মাদক সেবন, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ: শাস্তি কি?

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

মাদকাসক্তের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শারীরিক বা মানসিকভাবে মাদকদ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি অভ্যাসবশে মাদকদ্রব্য গ্রহণ বা সেবনকারী ব্যক্তি। আইনে মাদকের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, স্থানান্তর, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলামকরণ, ধারণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, সেবন, প্রয়োগ, ব্যবহারকে অপরাধ  হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে- পারমিট ব্যতীত কোনো ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করিতে পারিবেন না এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিকেল কলেজের অন্যূন কোনো সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পান করিবার জন্য পারমিট প্রদান করা যাইবে না। তবে মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কর্তৃক তাড়ি পান করিবার ক্ষেত্রে এবং রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসমূহ এবং অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কর্তৃক ঐতিহ্যগতভাবে প্রচলিত অথবা প্রস্তুতকৃত মদ পান করিবার ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এর কোনো কিছুই প্রযোজ্য হইবে না।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ  আইন, ২০১৮ অনিযায়ী ইয়াবা, সিসা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিড্রিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, সেবন, বহন, আমদানি-রপ্তানি বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৫ গ্রাম পর্যন্ত কোকেন, হেরোইন, মরফিন ও পেথিড্রিন পাওয়া গেলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া যাবে। এই মাদকের পরিমাণ ৫ থেকে ২৫ গ্রামের মধ্যে হলে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং মাদকের পরিমাণ ২৫ গ্রাম বা তার বেশি হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড ও অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। মাদক নির্মূলে রয়েছে এমন শক্তিশালী আইন। তবু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মাদক। কিন্তু কেন? এ ব্যাপারে কথা হয় সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার ২০১৮ সালে ইয়াবা, সিসা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিড্রিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, সেবন, বহন, আমদানি-রপ্তানি বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন পাস করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ আইনে কারো সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অর্থাৎ মাদকের সর্বোচ্চ শাস্তি থাকা সত্ত্বেও কোনো মামলাতে  দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। যে কারণে মাদক সংশ্লিষ্টরা একই অপরাধ বার বার করছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড ফর চিলড্রেন এর নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল মানবজমিনকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ  আইন-২০১৮ অনিযায়ী ইয়াবা, সিসা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিড্রিন জাতীয় মাদকের ব্যবহার, সেবন, বহন, আমদানি-রপ্তানি বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে- অ্যালকোহল ব্যতীত অন্যান্য মাদকদ্রব্য অথবা মাদকদ্রব্যের উৎপাদন অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয় এইরূপ কোনো দ্রব্য অথবা উদ্ভিদের (ক) চাষাবাদ, উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন বা স্থানান্তর এবং আমদানি বা রপ্তানি করা যাইবে না; (খ) সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলামকরণ, ধারণ, অধিকার অথবা দখল, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ ও প্রদর্শন করা যাইবে না; (গ) সেবন, প্রয়োগ অথবা ব্যবহার করা যাইবে না এবং (ঘ) দফা (ক) হইতে (গ) পর্যন্ত উল্লেখিত কোনো উদ্দেশ্যে কোনো প্রচেষ্টা অথবা উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থ বিনিয়োগ, কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা পরিচালনা কিংবা উহার পৃষ্ঠপোষকতা, কিংবা মিথ্যা ঘোষণা প্রদান করা যাইবে না। ৯(২) ধারায় বলা হয়েছে- কোনো মাদকদ্রব্যের উপাদান অথবা উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয় অথবা হইতে পারে এইরূপ কোনো প্রিকারসর কেমিক্যালসের- (ক) উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণ; বহন, পরিবহন বা স্থানান্তর এবং আমদানি বা রপ্তানি করা যাইবে না; (খ) সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়, বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলাম করা, ধারণ, অধিকার অথবা দখল, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ ও প্রদর্শন করা যাইবে না; (গ) সেবন, প্রয়োগ অথবা ব্যবহার করা যাইবে না; এবং (ঘ) দফা (ক) হইতে (গ) পর্যন্ত উল্লেখিত কোনো উদ্দেশ্যে কোনো প্রচেষ্টা অথবা উদ্যোগ গ্রহণ, অর্থ বিনিয়োগ, কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা পরিচালনা, কিংবা উহার পৃষ্ঠপোষকতা, কিংবা মিথ্যা ঘোষণা প্রদান করা যাইবে না।আইনের ৯ ধারা লঙ্ঘনে কী ধরনের সাজার বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে আইনের ৩৬ ধারায় বিশদ বলা হয়েছে। এই ধারায় টেবিল ১০- এ বলা হয়েছে প্রথম তফশিলের ‘ক’ শ্রেণির ৫নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি হবে (ক) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ২০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটার হইলে অন্যূন ১ বৎসর, অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (খ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ২০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটার এর ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ৪০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটার হইলে অন্যূন ৫ বৎসর, অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (গ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ৪০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটারের ঊর্ধ্বে হইলে মত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।