তাসলিমার জবানিতে আমিনুলকে হত্যার বর্ণনা

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

কিশোরগঞ্জে ইতালি প্রবাসী মো. আমিনুল আলম (৪৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সোমা আলম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গত শনিবার রাতে দায়ের করা এ মামলায় ঘটনার পর থানায় আত্মসমর্পণকারী গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার (২৫) ও তার স্বামী গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত মো. নাজমুল আলমকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আর্থিক লেনদেন ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যসহ বেশ কয়েকটি কারণে আসামিরা এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার ও তার স্বামী মো. নাজমুল আলমকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়েছে। নিহত মো. আমিনুল আলম নীলগঞ্জ রোডের শোলাকিয়া সেবাশ্রম এলাকার মৃত আব্দুছ ছামাদের ছেলে। তিনি ২ মাস ৪দিন আগে ছুটিতে ইতালি থেকে দেশে ফেরেন। আগামী ১২ই ডিসেম্বর তার ইতালিতে পাড়ি দেয়ার কথা থাকলেও সেটি বাড়িয়ে ২রা জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিলেন। অন্যদিকে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার জেলার হোসেনপুর উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের নাজমুল আলমের স্ত্রী। মো. নাজমুল আলম কিশোরগঞ্জ সদরে গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত থাকায় স্ত্রী তাসলিমা আক্তার ও দুই শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে জেলা শহরের নীলগঞ্জ রোডের শোলাকিয়া সেবাশ্রম সংলগ্ন প্রভাষক মো. খায়রুল কবীর ভূঞা সবুজের বাসায় ভাড়া থাকতেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই বাসাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ইতালি প্রবাসী মো. আমিনুল আলম। ঘটনার পরপরই রাত ১১টার দিকে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার পুলিশকে জানান, ইতালি প্রবাসী মো. আমিনুল আলমের বাসায় তারা ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। বাসার মালিক আমিনুল আলমের চরিত্র ভালো না থাকায় সে বাসা ছেড়ে প্রায় আড়াই বছর ধরে একই এলাকায় প্রভাষক মো. খায়রুল কবীর ভূঞা সবুজের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন। পূর্বের ভাড়া বাসার মালিক হিসেবে পরিচয়ের সূত্র ধরে আমিনুল আলম গৃহবধূ তাসলিমাকে বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাবসহ বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলতেন। তাসলিমা ও তার স্বামী নাজমুল আলম বিষয়টি আমিনুল আলমের স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনকে জানালে আমিনুল আলম ক্ষিপ্ত হন। গত শুক্রবার বিকালে স্ত্রী-সন্তানদের ভাড়া বাসায় রেখে নাজমুল আলম গ্রামের বাড়ি হোসেনপুরে যান। এ সুযোগে রাত পৌনে ১১টার দিকে আমিনুল আলম গৃহবধূর ভাড়াবাসায় গিয়ে তাকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরে এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তাসলিমা আক্তার তখন নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে হাতের কাছে থাকা মসলা বাটার জন্য ব্যবহৃত পাথরের শিল দিয়ে আমিনুল আলমের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। এতে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমিনুল মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে এবং রক্ত বের হতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে মুমূর্ষু অবস্থায় আমিনুলকে সেখানে ফেলে রেখে তাসলিমা থানায় ছুটে গিয়ে পুলিশকে ঘটনার বিবরণ দেন। গৃহবধূ তাসলিমা আক্তারের কাছ থেকে এমন বিবরণ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বাসার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমিনুল আলমকে মুমূর্ষু অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর আমিনুল আলমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে গত শনিবার ভোরে আমিনুল আলমের মৃত্যু হয়। পরে শনিবার কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রাতে লাশ দাফন করা হয়।এদিকে, নিহত আমিনুল আলমের স্ত্রী সোমা আলম জানান, তাসলিমার সঙ্গে আমিনুল আলমের টাকা পয়সার লেনদেন ছিল। ঘটনার আগের দিন বৃহস্পতিবার স্বামী আমিনুল আলম ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলন করেন। টাকা-পয়সা আত্মসাৎ ও হাতিয়ে নেয়ার জন্যই আমিনুল আলমকে শুক্রবার রাতে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম জানান, পুলিশ নিবিড়ভাবে ঘটনা সংশ্লিষ্ট সব দিক বিবেচনায় রেখে মামলাটি তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us