রিজভী বললেন, এ বড় কষ্টের

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০

এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং দপ্তরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)’র নির্বাচিত ভিপি রিজভী আহমেদ এক সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের সময় তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১/১১-তে বিএনপি যখন প্রায় নেতৃত্বহীন, সংস্কারপন্থিদের দ্বারা বিএনপি যখন ভেঙে যাওয়ার পথে এবং দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া যখন কারাবন্দি সে সময় নিয়মিত সরব থেকে তিনি দলের জন্য ভূমিকা রাখেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে থাকা রিজভী ১৯৮৪ সালে পেটে গুলিবিদ্ধ হন। অস্ত্রোপচার করা হলে তা থেকে তিনি ‘সাবেকিউট ইনটেস্টিনাল অবস্ট্রাকশন (কমন সার্জিক্যাল ইমারজেন্সি)’ সমস্যায় ভোগেন। চিকিৎসার জন্য তাকে এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। কিন্তু এরপর থেকে ‘২৪ ঘণ্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবে পরিচিত রিজভী আহমেদ মাঝে মধ্যে শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। করোনাকালের শুরুতে গত বছর এপ্রিলের শেষের দিকে রিজভী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৬শে এপ্রিল থেকে তার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা এবং বমি হতে থাকলে তিনি বাসায় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকছিলেন। তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিএনপি’র স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক (তখন স্বাস্থ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক) ডা. রফিকুল ইসলাম।এরপর পাঁচ/ছয় মাস মোটামুটি ভালোই যাচ্ছিল। বরাবরের মতোই সশরীরে উপস্থিত থেকে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয় সরগরম রেখেছিলেন রিজভী। কিন্তু ১৩ই অক্টোবর প্রেস ক্লাবে দলীয় একটি প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর দুপুরের দিকে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন রিজভী। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে কাকরাইলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর রিজভীকে দ্রুত ধানমণ্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। ১৫ই অক্টোবর তার হার্টের এনজিওগ্রাম করা হয়। তার হার্টে একটি ব্লক ধরা পড়লে ইনজেকশনের মাধ্যমে সেটির ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ অপসারণ করা হয়।১৯শে অক্টোবর বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্দেশনা দেয়া হয় বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি দপ্তরের দায়িত্বপালনরত রিজভী আহমেদ অসুস্থ হওয়ায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স কেন্দ্রীয় দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব সাময়িকভাবে (রিজভী সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত) পালন করবেন।এদিকে ১১ই নভেম্বর বিএসএমএমইউতে রিজভীর হার্টের এমপিআই টেস্ট করা হলে কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। পরবর্তী চিকিৎসা নিতে ১৬ই নভেম্বর তাকে আবার ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২০শে নভেম্বর রিজভীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘রিজভী আহমেদ অসুস্থ। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।’২১শে নভেম্বর ল্যাবএইড হাসপাতালে রিজভীর হৃদযন্ত্রে এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রিং পরানো হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ২৪শে নভেম্বর তিনি নিজ বাসায় ফেরেন।প্রায় দুই মাস পর ১০ই ডিসেম্বর সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান রিজভী। লাঠি হাতে খুব ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় নিজ দপ্তরে বসেন। কুশল বিনিময় করেন কার্যালয়ের কর্মীদের সঙ্গে। তাদের শারীরিক অবস্থা এবং পরিবারের খোঁজখবর নেন। হঠাৎ করেই তিনি কার্যালয়ে আসায় অফিস কর্মীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তাদের সঙ্গে অসুস্থতার দিনগুলোর স্মৃতি ভাগাভাগি করতে দেখা যায় রিজভীকে। সেসময় এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেছিলেন, এখন অফিসে আসার চেষ্টা করবো যদি শরীর এরকম ভালো থাকে।এরপর কেটে যায় বেশ কিছুদিন। কার্যালয়ে নিয়মিত হন রিজভী। বরাবরের মতোই অংশ নিচ্ছিলেন সভা-সমাবেশ, প্রতিবাদ মিছিলেও। ১৫ই মার্চ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক অনুষ্ঠানে রিজভী জানান, তিনি করোনার টিকা নেননি। রিজভী বলেন, ‘‘আমাকে অনেক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছেন আপনি টিকা নেবেন কিনা? আমি বলেছি, ন্যায়সঙ্গতভাবে আমি ‘যে টিকা’র বিরোধিতা করেছি, বাঁচি আর মরি ওই টিকা আমার শরীরে প্রবেশ করতে দেবো না। আমি আমার কথা রেখেছি।’’এর পরদিনই (১৬ই মার্চ) জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রিজভী। অবশ্য এর কয়েক দিন আগে থেকেই তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। ১৭ই মার্চ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কোভিড ইউনিটে তার চিকিৎসা চলছিল। ৩১শে মার্চ সকালে তার ডায়াবেটিস একেবারে কমে গিয়ে ‘হাইপো’ হয়ে যায়। ১লা এপ্রিল রিজভীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং অক্সিজেন লেভেল কমে যায়। বুকের সিটি স্ক্যানে নানা জটিলতা ধরা পড়লে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।