হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা সহজে পাওয়া যায় না

www.bbarta24.net প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২২, ২৩:৩৬

দেশে বর্তমানে হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা মাত্র ২৬১০ জন। নিবন্ধিতদের বাইরে থাকা আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সচেনতার অভাব ও চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারণে অনেকেই জানেন না তাদের হিমোফিলিয়া হয়েছে। আবার জানলেও চিকিৎসার জন্য দৌড়াতে হচ্ছে ঢাকায়। কারণ এই রোগের চিকিৎসা মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। এর ফলে গ্রামের রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন না। রোগী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রোগ সম্পর্কে মানুষকে জানাতে সরকারিভাগে কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। ঢাকার বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।


আজ বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। যদিও সারাদেশের মানুষজন এই রোগ সম্পর্কে খুব একটা জানেন না।


হিমোফিলিয়া এক ধরনের রক্তক্ষরণজনিত জন্মগত রোগ যা সাধারণত পুরুষদের হয়ে থাকে এবং মহিলাদের মাধ্যমে বংশানুক্রমে বিস্তার লাভ করে। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হল রক্ত জমাট না বাঁধা। হিমোফিলিয়া রোগীদের রক্তক্ষরণ অতি দ্রুত হয় তা নয় বরং এদের রক্তক্ষরণ দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকে। হিমোফিলিয়া রোগীর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ আপনা আপনি বন্ধ হয় না। রক্তক্ষরণ শুরু হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা চলতেই থাকে। শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ফ্যাক্টর এইট-এর ঘাটতির জন্য হিমোফিলিয়া ’এ’ এবং ফ্যাক্টর নাইন-এর জন্য হিমোফিলিয়া ’বি’ হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্তদের অনেক যন্ত্রণা হয়ে থাকে, চিকিৎসা নিতে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।


বাংলাদেশে কতজন হিমোফিলিয়া রোগী রয়েছে এই সম্পর্কে সরকারি কোনো তথ্য নেই। তবে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়া-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০,৬৪০ জন হিমোফিলিয়া রোগী আছে। এ পর্যন্ত হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ প্রায় ২৬১০ জন রোগী চিহ্নিত করে নিবন্ধনের আওতায় এনেছে। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে।


দেশের হিমোফিলিয়া রোগীদের কল্যাণার্থে রোগীর আত্মীয়-স্বজন, শুভান্যুধায়ী এবং ডাক্তারদের প্রয়াসে ২৮ মার্চ ১৯৯৪ সালে গঠিত হয়েছে 'হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ'। এই সমিতির তত্ত্বাবধানে থাকা মো. হাসনাতুল আলমের সাথে কথা হয়। তিনি বিবার্তাকে বলেন, ‘হিমোফিলিয়া রোগীদের চিহ্নিত করা ও নিবন্ধন করে তাদের চিকিৎসা করাই আমাদের মূল কাজ। হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোর হাসপাতালে হিমোফিলিয়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।’


হাসনাতুল আলম নিজেও একজন হিমোফিলিয়া রোগী। এখন হিমোফিলিয়া সোসাইটির সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছেন। তিনি জানান, সমিতিতে একজন রোগীর সদস্য ফি ১২০০ টাকা। তারপর প্রতি বছর ১০০০ টাকা ফি দিয়ে সারা বছর চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন।


মো. হাসনাতুল আলম বলেন, ‘হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে এই বিরল রোগে আক্রান্ত রোগীর বেশিরভাগকেই যথাযথ চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা যাবে। এ ব্যাপারে রোগী ও তার অভিভাবক এবং সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহন, সচেতনতা, সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আমরা আশা করি, সেদিন আর দূরে নয় যখন হিমোফিলিয়া রোগের নামে আমাদের অতঙ্ক জন্মাবে না। বরং সাহসিকতার সঙ্গে আমরা এর মোকাবেলা করতে পারব।’


জন্মের পর থেকেই হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত মো. গোলাপ হোসেনের সঙ্গে বিবার্তার কথা হয়। তিনি জানান, তার পরিবারের কয়েকজন এই রোগে আক্রান্ত। কিন্তু তারা শুরুতে কেউ বিষয়টি জানতেনই না। শরীরে আঘাতের কারণে ব্যথা ও আঘাতের স্থানে রক্তজমাট বেঁধে ফুলে যাওয়ার পর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করালেও কোনো সুরাহা হচ্ছিল না। তীব্র যন্ত্রণায় একের পর একের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও জানতে পারেননি হিমোফিলিয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর পর তিনি জানতে পারেন, এই রোগের কথা। পরবর্তী সময়ে পরিবারের আরও সদস্যদের একই রোগ দেখা যায়।


মো: গোলাপ হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ‘আমি প্রায় ১৮ বছর যাবৎ এই রোগে আক্রান্ত। আমার তিন ভাগিনা আবু বকর সিদ্দিক (১৬), মো: রাহাত হোসেন (১৩) ও মো: হুজাইফাসহ (৩) আমার দুই মামা সবাই আক্রান্ত। এই রোগ খুবই ভোগান্তির, সহজে চিকিৎসা পাওয়া যায় না। খুবই সাবধানে চলাচল করতে হয়, কাউকে বোঝানো সম্ভব না এই রোগ কত কষ্টের।’


তিনি আরও বলেন, ‘আগে জানতাম না এই রোগ সর্ম্পকে ও এর চিকিৎসা কি? এখন হিমোফিলিয়া সোসাইটির অব বাংলাদেশ এর সদস্য হয়েছি, নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহন করছি আমি ও আমার তিন ভাগিনা। হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা আমাদের জেলা হাসপাতালে থাকলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us