সাংগঠনিক বিরোধ মেটাচ্ছে আওয়ামী লীগ

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০

দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ মেটাচ্ছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। যেখানেই সাংগঠনিক বিরোধ দেখা যাচ্ছে সেখানেই হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্র। তলব করা হচ্ছে বিরোধে জড়িত নেতাদের। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতারা জানান, এ ধরনের বৈঠকের ফল হচ্ছে ইতিবাচক। স্থানীয়ভাবে বিরোধ মেটাতে যারা ব্যর্থ হচ্ছেন তাদেরকে ঢাকায় ডাকা হচ্ছে। বিরোধে জড়িতদের বক্তব্য শোনা হচ্ছে। তারপর মেটানো হচ্ছে বিরোধ। যারা কেন্দ্রের নির্দেশনা মানবেন না তাদের জন্য রয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তবে এ পর্যন্ত যে কয়টি জেলার নেতাদের সঙ্গে বসে বিরোধ মেটানো হয়েছে সেখানে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হয়নি। ভবিষ্যতে একই বিরোধ দেখা গেলে দল তখন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দল থেকে বহিষ্কারসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ময়মনসিংহ জেলার সাংগঠনিক বিরোধ মেটানো হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হচ্ছে। বিরোধ মেটানোর বৈঠককে দলের পক্ষ থেকে ‘বিদ্যমান সাংগঠনিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং করণীয় সম্পর্কিত এক বিশেষ মতবিনিময় সভা’- হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সর্বশেষ ১৭ই জুন বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের তলব করা হয় ঢাকায়। ওইদিন ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর ও মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। এর আগের দিন ভালুকা, ত্রিশাল ও নান্দাইল উপজেলা নেতাদের ডাকা হয়। সভায় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং দলীয় সংসদ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে আগামী সেপ্টেম্বর-২০২১ মাসের মধ্যে উল্লেখিত ৬টি উপজেলার সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে লক্ষ্যে বিদ্যমান সকল সাংগঠনিক সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরসনের জন্য সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সভায় উপস্থিত ময়মনসিংহ জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ময়মনসিংহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগসমূহকে সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সাংগঠনিক শাখায় পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ সময় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সকল সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ও নির্দেশানসূমহ ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। এর আগে ১৩ই জুন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ঢাকায় ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আলম এমপি, সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী এবং চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, সভায় উপস্থিত কক্সবাজার জেলা এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগকে একটি সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সাংগঠনিক শাখায় পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আলম এমপি ও উপস্থিত নেতৃবৃন্দ আসন্ন চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। এ সময় জাফর আলম এমপি সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার ব্যবহারের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়া সভায় মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিরোধ মেটাতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত দেন। এসবের মধ্যে ছিলো-চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে সংগঠনের সকল নেতা-কর্মী নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন ধরনের সকল কর্মকাণ্ড পরিহার করবেন। চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সকলেই দায়িত্ব নিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত করবেন। চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আলম এমপিসহ যাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করেছে, সেই আদেশ প্রত্যাহার হবে। এর আগে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। এতে চট্টগ্রামের তিনটি সংসদীয় আসনের উপজেলাগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে আলাদা তিনটি বৈঠক হয়। সকালে সাতকানিয়া ও লোহাগড়া উপজেলা, বিকাল ৩টার দিকে পটিয়া উপজেলা, বিকাল ৪টার দিকে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন- চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- দলকে শক্তিশালী করতে অন্যতম অন্তরায় এই বিরোধ। তাই ‘সংগঠনকে একেবারে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ শুরু করেছেন। শুধু দূরত্ব বা বিরোধ দূর করাই এই কার্যক্রমের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। সংগঠনের সর্বস্তরে চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনা ও শক্তিশালী করাও এর উদ্দেশ্য। দলের নেতারা বলেন, দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে সংগঠনের অভ্যন্তরে পরস্পর বিরোধী গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এরা দলের ক্ষতি করছে।  অধিকাংশ এলাকায় দেখা যায়, ব্যক্তি স্বার্থে দলাদলি।  প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিরোধ। এগুলো দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামা হয়েছে।  মূলত স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ। তাই দ্রুত বিরোধ দূর করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী নেতারা বলেন, দলাদলি ও বিরোধ জিইয়ে রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সুফল ঘরে তোলা কঠিন হবে। তাই যত দ্রুত  অভ্যন্তরীণ বিরোধ সামাল দেওয়া যাবে, দলের জন্য তা মঙ্গল হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে দলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।  এসব দিক আমলে নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনারও বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে নেতাদের প্রতি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us