সীমান্ত এলাকা থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগী আসছেন ঢাকায়। তারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ক’দিন ধরে ঢাকা বিভাগের রোগীর চাপ কমলেও এ জায়গা দখল করছে ঢাকার বাইরের করোনা রোগীরা। বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বড় অংশই ঢাকার বাইরের। ফেনী থেকে এসে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ফাতেমা বেগম (৬৫)। মো. আশিক আকবর জানান, শাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, জ্বর থাকায় গত ৬ই জুন চাঁদপুরের একটি হাসপাতালে তার মায়ের করোনা পরীক্ষা করানো হয়। ফলাফল পজিটিভ আসায় ঢাকায় নিয়ে আসি। গত ৭ই জুন পরিবারের সিদ্ধান্তে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আইসিইউতে ভর্তি আছেন। ফুসফুসের ৯০ শতাংশ ইনফেকটেড। শাসকষ্ট হচ্ছে। চাঁদপুর থেকে এসেছেন সেকেন্দার আলী (৬২)। তিনি আইসিইউতে ভর্তি। ছেলে সাহাদাত আলী জানান, বাবার কোনো ধরনের উপসর্গ ছিল না। কিন্তু শরীর দুর্বল থাকায় সোমবার করোনা পরীক্ষা করানো হয়। ফলাফল পজিটিভ আসে। একদিন পরে হালকা শাসকষ্ট দেখা যায়। প্রথমে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে রেফার করে ডেডিকেটেড হাসপাতালে। এখানে বুধবার আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। হালকা শাসকষ্ট ছাড়া তার শরীরে আর কোনো ধরনের জটিলতা নেই। সাব্বির হাসান জানান, তার দাদি আয়েশা বিবি (১০০) গত পাঁচদিন ধরে এই হাসপাতালে ভর্তি। ঢাকার উত্তরা থেকে এসেছেন। তিনি নরমাল বেডে আছেন। মাঝে-মধ্যে কাশি ছাড়া তার আর কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন মানবজমিনকে জানান, আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত ১০ থেকে ১২ দিনে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে এখন মোট ৮০ জন রোগী ভর্তি আছেন। আট থেকে ১০ দিন আগে রোগীর সংখ্যা ৬০-এ নেমে গিয়েছিল। এখন প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মধ্যে কেউ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ মারা যাচ্ছেন। বাইরের জেলাগুলো থেকে বিপুল রোগী আসছে। এই রোগীগুলো বেশির ভাগই সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসছেন। যেমন, খুলনা, বাগেরহাট, ফেনী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য এলাকার। এদের অনেকেই খুব সিরিয়াস রোগী। আমরা তাদের অন্য কোথাও চিকিৎসার জন্য পাঠাচ্ছি না। যেহেতু আমাদের পর্যাপ্ত সুযোগ আছে। এখানে মুমূর্ষু রোগী এলে আমরা তাদের সবাইকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করছি। আমাদের হাসপাতালে নয়টি আইসিইউ জোন আছে যেখানে প্রায় ২শ’র মতো রোগী ভর্তি করা যাবে। এখন আইসিইউতে মোট ভর্তি আছে ৫২ জন। বাকিরা সবাই এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট)।তিনি আরও জানান, একমাস আগে এখানে নতুন ভ্যারিয়েন্টের দুইজন রোগী এসেছিলেন। তাদের ১৭ দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। সুস্থ করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের। যারা আইসিইউতে ভর্তি তাদের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়জন আছেন ঢাকার বাইরের। বর্তমানে আনুমানিক ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগীই ঢাকার বাইরের। ঢাকার রোগী খুবই কম। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে যারা আসছেন তাদের জন্য আমাদের আইসিইউ’র আলাদা একটা জোন রাখা আছে। তাদের আলাদা জোনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, গত এপ্রিলে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকে করোনা রোগীর অনেক চাপ ছিল। যারা অনেক বেশি সিরিয়াস তাদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল। তখন তাদের খুব বেশি সুবিধা দিতে পারিনি। শুরু থেকেই আমাদের একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই সময় দ্রুততার সঙ্গে আমরা আইসিইউ হাসপাতাল চালু করেছি। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করেই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করেছিলাম। ওই সময় রোগী প্রতিদিনই বাড়ছিল। তা প্রায় দুশ’র কাছাকাছি। এগুলো সবই কিন্তু আইসিইউ এবং এইচডিইউ সাপোর্ট। এরপর ধীরে ধীরে রোগী কমতে থাকে। এবং সেটা তখন দেশব্যাপীই কমেছে। কিন্তু বর্তমানে রোগীর সংখ্যা আবার বেড়ে চলছে। এই বাড়তি রোগীর জন্য পর্যাপ্ত নরমাল বেড এবং আইসিইউ’র ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে রোগীর সংখ্য অতিরিক্ত বেড়ে গেলে জনবল বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। এখানে আইসিইউ সুবিধাসহ ২১২টি শয্যা, ১১২টি আইসিইউ এবং ১০০টি এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট), বিশেষ সুবিধাসহ ২৫০টি শয্যা রয়েছে।