বাজার শোষকদের কবলে ভোক্তা

সমকাল ড. মাহবুব হাসান প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৫০

নিত্যপণ্যসহ শাকসবজির দাম ক্রমাগত বাড়ছেই। মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দামও ঊর্ধ্বমুখী। কাঁচাবাজারের নিত্যপণ্য বাংলাদেশেই উৎপাদিত হয়; কিছু প্রাকৃতিকভাবে, কিছু আবাদ করে। গ্রামে শাকসবজি কেনা যায় এর চেয়ে অনেক কম দামে। রংপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, সিরাজদীখান, নরসিংদী, পাংশা, কুষ্টিয়া, জামালপুর বা ঢাকার চারপাশ থেকে আসা শাকসবজির দাম ঢাকার বাজারের সঙ্গে অনেক তফাত।


অনেকেই বলেন, সড়কে শ্রমিক, পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। বাজার তদারকির দায়দায়িত্ব যাদের, তাদের কাছে কি খুচরা দোকানিরা কম দামে পণ্য বিক্রি করেন? নাকি তারা বাজারেই যান না? বাজারে গেলে দাম নিয়ন্ত্রণের দণ্ডটি নিয়ে যান, নাকি হাত পেতে অনেকেই অবৈধভাবে টাকা তোলার জন্য যান? খুচরা বিক্রেতারা যদি পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনেন, তাহলে তো ভোক্তাকে বেশি দামে কিনতেই হবে- এ কথা অনেকেই বলেন। কথা হচ্ছে, পাইকারি বাজারে কেন নিয়ন্ত্রণ নেই? উৎপাদন পর্যায়ে দাম বাড়ানো হলে তাদের কাছে থেকে জবাব আসে- আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। এই যে চক্র তৈরি করে, অজুহাত দাঁড় করিয়ে দাম বাড়ানোর রীতি চলছে, এর কি লাগাম টানা যায় না?


ভোজ্যতেলের কথায় আসা যাক। যারা অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি করে বোতলে ভরেন, তারাই মূলত দাম বাড়িয়ে থাকেন। মিল থেকে পাইকারি বাজার, তারপর খুচরা বাজারে যায় সেই তেল। উৎস থেকে যে পরিমাণ দাম বাড়ানো হয়, পাইকারি বাজারে সেটা আরও বেড়ে যায় লাভের সূত্রানুযায়ী। এই প্রক্রিয়াকে আমরা নাম দিতে পারি লাভের লোভ। জগতের অনেক মানুষই লোভী। ক্ষমতার লোভ সবচেয়ে বড় লোভ। এই লোভের ভেতর থেকেই বাজারি লোভের জন্ম। শিল্পকারখানা থেকে কাঁচাবাজার- প্রতিটি স্তরে লোভের বাণিজ্য চলছে। বাজারের উচ্চ স্তর থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবাই একই চক্রের মানুষ। এদের বাইরে কেবল ভোক্তাশ্রেণি। আর এই ভোক্তাশ্রেণি নাজেহাল হচ্ছে। এরা অসংগঠিত জনশক্তি। এরাই বাজার শোষকদের হাতে বন্দি। এই বন্দিদশা এমন এক রশিতে বাঁধা, তার রূপ আমরা দেখি না, দেখতে দেওয়া হয় না। সেই অদৃশ্যপ্রায় দড়ির মাথাটা ক্ষমতার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। সরকার ভোজ্যতেলের ওপর থেকে ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে। তাতে তেলের দাম কমবে। কিন্তু কত কমবে? উত্তরটা সন্তোষজনক নয়। তবে দাম বাড়লেও আমাদের তা সহ্য হয়ে যায়।


এই খেলা খুবই সরল, কিন্তু জটিল তার ধ্যান-ধারণা। সমাজের প্রতিটি স্তরই লাভের নকশায় সাজানো। শত শত বছর ধরে এই চর্চাই আমাদের সহ্য করতে শিখিয়েছে। মানুষের রাজনৈতিক লোভ আর সামাজিক লোভের সঙ্গে জীবনযাপনের লোভের কোনো পার্থক্য নেই। কেবল আমরা সেই পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে ভাবি না। সমাজের এই সংকট মোচন কি সম্ভব? সম্ভব বললেও বিতর্ক উঠবেই। এটাই আমাদের অনেকের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বভাব। আর ওই স্বভাবের নির্মাতা ওই মানুষই, যারা ক্ষমতা ও লোভের বাণিজ্যকে এই চক্রের মাধ্যমে প্রবাহিত করছেন। এই চক্রগুলো পৃথক করলে গোটা সমাজব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। কারণ সেই ভাঙন প্রতিস্থাপনে যে সমাজ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, সেটা আমরা নির্মাণ করিনি। পুঁজিবাদী ধ্যান-ধারণাই আমাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়। কিন্তু এর ত্রুটি আমরা সারাতে পারি না। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যর্থতা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us