মাদক ব্যবসায় কোটিপতি

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

ভারত সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর। এই উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সীমান্ত পথে প্রায় ১০ বছর ধরে মাদকের কারবার করছেন চাঁনপুর গ্রামের আব্দুল হক। এক সময় দিনমজুর ছিলেন তিনি। তার বাবা আবু জাহেরও দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। দিনমজুর আব্দুল হকের উত্থানের কাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। মাদক ব্যবসা করে দিনমজুর থেকে এখন কোটিপতি আব্দুল হক। গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন আলিশান অট্টালিকা। শুধু আব্দুল হক নয়, এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক লোক মাদকের কারবারে জড়িয়ে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদক চোরচালান ও এর পাইকারি ব্যবসার বদৌলতে আমুল বদলে গেছে অনেকের জীবনধারা। কারও কারও সাফল্য চোখে পড়ার মতো। কয়েক বছরের ব্যবধানে মাটির ঘর থেকে আলিশান বাড়ি ও গাড়ির মালিক বনে গেছেন কেউ কেউ। তাদের মধ্যে অনেকে আবার বিশেষ দলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া এলাকায় সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, ত্রিপুরা সীমান্তের ২০০৫ নম্বর পিলার ঘেঁষেই বামুটিয়ার ছড়ার পাড়ে মনি বেগম ও বাচ্চু দম্পতির বাড়ি। এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফ’র টহল জোরদার না হওয়ার সুবাদে প্রতিদিনই দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে মাদক। এই সুযোগে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন মনি বেগম। গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। পাশেই তার ভাই আলমগীর এবং ভগ্নিপতি শাহ আলমের বাড়ি। অনুসন্ধানে জানা যায়, সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের চাউরা দৌলতবাড়ি গ্রামের ফায়েজ মিয়ার ছেলে এমরান ও জসিম প্রায় এক যুগ ধরে মাদক ব্যবসা করছেন। তাদের বাবা এক সময় কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। এমরান চট্টগ্রামে হোটেলে কাজ করতেন। মাদক কারবারে নামার পর থেকে এই দুই সহোদরের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গ্রামের বাড়িতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ভাই দুটি পৃথক আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। একই ইউনিয়নের নলগড়িয়া গ্রামে আতিক গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন ৩ তলা বাড়ি। কুমিল্লার বাসিন্দা আতিক তার নানা বাড়ি তথা শ্বশুর বাড়িতেই ঘাঁটি গেড়েছেন মাদক সাম্রাজ্যের। একই গ্রামে নারী ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত নাজমা বেগম বাবার বাড়িতে নির্মাণ করেছেন দ্বিতল ভবন। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নেতার ছত্রছায়ায় তিনি মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। মাদক ব্যবসার টাকায় ওই নেতার নামে কিনেছেন গাড়ি। এছাড়াও মাদকের ব্যবসা করে নলগড়িয়া গ্রামে আলিশান বাড়ি করেছেন কাজী ওসমান ও কবিতা দম্পতি, ঝন্টু মিয়া, মনির হোসেন, খালেক ও ফর ইসলাম। নলগড়িয়া লাগোয়া পশ্চিম পাশের গ্রাম কাশিনগরের জাহাঙ্গীর আলম ও আলমগীর হোসেন মাদক ব্যবসার বদৌলতে আলিশান বাড়ি, জমি, একাধিক সিএনজি অটোরিকশা, নৌকা ও স্পিডবোটের মালিক হয়েছেন। একই ইউনিয়নের নোয়াবাদী গ্রামের মিষ্টি বেগম এক সময় খুচরা মাদক স্পট চালাতেন। কয়েক বছর পরেই খুচরা থেকে পাইকারি মাদক ব্যবসায় নেমে পড়েন মিষ্টি বেগম। মাদক ব্যবসার টাকায় বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি। এছাড়াও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মিরাসানি গ্রামের দুলাল খান, তার ছেলে বোরহান খান, মিলন খান, জাহার ভূঁইয়া, শরুফা