মুসলিম জাতীয়তাবাদ: পুনর্নিরীক্ষা

আজকের পত্রিকা আব্দুল হক প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:০৩

জিন্নাহ সাহেব পাকিস্তান আন্দোলনকালে যে দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন, তার সারমর্ম হচ্ছে: অবিভক্ত ভারতের মুসলমানরা এরূপ বিশিষ্ট সংস্কৃতি ও সভ্যতা, ভাষা ও সাহিত্য, শিল্প স্থাপত্য, নাম ও নামকরণ রীতি, মূল্যবোধ ও পরিমিতিবোধ, আইনকানুন ও নৈতিক বিধানাবলি, সামাজিক প্রথা ও পঞ্জিকা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মনোভঙ্গি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার অধিকারী তা হিন্দুদের থেকে স্বতন্ত্র, অতএব তারা যেকোনো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র জাতি।প্রথমেই বলা দরকার, এ বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য দ্বিজাতিতত্ত্ব খণ্ডন করা নয়। কেননা, প্রথম কথা, ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে গঠিত হওয়ার পর সে প্রশ্ন অবান্তর; দ্বিজাতিতত্ত্ব ঠিক হোক আর না হোক, নানা ঐতিহাসিক কারণে অখণ্ডিত ভারতে এক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব ছিল না; এবং দ্বিতীয় কথা, এ তত্ত্বের উদগাতা স্বয়ং জিন্নাহ সাহেব অকল্যাণকর বিবেচনায় তা বর্জন করে গেছেন।


এ বিশ্লেষণ একমাত্র পাকিস্তানের পরিপ্রেক্ষিতে; এবং এর লক্ষ্য এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান যে, যে-মুসলিম জাতীয়তাবাদের কথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও এত করে বলা হয়, এ তত্ত্বের উদগাতা একে বর্জন করা সত্ত্বেও, সে-জাতীয়তাবাদের বাস্তব যৌক্তিকতা কতখানি। দ্বিজাতি তত্ত্ব অনুযায়ী যদি অখণ্ড ভারতের মুসলমানরা এক জাতি হয়ে থাকে, তবে পাকিস্তানের মুসলমানরাও নিশ্চয়ই এক জাতি। এ দাবির মূলে কতখানি সত্য নিহিত আছে, তাই আমাদের বিবেচ্য।


প্রথমত, ভাষা ও সাহিত্যের কথাই ধরা যাক। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানদের ভাষা কি এক? কেউ বলবেন না যে এক, কিন্তু তথাপি জিন্নাহ সাহেব কেন সে কথা বলেছিলেন, তা এখন সঠিকভাবে নিরূপণ করা দুঃসাধ্য। এর কারণ সম্ভবত এই যে, তার ধারণা ছিল বাংলা ভাষা হিন্দুদের ভাষা, মুসলমানদের নয়। তিনি বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথের কথা শুনে থাকবেন, কিন্তু সম্ভবত নজরুল ইসলামের কথা শোনেননি। … বাঙালি মুসলমানদের সম্পর্কে জিন্নাহ সাহেবের ধারণা গড়ে উঠেছিল প্রধানত বাংলার সেইসব নেতার সংস্পর্শে, যারা বাংলার অধিবাসী হয়েও বাঙালি ছিলেন না। যারা বাঙালি ছিলেন, তারাও নিশ্চয়ই তার সঙ্গে কথা বলতেন হয় উর্দুতে, নয় ইংরেজিতে।zতএব, পূর্ব পাকিস্তানি মুসলমানদের ভাষা যে বাংলা এবং তারা বাঙালি—এ ধারণা হয়তো তার মনে স্পষ্ট ছিল না।...কিন্তু জিন্নাহ সাহেব যাই বলে থাকুন, বাঙালি মুসলমানরা বাঙালি এবং তাদের ভাষা বাংলা কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিদের ভাষা তা নয়।


দুই প্রদেশের অধিবাসীদের ভাষা যেমন এক নয়, তেমনি তাদের সাহিত্য এবং সাহিত্যের ঐতিহ্যবোধও এক নয়। পশ্চিম পাকিস্তানের শাহ আব্দুল লতিফ ভিট, ওয়ারিশ শাহ, খোশহাল খান খটককে আমরা কতটুকু জানি? এমনকি ইকবালের রচনাবলি মূল ফার্সি ও উর্দু ভাষায় পূর্ব পাকিস্তানের কজন আমরা পড়ব?...তেমনি দৌলত কাজী, আলাওল থেকে শুরু করে আজ অবধি যে মুসলিম সাহিত্য, অথবা পূর্ববঙ্গ গীতিকা, পুঁথি সাহিত্য, বাউল, জারি, সারি, ভাটিয়ালি গানে পুষ্ট সমৃদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের যে গণ-সাহিত্য ধারা, যা একান্তভাবে প্রদেশের সত্ত্বায় ও চেতনায় মিশে আছে, মূলে বা অনুবাদে তার কতটুকু আস্বাদ নিতে পারবেন পশ্চিম-পাকিস্তানি পাঠক? এই সাহিত্য একান্তভাবে পূর্ব পাকিস্তানের। অতএব এক জাতিত্বের দুটি প্রধান লক্ষণ—ভাষা ও সাহিত্যের একাত্মবোধ—এই দুই প্রদেশের অধিবাসীদের নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us