এর মাঝে বেশ কয়েকবার রিজভীর করোনা টেস্ট করা হয়। ৮ই এপ্রিল জানা যায়, একে একে পঞ্চমবারের মতো তার করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। ডা. রফিক সে সময় জানান, রিজভীর জ্বর নেই, কাশিও কমেছে। তবে অক্সিজেন দিতে হয় মাঝে মধ্যে।করোনা আক্রান্ত হওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পর ১৭ই এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় রিজভীর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তখন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রিজভীকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। অবশ্য তখনো তাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল।আক্রান্ত হওয়ার প্রায় দুই মাস পর ৯ই মে করোনামুক্ত হয়ে রিজভী স্কয়ার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরেন। এ প্রসঙ্গে ডা. রফিক বলেছিলেন, ‘করোনামুক্ত হয়েছেন আগেই, তবে ‘পোস্ট কোভিড’ কিছু জটিলতার জন্য রিজভী ভাইকে হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়েছে। এখনো তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেননি। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে।”নিজের বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রিজভী আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, ‘ক্রমশ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তবে এখনো হাঁটাচলায় কিছুটা সমস্যা রয়ে গেছে।’তবে নিজের শারীরিক অবস্থার উন্নতির চেয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতাই তার একান্ত কাম্য বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘কামনা করি দেশে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা ফিরে আসবে। করোনাকালে দেশের সব মানুষ যেন সুস্থ থাকেন। বিশেষ করে গণতন্ত্রের প্রতীক, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেন সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন।’অনেকদিন দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন না, নেতাকর্মীদের সঙ্গেও আগের মতো দেখা হচ্ছে না- এসব মিস করছেন কিনা জানতে চাইলে রিজভীর জবাব, ‘আমরা যে একটি সাধারণ লক্ষ্য পূরণের জন্য আন্দোলন করছি- গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন সেটি এখনো অর্জিত হয়নি। সে দাবিতে কথা বলতে পারছি না, বিষয়টি কষ্টের।’ এ যে বড় কষ্টের।রিজভীর নিকটজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তিনি নিজ বাসাতেই অবস্থান করছেন। মাঝেমধ্যে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখাও হচ্ছে। ১৪ই মে ঈদুল ফিতরের দিন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অসুস্থ রিজভীকে দেখতে তার বাসভবনে যান। ১৬ই মে বিকালে তার বাসায় গিয়েছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, দলের স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল ইসলাম মাহবুব। ১৮ই মে রিজভীর বাসায় যান যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ২১শে মে তার বাসায় যান বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ শাহজাহান এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল। ২২শে মে রিজভীর বাসায় যান বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৭শে মে রিজভীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে তার বাসভবনে যান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত। পরদিন তার বাসভবনে যান বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন এবং জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান।রিজভীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেন সার্বক্ষণিক তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে থাকা বিএনপি’র স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রিজভী ভাই করোনামুক্ত হলেও  পোস্ট কোভিড জটিলতায় ভুগছেন। এগুলো হুট করেই ঠিক করা সম্ভব নয়। সাধারণত এসব সমস্যা থেকে ক্রমশ উন্নতি হয়।’‘তবে, এখন তার অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে না। বাসাতেই ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া তার চিকিৎসায় হাসপাতালে যেসব সুবিধার প্রয়োজন হতো, সেগুলো এখন বাসাতেই তার চিকিৎসায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দেয়া হচ্ছে’, ডা. রফিক যোগ করেন। করোনার টিকা নেয়ার ব্যাপারে রিজভী তার আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছেন বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।রিজভীর ব্যক্তিগত সহকারী আরিফুর রহমান তুষার মানবজমিনকে বলেন, ‘উনার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। তবে শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে। আগে কারও সাহায্য নিয়ে হাঁটাচলা করতে হলেও এখন তিনি নিজেই তা করতে পারছেন। আগে মুখের ঘা’র জন্য খাবার খেতে সমস্যা হলেও এখন তিনি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন।’
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us