সিলেটে স্ত্রী শিপা বেগমের পরকীয়ারই বলি হলেন এডভোকেট আনোয়ার হোসেন। স্বামীর মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় শিপার বিয়ে নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল পরিবারের। এ কারণে ভাই মনোয়ার হোসেন আদালতে করেছিলেন মামলা। আর এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে স্বামী হন্তারক শিপা নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন হত্যার ঘটনা। শিপা আদালতে স্বীকার করেছেন পরকীয়া প্রেমিক মাহির সঙ্গে পরিকল্পনা করেই ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যা করেছেন এডভোকেট আনোয়ার হোসেনকে। এরপর ‘ডায়াবেটিস নিল’ হয়ে আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করেন। পুলিশ জানিয়েছে, আইনজীবী হত্যায় শিপা সব স্বীকার করেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সে দায় স্বীকার করে। এরপর আদালতে গিয়েও একই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পরিকল্পনা করে তারা আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করেছে বলে শিপা জানিয়েছে। তবে এই হত্যার পেছনে শিপার পরিবারের কেউ জড়িত ছিল কিনা- সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় পরিবারের সিদ্ধান্তে মাহিকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন বলে শিপা জানিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মো. ইয়াছিন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আইনজীবী আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলা দায়েরের পর পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের আবেদন করা হয়েছিল। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামীকাল বুধবার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের অনুমতি দিয়েছেন। বুধবার বেলা ১১টায় কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে পলাতক থাকা প্রেমিক শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযানে রয়েছে। সিলেট জেলা বারের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন। বাড়ি সিলেটের শিবেরবাজারের দীঘিরপাড়ে। নগরীর তালতলায় রয়েছে তার নিজস্ব বাসা। দুই সন্তানের জনক এডভোকেট আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী শিপা বেগমের সঙ্গে ঘটনার তিন মাস আগে ফেসবুকে পরিচয় হয় কানাইঘাটের শাহজাহান চৌধুরী মাহি নামের এক যুবকের। এরপর থেকে মাহির সঙ্গে শিপার পরকীয়া চলতে থাকে। বিষয়টি আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জানার পর পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ৩০শে এপ্রিল সেহরির পর শিপা বেগম ১০টি ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করে। গ্রেপ্তারের পর শিপা বেগম প্রথমে পুলিশ এবং পরে আদালতকে জানিয়েছে, শাহজাহান চৌধুরী মাহির সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের সূত্রে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সে। আনোয়ার হোসেন কর্মস্থলে গেলে প্রেমিক মাহি এসে হাজির হতো তালতলাস্থ বাসার সামনে। শিপা বাসা থেকে বেরিয়ে মাহির সঙ্গে মোটরসাইকেলে চলে যেতো। ফিরতো বিকালে। বিষয়টি ধরা পড়েছিল আনোয়ার হোসেনের কাছেও। এ কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেন ও শিপা দু’জন একই বাসায় আলাদা ঘরে বসবাস করতো। ক্ষুব্ধ শিপা প্রেমিক মাহির সঙ্গে পরিকল্পনা করে গত ৩০শে এপ্রিল রাতে খাবারের সঙ্গে ১০টি ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে স্বামীকে হত্যা করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ৫ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল রোববার বিকাল ৩টার দিকে আদালতে তোলা হয় শিপা বেগমকে। মহানগর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া শেষ হয় সন্ধ্যায়। পরে শিপা বেগমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ১লা জুন সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবী আনোয়ার হোসেনকে হত্যার অভিযোগে মামলার আবেদন করেন নিহতের ভাই মনোয়ার হোসেন। পরে আদালতে শুনানি শেষে কোতোয়ালি থানার ওসিকে মামলা গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ মামলা গ্রহণ করে নগরীর তালতলাস্থ বাসা থেকে শিপা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার প্রেমিক মাহি। সে নগরীর উপশহরে বসবাস করতো বলে ইতিমধ্যে খবর পেয়েছে পুলিশ।