ঢাকা কেন তলানিতে?

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান শহর ঢাকা। বিশ্বের নবম বৃহত্তম এবং সর্বাপেক্ষা জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। ৩০৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই শহরে দুই কোটির বেশি মানুষের বসবাস। ক্রমইে বাড়ছে জনসংখ্যা। হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। এতেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে স্বপ্নের শহর। সম্প্রতি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে তলানিতে অবস্থান করছে ঢাকা। তালিকা অনুযায়ী ১৪০টি দেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে চার নম্বরে আছে রাজধানী ঢাকা। অর্থাৎ বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে ঢাকা। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগের বছরগুলোর সমীক্ষার ফলাফলেও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় উঠেছে ঢাকার নাম। ক্রমেই রুগ্ন হয়ে উঠছে এই শহর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এর অন্যতম প্রধান কারণ ঘনবসতি আর অপরিকল্পিত নগরায়ন। বিভিন্ন দেশে ঘনবসতি থাকলেও অন্যান্য দিক দিয়ে সেসব শহর এগিয়ে রয়েছে। তবে বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ঢাকায় স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশের বিপর্যয় বেড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে নগরায়নই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এতে শহরের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কোনো সমন্বয় নেই। নেই স্বচ্ছ জবাবদিহি। এদিকে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ছে মানুষ। হচ্ছে না যথাযথ বাসস্থান। নিশ্চিত হচ্ছে না স্বাস্থ্যসেবা। এবারের জরিপে স্বাস্থ্যখাতে সব চেয়ে কম নম্বর পেয়েছে ঢাকা। আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, শিল্পকারখানাসহ ছোট বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এছাড়া মানুষ সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনা, যানবাহনের সংকট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, ভয়াবহ যানজট, পয়নিষ্কাশনের করুণ অবস্থা, জলাবদ্ধতা, রাস্তাঘাটের করুণ দশা পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। চলতি বছরেই ঢাকায় বায়ু দুষণের মাত্রা বেড়েছে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ৫ গুণ বেশি। এতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিত্যক্ত শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে ঢাকা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজধানী ঢাকা বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, এটা শুধু ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য নয়। দেশের সকল মানুষ এটা বুঝতে পারেন। এর মূল কারণ এই শহর নিয়ে কারো কোনো দর্শন নেই। ২০ বছর আগের ঢাকা আর ২০ বছর পরের ঢাকা কেমন হবে তা নিয়ে কার্যকরী কোনো ভাবনা-চিন্তা নেই। নেই কোনো সমন্বয়। শহর রক্ষায় আইন আছে প্রয়োগ নেই। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহর এটি। ক্রমেই ঢাকামুখী হচ্ছে মানুষ। এটা রোধে কাজ করছেন না কেউ। অন্যদিকে কৃত্রিমভাবে জমির দাম বাড়িয়ে একটা গ্রুপ নিজেদের ইচ্ছামতো আবাসন গড়ে তুলছেন। শহরের সবুজায়ন ধ্বংস করা হচ্ছে। বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে ঢাকা। তিনি বলেন, পরিবেশে দূষণ বেড়েই চলছে। গণপরিহনে নেই শৃঙ্খলা। এই খাতে আইন কার্যকরী না থাকায় বায়ুদূষণে শহরের পরিবেশ রক্ষা আইন ভেস্তে যাচ্ছে। শহরের কাঠামো নষ্ট হচ্ছে। এতে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-বিআইপি’র  সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাসযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকা তলানির দিকে অবস্থান করবার মূল কারণ ঢাকার অধিকাংশ এলাকায়ই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে। নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সড়ক অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধাদি, খেলার মাঠ, উদ্যান, সবুজ এলাকা ও জলাশয়-জলাধার এর পরিমাণ খুবই কম। পাশাপাশি নগর এলাকা যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, সেসব বর্ধিত নগর এলাকাগুলোতে পরিকল্পনার উদ্যোগ সীমিত। