হাসান আখুন্দের উত্থান যেভাবে

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পর অবশেষে সরকার গঠন করলো তালেবান। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। মঙ্গলবার দিন শেষে ঘোষণা করা এই সরকারে নেই তালেবানের বাইরের কেউ। এছাড়া হয়নি কোনো নারীর স্থানও। ১৫ই আগস্ট আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় মিলিশিয়া বাহিনীটি। এরপর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লা আব্দুল গণি বারাদারই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি আর সত্যি হয়নি। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ঘোষণা করেন, মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের নেতৃত্বেই হচ্ছে তালেবানের নতুন সরকার। আর গণি বারাদার পেয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ। এতদিন ধরে কোনো আলোচনায় না থাকা হাসান আখুন্দকে প্রধানমন্ত্রী করায় তাকে নিয়ে কৌতূহল দেখা যাচ্ছে সবার মধ্যেই। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, হাসান আখুন্দ কান্দাহার প্রদেশে জন্ম নেন। এই প্রদেশটি হলো তালেবান আন্দোলনের জন্মভূমি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানদের যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তাতে তিনি পালন করেছেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং কান্দাহারের গভর্নরের দায়িত্ব। তিনি তালেবান আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তালেবান প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন হাসান আখুন্দ। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ করেছেন তিনি। হাসান আখুন্দের বয়স ৬০ উত্তীর্ণ বলে মনে করা হয়। তবে তার চেয়েও বেশি হতে পারে তার বয়স। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তার বিরুদ্ধে যে অবরোধ ঘোষণা করেছে তাতে, তাকে ৭৬ বছর বয়সী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তালেবানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তিশালী পরিষদ রেহবারি শূরা বা নেতৃত্ব বিষয়ক পরিষদের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন হাসান আখুন্দ। বিশ্লেষকরা তাকে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখে থাকেন। তার রয়েছে রেহবারি শূরা’র ওপর নিয়ন্ত্রণ। সামরিক বিষয়েও তার সিদ্ধান্ত দেয়ার এক্তিয়ার আছে। ওদিকে, তালেবানের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, হাসান আখুন্দের বয়স অনেক বেশি। তালেবানের সিনিয়র নেতৃত্বের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি বয়সী। তালেবানের আন্দোলনে আর্থিক এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে থাকেন তিনিই। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের এক অবরোধ বিষয়ক রিপোর্টে তাকে বর্ণনা করা হয়েছে মোল্লা ওমরের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে। তাছাড়া তালেবানদের মধ্যে হাসান আখুন্দকে খুব সম্মান দেখানো হয়। তিনি তালেবান সুপ্রিম নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদার খুব ঘনিষ্ঠ। এর আগের বার তালেবান শাসনামলে বুরহানুদ্দিন রাব্বানী যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তার খুব ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান আখুন্দ। তালেবান এক নেতা বলেছেন, রেহবারি শূরা’তে সব সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আখুন্দ-এর প্রভাব রয়েছে। নওয়াজ শরীফ যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং সারতাজ আজিজ যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন তিনি পাকিস্তান সফর করেছিলেন। সরকার গঠনে তালেবানের এত দেরি হওয়ার পেছনে রয়েছে মূলত গোষ্ঠীটির মধ্যেকার অন্তর্কোন্দল। একদিকে আছে উপ-প্রধানমন্ত্রী গণি বারাদার ও তার সমর্থকরা আর অন্যদিকে আছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। এর নেতৃত্বে আছে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। তাকে তালেবানের নতুন সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- এই দুইজনকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দিয়ে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তালেবান। অপরদিকে হাসান আখুন্দকে তালেবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়টিকে একটি আপস বা সমঝোতামূলক পদক্ষেপ হতে পারে। এফবিআই’র ওয়ান্টেড তালিকায় সিরাজউদ্দিন হাক্কানির নাম আফগানিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানির নাম রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই’র সন্ত্রাসের তালিকায়। তিনি হাক্কানি নামের একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান। তালেবানদের সঙ্গে এই সংগঠনটির সখ্য আছে। দুই দশক ধরে আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় বেশকিছু ভয়াবহ হামলায় জড়িত এই গ্রুপটি। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালে রাজধানী কাবুলে একটি ট্রাকবোমা বিস্ফোরণ। এতে কমপক্ষে ১৫০ জন মানুষ নিহত হন। তালেবানদের মতো বিস্তৃত নয় হাক্কানি নেটওয়ার্ক। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই তাদেরকে একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিবিসি’র এক রিপোর্টে বলা হয়, আল-কায়েদার সঙ্গে এই গ্রুপটির রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এফবিআইতে সিরাজউদ্দিন হাক্কানি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কাবুলে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে একটি হামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওয়ান্টেড তিনি। ওই হামলায় একজন মার্কিন নাগরিকসহ কমপক্ষে ৬ জন নিহত হন। এতে আরও বলা হয়, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত হামলায় তিনি সমন্বয় ও অংশগ্রহণ করেছেন বলে মনে করা হয়। এছাড়া ২০০৮ সালে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা পরিকল্পনায় তিনি জড়িত ছিলেন’। এছাড়া ২০১১ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর রাজধানী কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং ন্যাটো ঘাঁটির কাছে হামলার জন্য দায়ী করা হয় হাক্কানি নেটওয়ার্ককে। ওই হামলায় ৪ জন বেসামরিক মানুষ এবং ৪ জন পুলিশ নিহত হন। শরিয়াহ্‌ আইন বাস্তবায়নের দাবি তালেবান সুপ্রিম নেতারতালেবান সুপ্রিম নেতা মৌলভী হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তিনি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে শরিয়াহ্‌ আইন বাস্তবায়ন করা হবে। ইংরেজিতে দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিবেশী ও অন্য সব দেশের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও যোগাযোগের ভিত্তিতে শক্তিশালী ও সুস্থ সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে মনে করে তালেবানরা। সতর্কতার সঙ্গে বলা হয়েছে, ইসলামিক আইন এবং দেশের জাতীয় মর্যাদার সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ নয়, এমন আন্তর্জাতিক আইন এবং চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে তালেবানরা। জনগণের সামনে কখনো প্রকাশ্যে আসেননি হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। গত মাসে দেশের ক্ষমতা তালেবানরা দখল করার পর এটাই তার পক্ষ থেকে প্রথম বার্তা। তালেবানদের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন- জাতিসংঘএদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেছেন, জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন তালেবানদের। তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য এই সহায়তা হতে পারে ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পরও সেখানে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে জাতিসংঘ। এরই মধ্যে মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেছে তালেবানরা। কিন্তু সেখানে কোনো নারী প্রতিনিধি রাখা হয়নি। বলা হয়েছে, এটা স্বল্পকালীন একটি অন্তর্বর্তী সরকার। পরে এতে অন্যদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। এ পরিস্থিতিতে নিউ ইয়র্কে বিবিসি’র সাংবাদিক লরা ট্রেলেনিয়ানের সঙ্গে কথা বলেন গুতেরাঁ। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এখনো বড় রকমের অনিশ্চয়তায়।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us