেছে ৪১টি স্প্যান।
নদীর তলদেশের গভীরে নরম কাদামাটির স্তর থাকায় ২২টি পিলারের নকশায় পরিবর্তন এনে বিশেষ প্রকৌশল জ্ঞান প্রয়োগ করতে হয়েছে। আট মাত্রার ভূমিকম্প, চার হাজার টন জাহাজের ধাক্কা সামলাতে পিলার আর স্প্যানের মাঝে বসানো হয়েছে ১০ হাজার টন সক্ষমতার বিয়ারিং,যা আরেকটি বিশ্বরেকর্ড।
তৃতীয় বিশ্বরেকর্ড হলো নদী শাসন সংক্রান্ত। দুই পাড়ের ১৪ কিলোমিটার এলাকা শাসন করতে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। নদী শাসনের ফলে শুধু সেতুটিই সুরক্ষিত হবে না, পাশাপাশি শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার এলাকার ১১ হাজার হেক্টর জমি এবং মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের দেড় কিলোমিটার এলাকার দুই হাজার হেক্টর জমি ভাঙনের কবল থেকে নিরাপদ থাকবে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।
নদীর প্রচণ্ড স্রোত, ভয়ংকর ভাঙন আর ধসকে বশে এনে যেভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে তা প্রকৌশল জগতে এক বিস্ময়। ভবিষ্যতে কোন দেশে এরকম জটিল পরিবেশে অবকাঠামো নির্মাণ করতে গেলে পদ্মা সেতুকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে হবে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।