লন্ডনে বড় হওয়া ছালেমার ভাগ্য বিড়ম্বনা

মানবজমিন প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২১, ০০:০০

‘আমার তো পরিবার নেই। কিছু করতেও পারি না। এখন তো শেষ সময়। এই সময়ে যদি একটা পরিবার পেতাম। তাহলে শেষ সময় পরিবারের সঙ্গেই কাটাতাম। বৃদ্ধ বয়সে পরিবারের আশ্রয় পেতে এমনি আকুতি জানান ৮০ বছর বয়সী নুরজাহান বেগম। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। সবকিছু হারিয়ে এখন তার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন নুরজাহান বেগম। প্রায় বছর ছয়েক ধরে থাকছেন সেখানে। পরিবারের কথা তেমন মনে করতে পারছেন না। সন্তান-সন্ততি ছিল কিনা সেটাও জানেন না। বৃদ্ধাশ্রমের ম্যানেজার মিরাজ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে নুরজাহান বেগম সেখানে রয়েছেন। প্রথম প্রথম বলতেন, তার বাড়ি নড়াইল জেলায়। এ ছাড়া আর কিছু বলতে পারছেন না। এ পর্যন্ত তার খোঁজে কেউ আসেনি। নুরজাহান বেগমের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তিনি বলেন, আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই। ভাই ছিল সে মারা গেছে। এখানে কে নিয়ে এসেছে সেটা জানি না। তবে আমি এক্সিডেন্ট করেছিলাম। ওই সময় আমার পায়ে খুব সমস্যা হয়েছিলো। পরে আর কিছু মনে নেই। এখানে সবাই আমাদের খুব যত্ন নেয়। আমরা এখানে ভালো আছি। কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারে গিয়ে এ রকম শতাধিক বৃদ্ধ মা-বাবার খোঁজ মেলে। তাদের বেশির ভাগই নিজ পরিবার থেকে বিতাড়িত। তাদের অনেকেই বিভিন্ন সময় রাষ্ট্র ও সমাজের নানান গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেখা মিললো চিকিৎসক, আমলা ও শিক্ষকেরও। জীবনের সবকিছু উজাড় করে তারা একদিন নিজেদের সন্তানদের পড়ালেখা শিখিয়ে দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে উপেক্ষিত তাদের আশ্রয় হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে। ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টার’ বৃদ্ধাশ্রমটিতে ১১৪ জন বৃদ্ধ বাবা- মা রয়েছে। এ ছাড়া ২০ জন শিশু রয়েছে। শিশুদের বেশির ভাই প্রতিবন্ধী। দেশে করোনার ভয়াবহতা শুরুর পর থেকে নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখানকার সবাইকে সেবা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেখানে কেউই করোনায় আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ম্যানেজার মিরাজ হোসেন। তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে এখানে সবাই নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। প্রয়োজন মতো চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। ষাটোর্ধ্ব ছালেমা আমজাদ। তার জন্ম লন্ডনে। শৈশব, কৈশোর থেকে শুরু করে পড়ালেখা বেড়ে ওঠা সবটাই ওই শহরে। পরে বিয়ে, চার সন্তানের জননী হওয়া। সেও ওই লন্ডনে। জীবনের দীর্ঘ সময় স্বামী আর চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন কাটিয়েছেন ছালেমা। সন্তানরা ক্রমে বড় হয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে একপর্যায়ে খুব ভালো ভালো কাজের সুযোগ পান। চাকরি-বাকরি, সংসার, সন্তানসহ নিজেদের মতো গুছিয়ে ফেলেন যার যার জীবন। শুধু তাদের কারও পরিবারেই জায়গা হয়নি বয়স্ক মা ছালেমার। ছেলে-মেয়ে সবার কাছেই তিনি থেকে গেছেন উপেক্ষিত। একপর্যায়ে লন্ডনের উন্নত জীবন ছেড়ে শূন্যহাতে চলে আসেন বাংলাদেশে বাবার জন্মভিটা খুলনায়। সেখানেও খুঁজে পাননি কোনো স্বজন। শেষমেশ এক সাংবাদিকের সহায়তায় ঠাঁই হয় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড কেয়ার সেন্টারে। পাঁচ বছর ধরে সেখানেই কাটছে তার দিন।এখানে কেমন আছেন জানতে চাইলে ছালেমা বলেন, বেশ ভালোই আছি। উন্নত দেশে উন্নত পরিবেশেই কেটেছে আমার জীবনের বেশির ভাগ সময়। লন্ডন শহরে আমার জন্ম। সেখানেই পড়ালেখা করেছি। বিয়ে হয়েছে সে শহরেই। আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে। তাদেরও বিয়ে হয়েছে, প্রত্যেকের ঘরে সন্তান-সন্ততি আছে। কিন্তু তাদের কারও ঘরে আমার জায়গা হয়নি। আমি জানি তাদের কথা মনে হলেও আমার কোনো লাভ নেই, এজন্য মনে করতে চাই না। যতদিন বাঁচবো এখানেই থাকবো, এটাই আমার ঠিকানা। সন্তানদের কাছে আমি আর ফিরে যেতে চাই না। তারা আমার খবর নেবে, এটা আমি আর আশাও করি না।বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মিল্টন সমাদ্দার মানবজমিনকে বলেন, আমি নার্সিংয়ের ছাত্র ছিলাম। তখন থেকে আমি অসহায় মানুষদের সেবা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। পরে ২০১৪ সালে আমি এই বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করি। তখন মাত্র একজন ছিলেন। এখন ১৩৪ জন আছেন। আমি শেষ সময় পর্যন্ত তাদের সেবা করে যেতে চাই।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us