বুধবার ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা তিনটার কাছাকাছি। আকাশে জমাট কালো মেঘ আর ঝুম বৃষ্টির মধ্যে দমকা হাওয়ায় গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। প্রমত্তা পশুর নদে সবে ভাটার টান শুরু হয়েছে। পাড় থেকে আস্তে আস্তে পানি নামার সঙ্গে ঢেউগুলো আরও জোরালোভাবে আছড়ে পড়ছে পাড়েই। সরু পায়ে চলার রাস্তাটা ভেঙে আরও সরু হচ্ছে। রাস্তার পাশের ছোট্ট ঘরের মধ্যে প্রায় বিছানাসমান জোয়ারের লোনাপানি নামার অপেক্ষায় আবদুল খালেক। খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের সুন্দরবনসংলগ্ন পূর্ব ঢাংমারী গ্রামে খালেকের বসতি।
খালেক বলেন, ‘আমাগো দেখার কেউ নি। মূল বাঁধের বাইরি পইড়ে আছি। জোয়ারে পানি খুব বেশি হচ্ছে। সঙ্গে ভীষণ বাতাস আর তুফান। রাতে চোখে চোখ দিইনি। আর দুপুরে জোয়ারে ঘরে অনেক পানি উঠে গেছে। রাতের জোয়ারে কী হবে, জানি না। চিন্তার শ্যাষ নি।’
গ্রামের আবদুর সেলিমের কথায়, ‘পানিতে ডুবি আর ভাসি, এটাই তো আমাদের জীবন। জল আর জঙ্গলের পর আমাদের পেট চলে। এখানকার মাটিও ভালো না, এমনিই ধসে পড়ে। আর ঝড়–তুফান হলে কিছু তো বলার থাকে না। সরকার আমাদের নাকি কিছু খাসজমি দেবে। এ রকম আলোচনা মাঝেমধ্যে শুনি। জানি না, কোনো দিন আমাদের নিরাপদ একটা ঘর হবে কি না।’