বেগম, হাবির, জাহাঙ্গীর, জনি খাঁ, আল আমিন, ইকবাল চৌধুরী, এমরান চৌধুরী, শামীম খাঁ, আলম খাঁ, রনি, আসলাম খাঁ, জাহানারা বেগম ও এমরান হোসেন মাদকের কারবার করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। একই ইউনিয়নের উথারিয়াপাড়ার শাহপরান এই কারবার করে একাধিক বাড়ি ও স্থানীয় বাজারে ভিটের মালিক হয়েছেন। গ্রামের বাদল ডাক্তার মাদকের ব্যবসা করে দোতলা আলিশান বাড়ি ও স্থানীয় বাজারে করেছেন দোকান। চান্দুরা ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান প্রকাশ বজলু ও তার ছেলে আক্তার হোসেন মাদক ব্যবসার টাকায় বাড়ি, জমি ও স্থানীয় আমতলি বাজারে দোকানঘর কিনেছেন। বানিয়েছেন দ্বিতল ভবন। একই ইউনিয়নের আলা-দাউদপুর গ্রামের আব্দুর রহিম ও তার ছেলে শাহ আলম, নুরু মিয়ার ছেলে জসীম গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। কালিসীমা গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল ও সোহেলের বাবা মোখলেছ মিয়া ৬-৭ বছর আগেও রিকশা চালাতেন। এখন মাদকের কারবার করে তার দুই ছেলে কোটিপতি। একই গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে জহির এবং তাদের চাচাতো ভাই সাদ্দাম, রাজীব ও সজিব মাদকের কারবার করে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। পাশের গ্রাম ইব্রাহিমপুরের শাহানা ও তার মেয়ে হালিমা এবং তাদের প্রতিবেশী মমতা মাদকের ব্যবসা করে কিনেছেন জমি ও সিএনজি অটোরিকশা। গড়ে তুলেছেন বাড়ি। এদিকে, মাদকের ব্যবসা করে কোটিপতি হওয়াসহ একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বক্তারমুড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন গিরু। একই ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের হাফিজুল, এনামুল, বিষ্ণুপুর গ্রামের আনাস মিয়া, কাজল মিয়া, রবিন ভূঁইয়া, আশিক, সাদ্দাম ভূঁইয়া, কালাছড়া গ্রামের ফিরোজ মিয়া, হরমুজ আলী, ইয়াছিন, হারুন মিয়া, দুলাল মিয়া, রাসেল, রাব্বি এবং মান্টুর রয়েছে একাধিক বাড়ি-গাড়ি। পত্তন ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের খুনের মামলায় ১৬ বছর ধরে কারাভোগ করা ইকবাল জেল থেকে ফিরে এসে রমরমা মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মালিক হয়েছেন আলিশান প্রাসাদের। রয়েছে কয়েকটি গাড়ি ও দোকান। একই গ্রামের ডালিম ভূঁইয়া ও মহিবুল্লাহ প্রকাশ মবুল্লা কোটিপতি হয়েছেন। ইকবালের সহযোগী লিলু মিয়া, জাকির, শামীম, আমিন ভূঁইয়া, কালা মানিক, নাহিদ এবং কেশবপুর গ্রামের আলেয়া ও তার ছেলে বাবু হয়েছেন কোটিপতি ও গাড়িবাড়ির মালিক। মনিপুর গ্রামের কাদ্দা চোরার ছেলে হানিফ একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। এছাড়াও হারুন, তিতাস এবং মনিরেরও রয়েছে বাড়ি-গাড়ি, নৌকা। এসব বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ’বর্ডার বেল্টের লোকজন সঠিক তথ্য আমাদেরকে দেয় না। তাছাড়া মাদক কারবারিরা রাতের বেলা নিজ বাড়িতে থাকে না। এসব কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো দুরুহ হয়ে পড়ে। তবে আমরা কিছুদিন আগে নলগড়িয়ার আতিককে মাদকসহ আটক করেছি। বিষ্ণুপুর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন জামাল ও তার ছেলে হৃদয়, ইকরতলীর বিল্লাল, আরমান, কদমতলী বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী শামীম, কামালমোড়ার শাহ আলমসহ অনেকের বিরুদ্ধেই মাদকের মামলা দিয়েছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের কাজ অব্যাহত আছে।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলছে। পুলিশ এই নিয়ে কাজ করছে। যদি মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশ সদস্যের সখ্যতা কিংবা টাকা-পয়সা নেয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকে তাহলে সেই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us