শাবিপ্রবির ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আজকের লেখাটা যখন শেষ করে ফেলেছি তখনই একটু আগে জানতে পারলাম জাতীয় সংসদে একটা নতুন আইন পাস হয়েছে। আইনটা নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত। ক’দিন ধরেই বিষয়টা নিয়ে এক ধরনের ঢাক ঢাক গুড় গুড় চলছিল। মাননীয় আইনমন্ত্রী ক’দিন আগে বলেছিলেন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ আর হাতে গোনা কয়েকদিন।
এর মধ্যে আইন প্রণয়ন করে সংসদে তা পাস করিয়ে সে অনুযায়ী নতুন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। তার একদিন পরেই দেখা গেল মন্ত্রিসভা আইনমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত এতদসংক্রান্ত একটি খসড়া আইন অনুমোদন করে জাতীয় সংসদে তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মানে মাননীয় আইনমন্ত্রী মুখে যাই বলুন না কেন, ভেতরে ভেতরে ঠিকই তাঁর প্ল্যান মোতাবেক এগোচ্ছিলেন। সে যাই হোক, সব রকমের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আইনটি খুবই দ্রুততার সঙ্গে পাস হয়ে গেছে এটাই বাস্তবতা।
তবে এখানে বেশ কিছু প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। প্রথমত, মাননীয় আইনমন্ত্রী কি আসলে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য রেডি করে রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে বলেছিলেন এখন এত অল্প সময়ের মধ্যে এই আইন পাস করা সম্ভব নয়। এতে করে জাতির সঙ্গে কি একটু লুকোচুরি খেলা হয়ে গেল না, যার নিশ্চয়ই কোনো প্রয়োজন ছিল না। দ্বিতীয়ত, এখন না হয় হাতে সময় নেই, কিন্তু গত ৫০ বছর কি কোনো সরকারের নজরেই পড়েনি সংবিধানের ১১৮ ধারা। ওখানে তো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন ঠিকই, তবে তা এই সংক্রান্ত প্রণীত একটি আইনের আওতায়। আশ্চর্য! গত ৫০ বছর ধরে এতগুলো কমিশন গঠিত হলো, তারা কাজও করে গেল, কিন্তু তাদের সবার গঠন প্রক্রিয়াটিই ছিল সংবিধানবহির্ভূত প্রক্রিয়ায়। আরো আশ্চর্যের বিষয়, এ নিয়ে কেউ কোনো উচ্চবাচ্যও করেনি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংসদে পাস হওয়া আইনটি সম্বন্ধে এ দেশের জনগণ, যারা নাকি দেশের মালিক, কিছুই জানল না। এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলো না, কোনো মতামত আহ্বান করা হলো না, এমনকি যে সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতি বলা যেতে পারে নামকাওয়াস্তে সেই সংসদেও ‘ট্রেন-ছেড়ে-দিচ্ছে’ ধরনের ডিবেটের ভেতর দিয়ে যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হলো। এটা সেই পুরনো প্রবাদ বাক্যটাকেই স্মরণ করিয়ে দেয় : ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে/আয় দেখি কাপড় নিয়ে। ’ আর যতটুকু বাইরে থেকে জানা গেছে তাতে মনে হচ্ছে ঠিক কমিশন গঠন নয়, তথাকথিত সার্চ কমিটি কীভাবে গঠিত হবে, তাদের কাজ কী হবে, এটাই আইনে স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে যে কাজটি আইন না করে আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি করতেন সেটাই আইনের মোড়ক লাগিয়ে হালাল করা হবে। আর সার্চ কমিটি যথারীতি গঠন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তিনি কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ বা পরামর্শ মতোই তা করবেন। এরূপ বিধানই রয়েছে আমাদের সংবিধানে। তাহলে কেউ যদি বলে সার্চ কমিটি প্রকৃত প্রস্তাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পছন্দমতো লোকদের নিয়েই হবে, তাহলে কি খুব একটা ভুল হবে। যাকগে। দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। তবে একটা বড় রকমের ক্যাচাল যে লাগতে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে, তা বোধ হয় কানাও দেখতে পাচ্ছে। আমার মতো সাধারণ পাবলিকের একান্ত কামনা : মাবুদ, সব কিছুর ওপরে আমার দেশ ও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা, তা যেন ঠিক থাকে।