দূষণ, দুর্ঘটনা এবং নির্বিকারত্ব

সমকাল ড. নাদির জুনাইদ প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৯:২৭

ক'দিন আগে সংবাদপত্রে দেখতে হয়েছে ৯ বছরের হুমায়রার ক্রন্দনসিক্ত মুখ। তাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার মা সাবিনা ইয়াসমিন সেদিন বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। হুমায়রার ৫ বছর বয়সী ছোট বোনও সঙ্গে ছিল। মিরপুর-১৪ নম্বরে তাদের অটোরিকশাকে একটি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। তিনজনই অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়েন রাস্তায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান তাদের মা। এর ঠিক এক দিন আগেই ওয়ারীতে আরেকজন মা মোসাম্মৎ রাফিকা মেয়ে রুহিকে রিকশায় করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় মারা গিয়েছিলেন। এই শিশুরা স্কুলে যাবে। কিন্তু আর কোনোদিন সেই মা তাদের স্কুলে নিয়ে যাবেন না। অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এসব মৃত্যুর পরই রাজধানীতে আবার প্রাণহানি ঘটল সড়ক দুর্ঘটনায়। খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের ঢালে আহত হয়ে প্রাণ হারাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাইশা মমতাজ। জানা যায়, স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি কাভার্ডভ্যানের নিচে পড়ে যায় মাইশা। কিছুদিন আগেই শাহজাহানপুরে ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে অবলীলায় গুলি করে আওয়ামী লীগ নেতা টিপুকে হত্যা করে এক আততায়ী। তার ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে সে সময় রাস্তায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফনানও প্রাণ হারান। অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে রাজধানীর পথে ঘটে গেল এমন হৃদয়বিদারক কয়েকটি মৃত্যু।


শুধু রাজধানী নয়; প্রতি সপ্তাহেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কখনও বাস, কখনও ট্রাক, কখনও ট্রাক্টর, কখনও অটোরিকশাচাপায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপের চাপায় ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রাণ হারিয়েছিলেন পাঁচ ভাই। আহত আরেক ভাই কিছুদিন পর হাসপাতালে মারা যান। জানা যায়, যেসব যান দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেগুলোর কোনোটার নিবন্ধন নেই; কোনো কোনো চালকের লাইসেন্স নেই। এমনকি নেই যথাযথ প্রশিক্ষণও। সড়ক দুর্ঘটনায় মাইশার মৃত্যুর পর যে কাভার্ডভ্যান চালককে আটক করা হয়েছে, তার হালকা যান চালানোর লাইসেন্স থাকলেও সে চালাচ্ছিল ভারী গাড়ি। প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা সড়ক দুর্ঘটনা স্পষ্ট করে- অনেক যানচালকই অভিজ্ঞ নয়; নেই প্রশিক্ষণ এবং সতর্কতার সঙ্গে যান চালানো জরুরি, এই বোধও তাদের নেই। কিন্তু বারবার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটার পরও যথাযথ লাইসেন্স আর প্রশিক্ষণ ছাড়া যানবাহন চালানোর পরিস্থিতি দেশে টিকে থাকছে কী করে? প্রশিক্ষণবিহীন এবং সাবধানতার সঙ্গে যান চালানোর মানসিকতা নেই এমন চালকরা অবলীলায় ভারী যান নিয়ে পথে নেমে পড়বে, এর ফলে ভয়াবহ ঝুঁকির সম্মুখীন হবে বহু মানুষ; এমন অবস্থা তো মেনে নেওয়া যায় না।


সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পর চালককে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু নিয়ম না মেনে যান চালানো বন্ধের জন্য কঠোর, কার্যকর সরকারি ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হওয়া চালকের মতো আরও অনেক বোধহীন, লাইসেন্সবিহীন চালকের যানবাহন নিয়ে পথে নামা তো বন্ধ হয় না। সতর্কভাবে যান চালাতে হবে- চালকদের মধ্যে এই বোধ তৈরি করার পর, যান চালানোর নিয়মকানুন শিখিয়ে এবং যথাযথ বিশ্রাম দিয়ে তাদের যান চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হলে হয়তো তারা বেপরোয়াভাবে যান চালাত না। কিন্তু কাদের সুবিধার জন্য প্রশিক্ষণবিহীন চালকদের রাজপথে যান চালানোর সুযোগ টিকে থাকে? সড়ক দুর্ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকার পরও বিপজ্জনকভাবে যান চালানো বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কেন আমাদের দেখতে হয় নির্বিকারত্ব? প্রভাবশালী মানুষরা পথে নির্বিঘ্নেই চলাফেরা করেন। প্রায়ই রাজপথে দেখা যায় কালো কাচে ঢাকা কোনো গাড়ির সামনে থাকে পুলিশ সদস্য বহনকারী গাড়ি। সেখান থেকে হাত নাড়িয়ে অন্য যানবাহনকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়ে পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিয়ে সেই গাড়ি নিয়ে যায় গন্তব্যের দিকে। সেই গাড়িতে কারা আছেন এবং এমন সরকারি সুবিধা তাদের প্রাপ্য কিনা, অনেক সময় তাও বোঝা যায় না। সাধারণ মানুষ নিয়মিত ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করে ঠিকই। কিন্তু শহরের পথে ক্ষমতাশালীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারলেও এমন নাগরিক সুবিধা কি সাধারণ মানুষের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us