৩৬ এর ১১নং টেবিলে বলা হয়েছে- প্রথম তফশিলের ‘ক’ শ্রেণির ৬নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ক) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি হবে- (ক) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) গ্রাম অথবা মিলিলিটার হইলে অন্যূন ১ বৎসর, অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (খ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ৫ গ্রাম অথবা মিলিলিটারের ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ২৫ গ্রাম অথবা মিলিলিটার হইলে অন্যূন ৫ বৎসর, অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (গ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ২৫ গ্রাম অথবা মিলিলিটারের ঊর্ধ্বে হইলে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।৩৬ এর ১৪নং টেবিলে বলা হয়েছে- প্রথম তফশিলের ‘ক’ শ্রেণির ৭নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি- (ক) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ৫০০ গ্রাম অথবা মিলিলিটার  হইলে অন্যূন ১ বৎসর, অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (খ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ৫০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ৫ কেজি অথবা লিটার হইলে অন্যূন ৫ বৎসর, অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (গ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ৫ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে হইলে অন্যূন ১০ বৎসর, অনূর্ধ্ব যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।৩৬ এর ২৪নং টেবিলে বলা হয়েছে- প্রথম তফশিলের ‘খ’ শ্রেণির ৩নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (গ) (ঘ) অথবা (ঙ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি- (ক) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ১০ কেজি অথবা লিটার  হইলে অন্যূন ৬ মাস অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (খ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ১০ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ১০০ কেজি অথবা লিটার  হইলে অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড এবং (গ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ১০০ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে হইলে অন্যূন ৫ বৎসর অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।৩৬ এর ২৫নং টেবিলে বলা হয়েছে- প্রথম তফশিলের ‘খ’ শ্রেণির ৩নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (চ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি- অন্যূন ৬ মাস অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। এই আইনের ১০ ধারায় বলা হয়েছে- অ্যালকোহল উৎপাদন, ইত্যাদি সম্পর্কে বিধি-নিষেধ বিষয়ে বলা হয়েছে। এর (১) উপ-ধারায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স, পারমিট বা পাস ব্যতিরেকে নিম্নবর্ণিত কোনো কার্য করিতে পারিবে না, যথা:- (ক) কোনো ডিস্টিলারি অথবা ব্রিউয়ারি স্থাপন; (খ) কোনো অ্যালকোহল উৎপাদন অথবা প্রক্রিয়াজাতকরণ; (গ) কোনো অ্যালকোহল বহন, পরিবহন, আমদানি অথবা রপ্তানি; (ঘ) কোনো অ্যালকোহল সরবরাহ, বিপণন, ক্রয় অথবা বিক্রয়; (ঙ) কোনো অ্যালকোহল ধারণ, অধিকার অথবা দখল, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ অথবা প্রদর্শন; (চ) কোনো অ্যালকোহল সেবন, প্রয়োগ ও ব্যবহার; (ছ) কোনো অ্যালকোহল জাতীয় ঔষধ প্রস্তুতের উপাদান হিসাবে ব্যবহার; এবং ধারা ১০ এর শাস্তিঃ  ৩৬ এর টেবিল ২৪ অনুযায়ী- প্রথম তফশিলের ‘খ’ শ্রেণির ৩নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (গ) (ঘ) অথবা (ঙ) এর লঙ্ঘন। এর শাস্তি- (ক) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ১০ কেজি অথবা লিটার  হইলে অন্যূন ৬ মাস অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; (খ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ১০ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে এবং অনূর্ধ্ব ১০০ কেজি অথবা লিটার  হইলে অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড; এবং (গ) মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ১০০ কেজি অথবা লিটার-এর ঊর্ধ্বে হইলে অন্যূন ৫ বৎসর অনূর্ধ্ব ১০ বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।৩৬ এর টেবিল ২৫ অনুযায়ী- প্রথম তফশিলের ‘খ’ শ্রেণির ৩নং ক্রমিকভুক্ত যেকোনো মাদকদ্রব্য সম্পর্কে ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (চ) এর লঙ্ঘন। শাস্তি অন্যূন ৬ মাস অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। (২) কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া দণ্ড ভোগ করিবার পর যদি কোনো ব্যক্তি পুনরায় কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ করেন, তাহা হইলে উক্ত অপরাধের দণ্ড মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না হইলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য এই আইনে সর্বোচ্চ যে দণ্ড রহিয়াছে উহার দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।(৩) কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধের জন্য দ্বিতীয়বার দণ্ডিত হইয়া দণ্ড ভোগ করিবার পর যদি কোনো ব্যক্তি পুনরায় কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ করেন তাহা হইলে উক্ত অপরাধের দণ্ড মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না হইলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য অন্যূন ২০ (বিশ) বৎসর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us