তরুপল্লবের স্বপ্নযাত্রা

মানবজমিন প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২১, ০০:০০

শীতের সকাল। ঘনকুয়াশায় মোড়ানো সকালের রাজধানী। যাচ্ছি রমনা বটমূলে। পথেই মুঠোফোন বেজে ওঠে। অচেনা নাম্বার। ঘড়ির দিকে তাকাই, নয়টা বাজতে বিশ মিনিট বাকি। ফোন রিসিভ করি। ‘আজ কি তরুপল্লবের গাছ চেনানোর অনুষ্ঠান হবে? আমরা কয়েকজন চলে এসেছি।’ বললাম, আমরাও প্রায় চলে এসেছি। একটু অপেক্ষা করুন। দেখতে দেখতে শতাধিক প্রকৃতিপ্রেমী এসে জড়ো হলেন রমনা বটমূলে। প্রথমেই এলেন কথাসাহিত্যিক ও নিসর্গী বিপ্রদাশ বড়ুয়া এবং পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান। তারপর বৃক্ষসখা অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। এঁরা এসেছেন গাছ ও পাখি চেনাতে। মূল কার্যক্রম শুরুর আগে সবাই বৃত্তাকার হয়ে দাঁড়ালেন। শুরুতেই অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা স্মরণ করলেন প্রয়াত নিসর্গী ড. নওয়াজেশ আহমদকে। তিনি তরুপল্লবের প্রথম অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। এরপর তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো তরুপল্লবের তৃতীয় গাছ চেনানোর অনুষ্ঠান। মূলত রমনা পার্ককে কয়েকটি অংশে ভাগ করে গাছ চেনানো শুরু হয় ২০০৮ সালের ৫ই ডিসেম্বর থেকে। বটমূল থেকে বৃক্ষপ্রেমীরা দলবদ্ধভাবে এগিয়ে গেলেন রমনার নির্ধারিত গাছপালার দিকে। এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। মিছিলের অগ্রভাগে প্রকৃতির কয়েকজন নির্মোহ ভালোবাসার মানুষ, তাঁদের পেছনে বর্তমান প্রজন্ম। একেকজন একেক বয়সী, পরস্পর অচেনা, পেশায়ও আলাদা। কিন্তু সবার উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। তরুপল্লব মূলত বৃক্ষপ্রেমীদের সংগঠন। সংগঠনটির অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম হলো উৎসাহী মানুষদের গাছ চেনানো। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে তরুপল্লব অনানুষ্ঠানিকভাবে আরো বেশকিছু গাছ চেনানোর অনুষ্ঠান করেছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকায়, পরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও পর্যায়ক্রমে এধরনের আয়োজন বিস্তৃত করেছে সংগঠনটি। ইতিমধ্যেই ঢাকার বাইরে কয়েকটি গাছ চেনানোর অনুষ্ঠানও করেছে তরুপল্লব। শুধুমাত্র ই-মেইল, ফোন, এসএমএস ও পত্রিকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গাছ চেনার আহ্বান জানানো হয় সবাইকে। তাতেই বিপুল সাড়া মেলে। গাছ চেনানোর সুবিধার্থে পার্কটিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা হয় একটি ছোট্ট নির্দেশিকা। নির্দেশিকায় বর্ণিত গাছগুলোই মূলত উপস্থিত সবাইকে চিনিয়ে দেয়া হয়। কালভার্ট পেরিয়ে সবাই এসে জড়ো হলো অঞ্জন গাছের নিচে। একজন সদস্য হাত মাইকটি এগিয়ে ধরলেন। গাছের পরিচিতি বর্ণনা শুরু করলেন বিপ্রদাশ বড়ুয়া। তারপর মিছিলটি গিয়ে দাঁড়ালো আরেকটি গাছের নিচে। কাছেই ছিল রুদ্রপলাশ। এই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে অনেক কথা হলো। ততক্ষণে চারপাশের কুয়াশা কমেছে। দ্বিজেন শর্মা এবার সবাইকে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করান। ‘এই হচ্ছে প্রকৃত মাধবী। আপনারা এতদিন যাকে মাধবী ভেবেছেন তা মাধবী নয়, মধুমালতী।’ উপস্থিত সকলেই দুষপ্রাপ্য মাধবী চিনলো বেশ আগ্রহ নিয়ে। তরুপল্লবের ছোট্ট নির্দেশিকায় যে ত্রিশটি গাছ চেনানোর কথা, ধীরে ধীরে সবগুলো গাছই চিনিয়ে দেয়া হলো সেদিন। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ দিকে তরুপ্রেমিকদের দলটি চললো রমনার শতোর্ধ্ববর্ষী আদি মহুয়ার সন্ধানে। গাছটির অবস্থান পার্কের প্রায় মধ্যিখানে। ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা বারটায় গড়ালো। সবুজ পৃথিবীর ডাকে যারা এসেছিলো তাদের দীর্ঘ মিছিল একটি নান্দনিক বৃক্ষের তলায় থামলো। বৃক্ষটির নাম বিলেতি গাব। উপস্থিত সবাইকে গাছটি চিনিয়ে দেয়া হলো। অবশেষে তরুপল্লবের সাংগঠনিক সম্পাদক ইংরেজির অধ্যাপক দেবাশিষ বিশ্বাস গেয়ে শোনালেন ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ গানটি। তারপর উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ হলো অনুষ্ঠান। তরুপল্লবের মুখপত্র হিসেবে প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক সাময়িকী প্রকৃতিপত্র প্রতি তিনমাস পরপর নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রকৃতিপত্রের ২৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।     দেশে যেসব গাছ বিপন্ন এবং দুর্লভ, তরুপল্লব সেসব গাছ সংগ্রহ করে নিরাপদ স্থানে রোপণের ব্যবস্থা করে থাকে। এ ছাড়া সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে এ পর্যন্ত গাজীপুর জেলার পুবাইল খিলগাঁও মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, গাজীপুর আরণ্যক, শেরপুর জেলা প্রশাসন চত্বর, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এবং রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় বৃক্ষরোপণ করেছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চ্যানেল আই-প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন বিশেষ সম্মাননা পেয়েছে তরুপল্লব। ৩১শে জানুয়ারি ২০১৫, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত প্রকৃতি মেলায় এ সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তরুপল্লবের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য বিপ্রদাশ বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেনের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us