কৃষকদের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামকে শহরে পরিণত করতে চাই: কৃষিমন্ত্রী
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ভারত ও চীনে যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫০০ এর নিচে মানুষ বাস করছে, সেখানে আমাদের দেশে রয়েছে ১২০০ থেকে ১৩০০। তাছাড়া প্রতিবছর যে হারে নতুন মুখ তৈরি হচ্ছে তাদের খাওয়ানোর জন্য আমাদের নতুন জমি বাড়ানো সম্ভব না। সেজন্য আমাদের কৃষকদেরকে আধুনিকায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। যাতে কৃষকরা লাভবান হতে পারে এবং উন্নত জীবনে পা রাখতে পারে। কৃষকদের উন্নয়নের মাধ্যমে আমার গ্রামকে শহরে পরিণত করতে চাই। এই লক্ষ্য পূরণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে (বিএআরসি) কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলন-২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। উন্নত ও সমৃদ্ধ কৃষির জন্য ‘ভরসার নতুন জানালা’ খুলে দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও স্বেচ্ছাব্রতী নাগরিক সংগঠন বিসেফ ফাউন্ডেশন এবং বিকশিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এ সম্মেলনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী আরও বলেন, এবছর আমরা ১ বিলিয়ন টাকার কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছি। ইতিমধ্যে, কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের পূর্বাচলে ২ একর জমি দিয়েছেন। যেখানে আমরা একটি আধুনিক ল্যাব তৈরি করবো। তাছাড়া দেশের নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল গঠন করা হবে। যেখানে সকল উদ্যোক্তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। সরকারের পাশাপাশি দেশের ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকগুলোকে ইন্টারেস্ট সুবিধার কথা চিন্তা না করে তারা যদি সার্ভিস সেক্টর হিসেবে ভাবে কৃষকরা অনেক বেশি উপকৃত হবে। যার ফলে আমরা কৃষকদের নিয়ে উন্নত দেশে পৌঁছাতে পারবো। দিনব্যাপী কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলনে দেশের ৩৩টি জেলা থেকে কৃষি উদ্যোক্তারা অংশ নেন। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুকের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল হাকিম, ইউসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত জামিল, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সংগঠক ও বিসেফ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক।ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত জামিল বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের পরিশ্রমী ও সৃজনশীল কৃষকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবং সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি ও সহায়তায় বাংলাদেশের কৃষি এখন রপ্তানিমুখী। আমাদের কৃষি অদম্য এবং সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম। শুধু প্রয়োজন একটুখানি সহায়ক পরিবেশ ও মানবিক অর্থায়ন। প্রয়োজনীয় সহায়ক পরিবেশ পেলে কৃষি হতে পারে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম ভিত্তি। আজকের এই কৃষি উদ্যোক্তা সম্মেলনটি দেশের কৃষি উদ্যোক্তাদের মনে ‘ভরসার নতুন জানালা’ খুলে দিবে। সোনার বাংলা গড়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত কৃষি ও কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর ‘উপায়’ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে ‘কৃষক সংলাপ’-এ বিভিন্ন কৃষি উদ্যোক্তাগণ নিজেদের সুখ-দুঃখ গাঁথা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এম. এ মুয়ীদ, বিসেফ ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি টি আই এম জাহিদ হোসেন, ইউসিবি’র ইভিপি জাভেদ ইকবাল এবং ইস্পাহানি এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দা ফাওজিয়া ইয়াসমিন।সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পার্বত্য জনপদের মং সার্কেলের রাজা সাচিং প্ররু চৌধুরী, ইউসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত জামিল, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সেক্রেটারি এটিএম তাহমিদুজ্জামান এফসিএস এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আবু সাইদ মিঞা। এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। ‘ভরসার নতুন জানালা’ নামে কর্মসূচির আওতায় দেশের দক্ষিণে অবস্থিত পাহাড়ি জনপদ থেকে শুরু করে সুদূর উত্তরের পঞ্চগড় জেলা পর্যন্ত বেশকিছু উদ্যোক্তা কৃষক সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে, বিতরণ করা হয়েছে সহজ শর্তের কৃষি ঋণ এবং কৃষি প্রণোদনা সহায়তা। কৃষি উদ্যোক্তা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরাজমান ‘দূরত্ব’ কমিয়ে আনার ‘উপায়’ খোঁজা এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ কৃষির বিকাশে সহজ শর্তে ও মানবিক অর্থায়নের সুযোগ সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।