লিটন-মুশফিকের ব্যাটে অনেক প্রশ্নের জবাব

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

নুমান আলীর বলে ব্যাট চালালেন, মিড অফের দিকে বল ছুটতে ছুটতে ফিল্ডারের হাতে। ততক্ষণে ঝুঁকি নিয়ে দৌড়াতে শুরু করেছেন লিটন দাস। কিন্তু ভীষণ ক্ষিপ্রতায় ফিল্ডার স্টাম্প সোজা বল ছুড়েছেন। উপায় না দেখে উড়ন্ত এক ডাইভ দিলেন লিটন। বেঁচে গেলেন, সেই সঙ্গে পূর্ণ হলো লিটনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। তার রুদ্ধশ্বাস একটি রানই বলে দিচ্ছে এমন একটি দিনের জন্য কতটা অধীর ছিলেন! টানা ব্যর্থতা, সমালোচনা, ট্রলের শিকার হওয়া থেকে শুরু করে কতো কিছুই না সহ্য করতে হয়েছে তাকে। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে তিনি যখন সাজঘরে ফিরে গেলেন তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে অপরাজিত ১১৩ রান।  শুধু কি তাই? ২০৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি বেঁধেছেন মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে। মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংস। বলতে গেলে তিনিও একটি সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। অবশেষে দু’জনের ব্যাটিংয়ে  বাংলাদেশ শিবিরও ফেলেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটিং ব্যর্থতায় টানা হার। এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াটওয়াশ। সবশেষ এ বছরের শুরুতে চট্টগ্রামের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে হার। টানা ব্যর্থতায় সব মিলিয়ে টাইগাররা যেন হাসতেই ভুলে গিয়েছিলেন। ভক্ত-সমর্থকরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রিয় ক্রিকেটারদের বাজে কথা বলতে ছাড়ছিলেন না। তাদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরেছে। তাইতো সব ভুলে দিনশেষে সাগরিকা স্টেডিয়ামে আসা ভক্তরা প্রিয় তারকাদের কাছে কড়হাত জোড়ে ক্ষমা চাইতে দ্বিধা করেননি। অথচ পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের সকালটা যেন ছিল টাইগার ভক্তদের জন্য দারুণ বিভীষিকাময়। মাঠের বাইরে একটি কারখানাতে আগুন জ্বলছিল। কালো ধোঁয়াতে গ্রাস করেছিল আকাশ। একই অবস্থা টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশেরও। পাকিস্তানি বোলারদের আগুনে পুড়ে ৪৯ রানে বাংলাদেশ দল হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। সেখান থেকেই মুক্তির পথ দেখিয়েছে লিটন-মুশফিক জুটি। দিনশেষে টাইগারদের স্কোর বোর্ডে ২৫৩ রান। হাতে অক্ষত ছয় উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অধিনায়ক মুমিনুল হক টসে জয় দিয়ে শুরু করেন। দেশের মাটিতে ৯ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে বদলায়নি টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্র। ধাক্কার শুরুটা ওপেনার সাইফ হাসানকে হারিয়ে। সবাইকে অবাক করে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল তার পাকিস্তানের বিপক্ষে। কিন্তু দুই ম্যাচ ব্যর্থ হয়ে বাদ পড়েন এই তরুণ। ধারণা করা হচ্ছিল টেস্টে একাদশে তার জায়গা হবে না। কিন্তু আরও একবার আস্থা রেখেছে দল। কিন্তু অজানা বাঁধনে আটকে পড়া সাইফ খোলস ছেড়ে বের হতে পারেননি। তবে দিনের দ্বিতীয় ওভারে হাসান আলিকে মেরেছিলেন দুটি চার। পঞ্চম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে মেরেছিলেন আরেকটি। তবে ওই চারের পরের বলেই ফিরে যান শর্ট লেগে ক?