মামলার গোনাগুনি

দেশ রূপান্তর মঈদুল ইসলাম প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৫:২০

চট করে বানিয়ে বলার বুদ্ধি আমার ছিল না কোনোকালে। কুড়িগ্রাম থেকে বদলি হয়ে সবে এসেছি নীলফামারীতে। উপজেলা আদালতগুলো তখন উঠে এসেছে জেলা সদরে। আমার ছিল সৈয়দপুর সহকারী জজ আদালত। জেলা জজের খাস কামরায় ডাক পেয়ে বসে আছি আমরা সব সিনিয়র সহকারী জজ আর সবেধন সাবজজ ভাই। সেটা ১৯৯৪ সালের কথা। অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতই ছিল না তখন সেখানে, সাবজজ একজনই। আলোচনা হচ্ছিল কী যেন এক প্রসঙ্গে! আচমকাই জেলা জজ জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার আদালতে কয়টা মামলা আছে?’ গত মাসের মাসিক স্টেটমেন্টটা দেওয়া হয়ে গেছে, এ-মাসেরটার দিন কয়েক এখনো বাকি আছে। মামলার সংখ্যা মনে ছিল না আমার। সরলভাবেই বললাম, ‘স্যার, সংখ্যাটা ঠিক মনে আসছে না এখন, স্টেটমেন্টে আছে।’ বকুনি খেয়ে বসে রইলাম বিরসবদনে। আমার আগে একই প্রশ্ন করেছিলেন একই সঙ্গে বদলি হয়ে আসা আমার আগের ব্যাচের সিনিয়র সহকারী জজ সদরকে। ঝটপট জবাবে তিনি চটপট বলে গেলেন, ওসি স্যুট (আদার ক্লাস, অনেকখানে ‘অন্য প্রকার’ বলে, আদতে সেটা খাঁটি দেওয়ানি), পারিবারিক, মিস কেস, রেন্ট কন্ট্রোল, জারি কেসের সংখ্যা একে একে। ‘খাঁচা’ থেকে বের হয়ে আসার পথে জিজ্ঞেস করি, ভাই, মামলার সংখ্যা এত সব মনে রাখেন কী করে! বললেন, ‘দূর! মনে রাখা যায় নাকি! বানিয়ে বলে দিয়েছি আন্দাজে। হুজুরেরও কি মনে থাকবে কোনটা কত বলেছি!’ আন্দাজেই দেওয়া চলছিল মামলার স্টেটমেন্ট কুড়িগ্রামের চিলমারী সহকারী জজ আদালতে।


ধরা পড়ল গুনতে গিয়ে। সেটাই ছিল আমার প্রথম কর্মস্থল। গেছি ১৯৮৯-এর জুলাইয়ের শেষ দিকে। মাসের শুরুতে কোন মামলা কত ছিল, সারা মাসে নতুন কয়টা ঢুকল, দোতরফা-একতরফা নিষ্পত্তি কোনটা কত গেল, সাক্ষী কতটা হলো, মাস শেষে কোনটার কয়টা পড়ে থাকল, তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর, তিন বছর, দশ বছরের পুরাতন কয়টা কী আছে সবের ফিরিস্তি করে মাসে মাসে স্টেটমেন্ট দিতে হয় নির্ধারিত ছকে। মামলার আরও সব বিবরণ দিতে হয় ত্রৈমাসিক, ষাণ¥াসিক, বার্ষিক স্টেটমেন্টে। জেলা জজ নিজের মন্তব্য দিয়ে সেগুলো পাঠান হাইকোর্টে। নিষ্পত্তির পর্যাপ্ততা তখন মাপা হতো ত্রৈমাসিকে। পর্যাপ্ত নাকি অপর্যাপ্ত হলো মেপে জেলা জজ পাঠাতেন হাইকোর্টে, জানাতেন নিষ্পত্তিকারী জজকে। অপর্যাপ্ত হলে বিপত্তি নিষ্পত্তিকারীর, কৈফিয়ত তলব হাইকোর্ট থেকে। কতটা মামলা নিষ্পত্তি করলে একজন জজের ঠিকমতো গতর খাটানো বোঝাবে সেটাকেই বলে পর্যাপ্ততা, নীতি-মান বাঁধা হয় হাইকোর্ট থেকে। অপর্যাপ্ত হলে ‘বাঁশ’ যাবে এসিআরে, আটকাবে পদোন্নতিতে। সেকালে সহকারী জজদের নিষ্পত্তির পর্যাপ্ততা বাঁধা ছিল ৮টা না পারলে অবশ্যই ৬টা খাঁটি দেওয়ানির দোতরফা নিষ্পত্তিতে। সঙ্গে আর সব কাজের ফিরিস্তিও গোনার নীতি ছিল কাগজে (সিআরও ৮১৫ বিধি এবং ২৮ নভেম্বর ১৯৮৮-র হাইকোর্ট সার্কুলার-১)। গণৎকারদের নীতি তার চেয়েও বড়, গুনতিতে ধরত শুধু ওই ৬টা খাঁটি দেওয়ানির দোতরফা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us