বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জেলহত্যা ও ২১ আগস্ট ম্যাসাকার-ইতিহাসের জঘন্য এ পর্বগুলোর পারম্পর্য ঘনিষ্ঠ। মনে হয়, ঘটনাক্রম অদৃশ্য এক সুতায় বাঁধা। উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধারণাটাকেই বদলে দেওয়া। সে চেষ্টা হয়তো এখনো জারি আছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন বুদ্ধিজীবী হত্যা অথবা স্বাধীনতার পর রাজনীতিবিদ, লেখক ও সাংবাদিকদের সংগঠিত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা। সেসব অপরাধের প্যাটার্ন ও অভিমুখ একই ছিল বলে ধারণা করা যায়। ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে নানা সময়ে, নানাভাবে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে, বিভিন্ন কারাগারে অবস্থানকালে; এমন কী পাকিস্তানের জেল থেকে স্বদেশে ফেরার পথেও বঙ্গবন্ধুর বিমানে একজন ঘাতককে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।
একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনই ছিল দেশভাগের পর সব আন্দোলন-সংগ্রামের মূল দর্শন। পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নেওয়া বাঙালি এলিট নেতৃত্ব সোঁদা মাটি থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর পাশে ক্রমেই ম্লান হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব, পাহাড় সমান সাংগঠনিক শক্তি ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা এ আন্দোলনের মূল শক্তিতে পরিণত হয়। মাঠে-ঘাটে ঘাম ঝরানো, কাদা মাটিতে হেঁটে চলা মানুষের সঙ্গে তিনি সহজেই মিশে থাকেন, তাদের চোখের জল ও আবেগের মাঝে নিজেকে জড়িয়ে নেন। ক্রমেই হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী গণমানুষের নেতা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ঘৃণা ও বৈষম্যের রাজনীতি বাঙালি মানেনি। অভিজাত ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার পাকিস্তানি মতলব বাঙালিকে ক্ষুব্ধ করেছিল। এ অঞ্চলের ভাষা, সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক স্বার্থকে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করায় ‘বাঙালি আবেগ’ গর্জে উঠেছিল; আর সে দ্রোহের বলিষ্ঠ কণ্ঠ ছিলেন বঙ্গবন্ধু।