শাহবাগে অবস্থান ৮ দফা দাবি

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সামপ্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ আট দফা দাবিতে শাহবাগে গণঅনশন, অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন। শনিবার সকাল ৬টা থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের আহ্বানে এই কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান-অনশন করার পর প্রায় ১ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় আটকে রেখে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ঘোষিত আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকায় চল’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো।এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির এসে অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ১ ঘণ্টা বিক্ষোভে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।৮ দফা দাবি১. শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সামপ্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।২. সামপ্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে অন্যূন ২০ লাখ টাকা প্রদান বিকল্পে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।৩. নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সামপ্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।৪. সামপ্রদায়িক হামলাকারীদের রোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।৫. সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সামপ্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।৬. প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সামপ্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরকেও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।৭. ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সামপ্রদায়িক ঘটনাবলী তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দীন কমিশনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।৮. ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এই হামলা শুধু হিন্দুদের ওপর হামলা নয়, গোটা বাঙালির ওপর হামলা। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের একটা অংশ এর জন্য দায়ী। প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সামপ্রদায়িক কর্মচারীদের নিষ্ক্রিয়তা চিহ্নিত করে, তদন্ত করে বিচার করতে হবে।গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “হামলার পর আমি রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, সেখানে তারা বলেছে- ‘আমাদের মা আসবে কবে?’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি তাদের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সংহতি জানান। আর মুসলমানদের মধ্যে যারা হামলা করেছে, তাদের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া। প্রত্যেক মসজিদের ইমামকে বলতে হবে- এগুলো অনৈসলামিক কাজ হয়েছে।’’গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ব্যবসা করে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে, আবার রাষ্ট্রকে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ, এটি চরম ভাঁওতাবাজি। ভাঁওতাবাজি করে রাষ্ট্র চলতে পারে না।কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে অসাম্পদায়িক চেতনা নিয়ে। আজকে দেশ কি অসামপ্রদায়িক? অসামপ্রদায়িক চেতনা যদি থাকতো তাহলে ১৯৭১ সালের ঊনিশ পার্সেন্ট হিন্দু জনসংখ্যা কি ২০১৩ সালে সাড়ে আট পার্সেন্টে নেমে আসতো?আমরা বার বার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছি, আন্দোলন করছি, কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। সামপ্রদায়িক হামলার কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হয়নি। তাই আজকে প্রতিনিয়ত এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে।হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, “আমরা এই সামপ্রদায়িক হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আগে যে সব হামলা হয়েছিল, সেগুলোরও বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ট্র্যাইবুনাল গঠন করে এই হামলার বিচার করতে হবে। আমাদের আট দফা দাবি দ্রুত মেনে নিতে হবে।কর্মসূচিতে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিনা আক্তার, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাবি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, শিক্ষক ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক অরুণ কুমার বক্তব্য দেন।কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ পূজা উদ্‌?যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, জন্মাষ্টমী উদ্‌?যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম ও হিন্দু ছাত্র ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংরক্ষণ সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল শ্রী শ্রী হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্যপরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ অংশ নেয়।ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশে শনিবার এই কর্মসূচি পালিত হয়।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us