স্বামীর ড্রয়িং রুমে ফারজানা চৌধুরী

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২১, ০০:০০

স্বামীর মৃত্যুর পর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন ফারজানা চৌধুরী। এমন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। সিলেট-৩ আসনের উন্নয়ন, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক, নিজেদের ব্যবসা, পরিবার দেখভাল করছিলেন স্বামী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। কোনো কিছুতেই নজর দিতে হয়নি তার। কিন্তু হঠাৎ উড়ে এলো কালবৈশাখী ঝড়। সেই ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল সবকিছু। মহামারি করোনায় মারা গেলেন প্রিয় স্বামী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন ফারজানা চৌধুরী। শোকে হয়ে পড়েছিলেন কাতর। এখনো সেই শোক তাড়া করে ফিরছে তাকে। কিন্তু শোকের মধ্যেও দায়িত্ব এসে পড়েছে ফারজানা চৌধুরীর কাঁধে। হঠাৎ করে স্বামীর মৃত্যু তাকে দায়িত্বশীল করে তুলেছে। সবকিছু সামলাতে হচ্ছে তাকেই। বিশেষ করে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া সিলেট-৩ আসনের নেতাকর্মীদের দিতে হচ্ছে সান্ত্বনা। দাঁড়াতে হচ্ছে পাশে। এমপি’র স্ত্রী হিসেবে  নেতাকর্মীদের সুখে, দুঃখে নজর দিতে হচ্ছে। সিলেট-৩ আসনের প্রয়াত এমপি ছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তার মৃত্যুর পর সিলেট-৩ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এখন সেখানে উপনির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। করোনার কারণে পিছিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে এ আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি এ আসনে নির্বাচনে প্রার্থী হতে নেতাদের তোড়জোড়ের অন্ত নেই। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে এক ডজনের উপরে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এলাকায় সরব হয়েছেন। গত দুই মাস ধরে গোটা এলাকায় নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে। কোনো কোনো প্রার্থী নিজেদের ছবি ও নৌকা প্রতীক দিয়ে পোস্টার বানিয়ে ভোটের মাঠে সরব হয়েছেন। গোটা নির্বাচনী আসন চষে বেড়াচ্ছেন তারা। করছেন মতবিনিময়ও। এবারের ঈদে এলাকায় সরব ছিলেন প্রার্থীরা। দু’সপ্তাহ আগেই সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী। জানিয়েছিলেন, দলীয় সভানেত্রী, এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণ চাইলে তিনি প্রার্থী হবেন। স্বামীর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তিনি কাজ করতে চান। তার এই ঘোষণা সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে নতুন করে সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শোক ভুলে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। তারাও আসন্ন উপনির্বাচনে মাঠে নামার প্রস্তুতি শুরু করেন। স্বামীর ব্যবসা- বাণিজ্য দেখাশোনা সহ নানা কাজে ঢাকার বাসায়ই বসবাস করতে হচ্ছে ফারজানা চৌধুরীকে। স্বামীর মৃত্যুর পর এখন ঘন ঘন আসতে শুরু করেছেন নিজ বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের নুরপুর গ্রামে। তিনিও এখন বেশি সময় গ্রামের বাড়িতে থাকতে পছন্দ করেন। স্বামী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসকে সমাহিত করা হয়েছে বাড়ির পাশের মসজিদের উঠোনে। এবারের ঈদের আগে ২৭শে রমজান ঢাকা থেকে বাড়ি ছুটে আসেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এবারের বাড়ি আসা ছিল তার জন্য ভিন্ন। ঈদের আগে থেকেই সিলেট-৩ আসনের মানুষজন, দলীয় নেতাকর্মী তার কাছে ছুটে যাচ্ছেন। তবে এবার আর কাউকে বিমুখ করেননি ফারজানা চৌধুরী। স্বামীর অনুপস্থিতি বোঝাতে দেননি কাউকে। যারাই তার বাড়িতে গিয়েছেন সবার সঙ্গে ঈদে দেখা করেছেন। যেভাবে স্বামী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী সবার সঙ্গে মিশতেন, সুখে-দুঃখে তাদের কথা শুনতেন এবারও তিনি তাই করেছেন। ঈদে সরব হয়ে উঠেছিলো মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সেই চিরচেনা ড্রয়িং রুম। স্বামীর চেয়ারে বসলেন ফারজানা চৌধুরী। শুধু দেখা সাক্ষাৎই নয়, কারো কোনো অসুবিধা হলে সেটিও শুনেছেন। যতটুকু পেরেছেন সান্ত্বনা দিয়ে বিদায় করে দিয়েছেন। স্বামী যেভাবে আপ্যায়ন করতেন সেভাবে তিনিও সবাইকে আপ্যায়ন করিয়েছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সিলেটের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়নপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান, ফেঞ্জুগঞ্জের উপজেলা নির্বাচনের নৌকার সাবেক প্রার্থী ও সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন সহ অনেকেই। ফারজানা চৌধুরী তাদের সঙ্গেও দেখা করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ফারজানা চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ধ্যানে-জ্ঞানে ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এ কারণে তার মৃত্যুর পর শোকে কাতর হয়ে পড়েন সবাই। এলাকার মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা এখন অভিভাবকহীন। তাদের কারণেই আমি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর অভাব পূরণে কাজ শুরু করেছি। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে তিনি সিলেট-৩ আসনের মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে আগামী উপনির্বাচনে প্রার্থী হবেন।’ তিনি জানান- ‘এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে মন থেকে ভালোবাসে। তার মৃত্যুর পর সেটি বোঝা গেছে। এসব মানুষের কাছে থাকা, তাদের সঙ্গে সুখ, দুঃখের ভাগিদার হওয়া সৌভাগ্যর বিষয়। এ কারণে এবারের ঈদে তাদের প্রিয় নেতার ড্রয়িং রুম সবার জন্য ছিল উন্মুক্ত। আগামীতেও এভাবেই উন্মুক্ত থাকবে।’ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সাবেক পিএস জুলহাস আহমদ জানিয়েছেন, ঈদে প্রয়াত এমপি’র স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তিন থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা  দেখা করতে এসেছিলেন। এর বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এসেছিলেন। সবার সঙ্গে ফারজানা চৌধুরী দেখা করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন জানিয়েছেন- গতকাল তিনি ফারজানা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এ সময় তিনি ফারজানা চৌধুরীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে তিনিও এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকাহত বলে জানান।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us