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনাসহ অন্যান্য যেসব পরিকল্পনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়নের হারও খুবই সীমিত। নগর সংস্থাগুলোর নজরদারির সক্ষমতা দুর্বলতার কারণে ও সুশাসনের অভাব থাকায় পরিবেশ-প্রতিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়াতে নগরের বাসযোগ্যতা কমছে মারাত্মকভাবে। তিনি বলেন, বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকার অবস্থান আপেক্ষিকভাবে ১ ধাপ এগোলেও (গতবারের ১৩৮ এর তুলনায় এবারের স্থান ১৩৭তম) সার্বিক মানের বিচারে ঢাকার বাসযোগ্যতা কমেছে। ২০১৯ সালে আমাদের বাসযোগ্যতা সূচক মান ৩৯.২। এবারের সূচকের মান আরো কমে ৩৩.৫-তে পৌঁছেছে। যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় আমাদের বাসযোগ্যতার অবনতি হয়েছে। এবারের বাসযোগ্যতা সূচকে কোভিড মোকাবিলায় নগরগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ও সংশ্লিষ্ট সক্ষমতা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে; ফলে গতবারের তুলনায় অনেক শহরের বাসযোগ্যতার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইআইইউ বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা শহরের ২০১৯ সালের সূচকের তুলনায় পাঁচটি উপ-সূচক মানের মধ্যে ২০২১ সালে স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামোর ক্ষেত্রে মান অপরিবর্তিত রয়েছে যাদের সূচক মান যথাক্রমে ৫৫ ও ২৬.৮। অপরদিকে অন্য তিনটি সূচকের ক্ষেত্রে মান কমেছে যেমন স্বাস্থ্যে মান ১৬.৭ (পূর্বে ২৯.২); সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৩০.৮ (পূর্বে ৪০.৫) এবং শিক্ষায় ৩৩.৩ (পূর্বে ৪১.৫)। ফলে এটা স্পষ্ট যে, ঢাকার অবস্থানের ১ ধাপের পরিবর্তন হলেও প্রকৃত অর্থে ঢাকার সূচক মানের অবনতি তথা বাসযোগ্যতার অবনতি ঘটেছে। পাশাপাশি নগরের বাসযোগ্যতার মানদণ্ডে সাম্য ও সাশ্রয়ী নাগরিক পরিষেবা ও অবকাঠামো নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিন্যাস বাসযোগ্যতা নির্ধারণ করে এই বিবেচনায় ঢাকার নাগরিক সুবিধাদির এলাকাভিত্তিক বৈষম্য প্রকট। একইসঙ্গে নগরের সকলের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন বাসযোগ্য নগরের অন্যতম মানদণ্ড, যা ইআইইউ সূচকে তেমনভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়না; ঢাকা এই বিবেচনায়ও প্রবলভাবে পিছিয়ে রয়েছে।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ?আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঢাকা অপরিকল্পিত সিটি। এখানে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস। ঢাকার রাস্তাঘাট, পানির লাইন ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা অপরিকল্পিত। আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা এতে নষ্ট হচ্ছে শহরের ভারসাম্য। যেখানে সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে শপিংমল ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এসব কারণে শহর বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে। এছাড়া ট্রাফিক ও পার্কিং ব্যবস্থা দুর্বল। আইন আছে বাস্তাবায়ন হচ্ছে না। এতে শহরের চলাচলের রাস্তায় চলে পার্কিং। রাজধানীতে ব্যাপকহারে চলছে নির্মাণকাজ। এতে দূষিত হচ্ছে বায়ু। আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ, ইটভাটা থেকে শুরু করে কোনোটাই নিয়ম মেনে করা হয় না। ঢাকা শহরের চারপাশে সাড়ে ৫ হাজার ইটভাটা আছে। যেগুলো থেকে নিঃসরিত হচ্ছে কার্বন। ঢাকার পাশে এসব ইটভাটা হলেও এর প্রভাব পড়ে সরাসরি রাজধানীর উপর। এতে রাজধানীবাসী নানা রোগে অসুস্থ হচ্ছেন। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হচ্ছে না। ঢাকার বাসযোগ্যতা হারানোর আরো অধিক কারণ করছে। যার ফলে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বসবাসের অনুপোযোগী শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

আন্দোলনের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ

প্রথম আলো | জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
১ সপ্তাহ, ৪ দিন আগে

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us