জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে আমাকে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট থাকতে হয়েছে। এই সংশ্লিষ্টতা সংগত ছিল কি না তা আমার সাহচর্যে আসা শিক্ষার্থীরা বলতে পারবে। আমিও কিছুটা বলতে পারি। সত্যি কথা বলতে কী, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট হওয়া আমার উচিত হয়নি।
‘প্রিন্সিপল অব মোহামেডান ল’ মূলগ্রন্থ ‘নূরুল আনোয়ার’, সেখানে বলা হয়েছে, ‘আজজরুরাতো তুবেউল মা’য়াজুরাত’, যার সার সংক্ষেপ—জীবন বাঁচাতে মড়াও খাওয়া যায়। ভিন্ন অর্থে রবীন্দ্রনাথের ‘মায়ার খেলার’ অশোকের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি, ‘আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান। ’
মক্তব, প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ-মাদরাসা ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমি উচ্চশিক্ষার সনদ জোগাড়ের জন্য শিক্ষা শ্রম দিয়ে ‘পারানির কড়ি’ সংগ্রহ করেছি। মাদরাসায় পড়া শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পেতে পেতে আমার সরকারি চাকরি প্রাপ্তির সর্বোচ্চ বয়স (২৫ বছর) শেষ হয়ে যায়। তবে সরকারি কলেজে চাকরির জন্য বয়সের সুবিধা থাকায় পরীক্ষা দিয়ে সেই ‘আকাশের চাঁদ’ লাভ করি। এত সব ধারাবাহিকতা বর্ণনার উদ্দেশ্য হলো, পাঁচমিশালি প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করে শিক্ষা আর শিক্ষকের হালহকিকত সম্পর্কে অভিজ্ঞতা গ্রহণে বাধ্য হওয়া। তার কিছু বিষয়ের সঙ্গে বর্তমানের শিক্ষা আর শিক্ষককে মিলিয়ে দেখার সুবিধার্থে এই গৌরচন্দ্রিকা। গত শতকের মাঝামাাঝি সময়ে আমরা শিক্ষক দেখেছি। শিক্ষা ব্যবসায় তখনো রমরমা হয়ে ওঠেনি। অনেক শিক্ষক অভাবগ্রস্ত হয়েও নিজের দীনতা প্রকাশে লজ্জায় মুখ ঢাকতেন। অথচ তাঁদের নিষ্ঠার অভাব ছিল না। প্রত্যুষে কৃষিকাজে অংশ নেওয়ার পর স্কুল সময়ে উপস্থিত হতেন। তাঁদের জানার সবটুকু উজাড় করে দিতেন। এখন দিন বদলেছে। গৃহবধূরা প্রাথমিকের শিক্ষকতায় এসেছেন। তাঁদের শতকরা কতজন গৃহকর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষায় সনিষ্ঠ তা আমরা পরখ করি না। করতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবু বলব, এটা শিক্ষা কোটার অবদান কি না, তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে। মাধ্যমিকে এসবের ব্যতিক্রম তেমন ছিল না। এখনো তথৈবচ।