বন্ধুকে খুঁজে বের করতে হবে, মনের অজান্তেই হাত বা কার্সর চলে যায় স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া আইকনে। শপিং করতে বা শপিংয়ে যাওয়ার আগে বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য ই-কমার্স সাইটগুলোয় বা তেমন দক্ষ না হলে নিদেনপক্ষে গুগলে ঢুঁ মারাটা তো আজকের দিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ঘরের মধ্যেই আস্ত সিনেমা হল ঢুকে পড়ার গল্প তো এখন পুরোনো। সব মিলিয়ে গোটা বিশ্ব সত্যিই এখন হাতের মুঠোয়। কিন্তু কার হাতের? নিজের হাতের দিকে না তাকিয়ে বরং সত্যিকারের হাতটি খুঁজুন। ভেবে দেখুন আদতে কতগুলো আইকনে আপনার চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে না চাইতেই।
হ্যাঁ, ১৯৯০-এর দশকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ) যুগে বিশ্ব প্রবেশের পর এর শুধু বিস্তার দেখছে মানুষ। আজকের দিনে এই থ্রি-ডব্লিউ ছাড়া একটি দিন কাটানো আপাত-সুবিধাপ্রাপ্ত জনতার জন্য ভাবনার অতীত। কিন্তু এই যুগে প্রবেশের সময় যে আশা বা আদর্শের কথা প্রচার করা হয়েছিল, তা কি এখন বাস্তব? এক কথায় উত্তর দেওয়ার সুযোগ নেই।
একটু বুঝে নেওয়া যাক বিষয়টি। থ্রি-ডব্লিউ-এর নেতৃত্বাধীন আজকের ইন্টারনেট জমানার শুরুর সময় গণতন্ত্রবাদী, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা স্তরের মানুষ বেশ আশা দেখেছিল। অনেকে তো একে একেবারে বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। বলা হচ্ছিল, তথ্য কুক্ষিগত করার চল শেষ হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সঙ্গে ছিল নিরাপত্তার ধোঁয়াটে বিষয়াদিও। কিন্তু এর একটিও কি দেখা গেছে? নাকি সময়ের সঙ্গে এই সবকিছুকেই মানুষ গুটিকয় কিছু করপোরেশনের হাতে বন্দী হতে দেখছে?
বর্তমান দুনিয়ায় থ্রি-ডব্লিউ ও ইন্টারনেট আদতে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমার্থক হয়ে উঠেছে, যেখানে কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে তথ্যের দুনিয়াকে বন্দী অবস্থায় আমরা দেখি। আর এটি করা হয়েছে ধীরে ও কৌশলী ধারায়। ডিজিটাল রেভল্যুশন নামে ১৯৯০-এর মাঝামাঝি যে ইন্টারনেটের যাত্রা, তা আর বিপ্লব হয়ে ওঠেনি সাধারণের জন্য। অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কোনো কাঠামোগত পরিবর্তন এটি আনতে পারেনি। অথচ এর যাত্রাবিন্দুতে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখা বহু মানুষ একে তাদের সম্ভাব্য হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তারা ভেবেছিল, পুঁজির মালিক হিসেবে গুটিকয়ের যে শাসন, তাকে তারা এর মাধ্যমে ভেঙে দিতে পারবে।