সিলেটে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ রাজা ম্যানশন ভাঙতে চায় রাজা পরিবার

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২১, ০০:০০

সিলেটের রাজা ম্যানশন। জিন্দাবাজারকেন্দ্রিক ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র। ঐতিহ্য আছে মার্কেটের। সিলেটের রাজা পরিবারের সম্পত্তি এই মার্কেট। ওই বংশের পূর্ব পুরুষ মরমি কবি হাছন রাজা। অর্ধশতাব্দি বছর বয়সী এই রাজা ম্যানশন এবার ভাঙতে চায় রাজা পরিবার। ভাঙার পেছনের কারণ হলো- রাজা ম্যানশনটি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়  বছর আগেই সিটি করপোরেশন থেকে মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। এবারের কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চলতি মাসের শুরুতে ১০ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল মার্কেটটি। ‘মানবিক’- বিবেচনায় মার্কেটটি খুলে দেয়া হলেও এখন পুরাতন মার্কেট ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে রাজা পরিবারের মুখোমুখি হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ৩০ দিনের মধ্যে মার্কেটের পজিশন খালি করতে ইতিমধ্যে আইনগত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত ও রাজা পরিবারের সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজা ম্যানশন। ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে রাজা পরিবার তাদের পারিবারিক সম্পত্তিতে ৫ তলা ফাউন্ডেশনে ৪৫ শতক ভূমির ওপর একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে রাজা পরিবারের পক্ষ থেকে দোকান কোঠা ভাড়া দেয়া হয়। বর্তমানে তিনতলাবিশিষ্ট ওই মার্কেটের দোকানের সংখ্যা প্রায় ১৮৭টি। বইয়ের মার্কেট হিসেবে এটি পরিচিত। মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ২০১৬ সালে ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নগরের কয়েকটি পুরাতন মার্কেটকে চিহ্নিত করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে রাজা ম্যানশনটি অন্যতম। ওই সময় সিটি করপোরেশনের নোটিশের প্রেক্ষিতে রাজা পরিবার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ভবন ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ জানালেও ব্যবসায়ীরা সেটি মানেননি। বরং তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। এই অবস্থায় গত ২৯ ও ৩০শে মে সিলেটে কয়েক দফা ভূমিকম্প হয়। এই ভূমিকম্পের পর সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আগেই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা রাজা ম্যানশনকে বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে ৩১শে মে থেকে পরবর্তী ১০ দিন মার্কেটটি বন্ধ ছিল। এ সময় রাজা পরিবারের পক্ষ থেকে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মেয়র মার্কেটটি ঝুঁকিমুক্ত করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। নতুবা সিটি করপোরেশন থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে রাজা পরিবারকে জানিয়ে দেয়া হয়। এই অবস্থায় মার্কেটের মালিকপক্ষ বেকায়দায় পড়েন। একদিকে সিটি করপোরেশনের চোখ রাঙানি, অন্যদিকে নতুন করে মার্কেট নির্মাণে ব্যবসায়ীদের অনীহা- এই দুই বিষয় নিয়ে তারা দোটানায় পড়েন। মার্কেটের এসব বিষয় নিয়ে গতকাল সিলেটে রাজা পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দেওয়ান সমশের রাজা চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন- সিটি করপোরেশনের কঠোর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৩ই জুন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের জ্ঞাতার্থে আইনগত বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধসে জানমালের ক্ষতিরোধে ৩০ দিনের মধ্যে ভবন খালি করে মালিকপক্ষকে দখল সমঝে দেয়ার জন্য। মালিকপক্ষের আইনি উদ্যোগের পর রাজা ম্যানশন দোকান মালিক সমন্বয় কমিটির পক্ষে আরেকটি আইনি নোটিশ প্রদান করা হয়। সমশের রাজা জানান- ওই নোটিশেও স্বীকার করে নেয়া হয়েছে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনকে মেরামত করতে হলে মার্কেট খালি করা প্রয়োজন। কিন্তু সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়ান সমশের রাজা চৌধুরী দাবি করেন- ১৮৭টি দোকান কোঠা থেকে প্রতিমাসে রাজা পরিবারকে নামমাত্র ৫০ হাজার টাকা ভাড়া দেয়া হয়। এখনো অনেক ভাড়াটিয়ার কাছে বকেয়া পড়ে আছে। কিন্তু ভাড়াটিয়ারা সাবভাড়া দিয়ে মাসে ন্যূনতম ২৫ লাখ টাকা আদায় করছেন। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন- সিটি করপোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বিবেচনায় সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন খুলে দিলো কী কারণে সেটি বোধগম্য হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান- ‘ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবন যেহেতু সংস্কার করে ব্যবহার করা সম্ভব নয়, সেহেতু ভবনটি ভেঙে অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত আধুনিক বিপণি বিতান নির্মাণ করতে রাজা পরিবার ইচ্ছুক। একই সঙ্গে মার্কেটের প্রথম থেকে তৃতীয় তলার তালিকাভুক্ত ভাড়াটিয়াদের দিতেও রাজি। এ কারণে দ্রুত মার্কেট ভেঙে ফেলতে তিনি ব্যবসায়ীসহ সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।’ এদিকে গতকাল মার্কেটের মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন- সিটি করপোরেশনের নোটিশ প্রাপ্তির পর তারা মার্কেটে নতুন করে মেরামত কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এই কাজ এখনো চলমান। কাজ শেষ হলে মার্কেটটি ঝুঁকিমুক্ত হবে। আর এই মেরামতের ব্যয়ভার ব্যবসায়ীরা বহন করছেন বলে জানান তারা। রাজা ম্যানশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুদ হোসেন খান গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘রাজা ম্যানশন কেন ঝুকিপূর্ণ; সেটি কেউ বলছে না। যেহেতু মার্কেটের ফাউন্ডেশন ৫ তলা, এ কারণে ব্যবসায়ীরা মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন না। সিটি করপোরেশনের কথামতো মেরামত কাজ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন- ‘মার্কেটের যারা দোকানের মালিক হয়েছেন তারা পজিশন কিনে হয়েছেন। জমিদারি ট্যাক্স নিচ্ছেন রাজা পরিবার। তারা যদি মার্কেট ভাঙতে চান তাহলে সেটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে করতে হবে। একই সঙ্গে মার্কেট পুনঃনির্মাণকালীন সময়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের কী হবে সেটি নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- কয়েক দফা ভুমিকম্পের পর যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল তাদের প্রাথমিক রিপোর্টেও মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ সেটি নির্ণয় করা সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল বিষয়। এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। মার্কেটের মালিক রাজা পরিবার সিদ্ধান্ত নেবে মার্কেট পুনঃনির্মাণ করবে না মেরামত করবে। সিদ্বান্ত তারা নিতে হবে। এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত সিটি করপোরেশনকে জানাতে হবে। এই নিয়ম সিলেটের ঝুঁকিপূর্ণ সব মার্কেটের বেলায় প্রযোজ্য হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us