্যাচ দিয়ে। আফ্রিদির বাউন্সার হুট করে এতটা উপরে উঠবে ভাবেননি সাইফ। কোনোমতে মুখ বাঁচাতে গিয়ে ব্যাটে-বলে হয়নি। ক?্যাচ যায় শর্ট লেগে আবিদ আলির হাতে। তিন চারে ১২ বলে ১৪ রান করে আউট হন। এরপর টাইগারদের টপঅর্ডার যেন আটকে যায় ১৪ রানের মায়াজালে। আরেক ওপেনার সাদমানও ফেরেন একই ১৪ রানে। আশা দেখাচ্ছিলেন এই মাঠে সর্বোচ্চ ৭টি টেস্টের সেঞ্চুরির মালিক অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু ৬ রানেই থামে বাংলাদেশ অধিনায়কের ইনিংস। এরপর শান্তও বিদায় নেন ১৪ রান করে। বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। আশা নিয়ে আসা কিছু দর্শক তখন মাঠ ছাড়তে শুরু করেন। তবে তাদের মাঠে ফিরিয়ে আনেন লিটন ও মুশফিক। টাইগাররা যখন মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় তখন স্কোর বোর্ডে ৪ উইকেট হারিয়ে ৬৯ রান।এরপর ফিরে এসে বদলে যেতে থাকে দিন। পাকিস্তানের হাত থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে শুরু করেন দেশের দুই স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। শেষ তিন ঘণ্টায় বাংলাদেশ হারায়নি কোনো উইকেট। দ্বিতীয় সেশন পুরোটা কাটিয়ে দেয়ার পর তৃতীয় সেশনের পুরোটাই নিরাপদে কাটিয়েছেন তারা। যদিও একটি ক?্যাচ দিয়েছিলেন লিটন। ধরতে পারেননি সাজিদ খান। দ্বিতীয়বার বাঁচেন স্লিপে ক?্যাচ হতে হতে। তবে জীবন পেয়ে দারুণভাবেই কাজে লাগান। দুঃসময় পেরিয়ে লিটন সেঞ্চুরি করেন। অবশ্য তিনি টেস্টে ছন্দেই ছিলেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কেটেছে ভীষণ বাজেভাবে। টানা ব?্যর্থতার কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে দলে জায়গাই পাননি তিনি। তবে টেস্টে ফিরেই আস্থার প্রতিদান দেন। এর আগে দুইবার ফিরেছিলেন নব্বইয়ের ঘরে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামেই ২০১৮ সালে ৯৪। আর আগের ইনিংসে হারারেতে ৯৫। দুইবারই ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি করতে গিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। এবার সেটি না করলেও ঝুঁকি নিয়ে তুলে নেন মাইলফলক ছুঁয়ে দিতে একটি রান। ৯৫ বলে করেছিলেন ফিফটি, সেঞ্চুরি এসেছে ১৯৯ বলে। অন্যদিকে দেড়শ’ স্পর্শ করে মুশফিক-লিটন জুটি। এই মাঠে পঞ্চম উইকেটে এটি বাংলাদেশের  প্রথম দেড়শ’ রানের জুটি। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকের সঙ্গেই মেহরাব হোসেনের ১৪৪ রান ছিল আগের সেরা। নানা সমালোচনার মধ্যে দিন কাটানো  মুশফিক ব্যাট হাতে দিয়েছেন দারুণ ধৈর্যের পরিচয়। একবার জীবন পেয়ে সাবধানী হয়ে উঠেন। প্রথম ৫১ বলে করেন কেবল ৬ রান। তবে ফাহিম আশরাফকে চার মেরে খোলস ছেড়ে বের হতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯০ বলে ৮২ রান করে অপরাজিত আছেন। তার সামনে হাতছানি দিচ্ছে ৮ম টেস্ট সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়, আর ১০ রান করতে পারলে দেশের টেস্ট ক্রিকেটে তামিম ইকবালকে টপকে সর্বোচ্চ রানের মালিকও হবেন তিনি। টাইগারদের  টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রের শুরুতেই দারুণ করার সুযোগ। কিন্তু টেস্ট বলে কথা। আরও চারদিন প্রতিটি সেশনে বাংলাদেশকে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us