মানুষের ফিরতি স্রোত, কে শোনে কার কথা

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২১, ০০:০০

পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন শেষে এবার ঢাকায় ফেরার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যানবাহনের সংকট আর তীব্র গরমের মধ্যে গাদাগাদি করেই ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর যাতায়াতে ভোগান্তির মধ্যেই মানুষের ফিরতি স্রোত। এতে রক্ষা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। কোথাও মানা হয়নি সামাজিক কিংবা শারীরিক দূরত্ব। সড়ক-মহাসড়ক ও ফেরি ঘাটে দেখা দিয়েছে ঢাকামুখী মানুষের ঢল। তবে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কোথাও কোথাও চলেছে দূরপাল্লার বাসও। দেশে চলমান কঠোর লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি পালনে সরকার বিধি-নিষেধ জারি করলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ভাড়ায় চালিত  মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, পিকআপ, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনে গাদাগাদি করেই ঢাকায় ফিরছেন মানুষ। এসব যানবাহনে সিট নিয়ে চলছে যাত্রীদের প্রতিযোগিতা। কার আগে কে উঠবেন তা নিয়ে রীতিমতো চলেছে ঠেলাঠেলি। এসব স্থানে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি দেখা যায়নি। অধিকাংশ মানুষ যাতায়াত করছেন মাস্ক ছাড়াই। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হলেও সাধারণ মানুষ তা ভ্রূক্ষেপ করছেন না। এতে যে কোনো সময়, যে কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। এদিকে গতকাল বর্ধিত লকডাউনের প্রথম দিনেও স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে ঢাকায় ফিরছেন হাজার হাজার মানুষ। ফেরিঘাট ও সড়ক পথে বেড়েছে যানবাহন ও মানুষের চাপ। রাজধানীর গাবতলী ও আব্দুল্লাহপুরসহ প্রবেশ পথগুলোতে ভোর থেকেই ভিড় দেখা গেছে। অনেকে দূরপাল্লার গণপরিবহন না পেয়ে ভেঙে ভেঙে তিন থেকে চার গুণ বাড়তি ভাড়ায় ঢাকায় পৌঁছেছেন। স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে প্রতিটি ফেরিতে গাদাগাদি করে মানুষজন আসছেন পাটুরিয়া ঘাটে। স্বাস্থ্যবিধির কোনো ধরনের তোয়াক্কা করছে না মানুষজন।  ঘাটে এসেই তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন পরিবহনের জন্য। গণপরিবহর বন্ধ থাকলেও পাটুরিয়া থেকে গাবতলী পর্যন্ত সেলফি, নীলাচল, যাত্রীসেবা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহনযোগে যাত্রীরা যাচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। আর এই যাওয়ার পথে তাদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা ফিরতে গিয়ে তাদের ভোগান্তির মাত্রা অনেক বেশি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ঢাকায় যেতে জনপ্রতি ৫শ’ থেকে হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। বাসচালক ও শ্রমিকরা ভাড়া নিয়ে এ রকম নৈরাজ্য চালালেও দেখার কেউ নেই। এছাড়া বাসে এক সিটে একজন বসার নিয়ম থাকলেও সেটাও মানছে না পরিবহন শ্রমিকরা। প্রতিটি বাসে গাদাগাদি করেই যাত্রী নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসকে বলা হলেও সেবসব গাড়ি এখন ভাড়ায় চলছে। প্রতিটি প্রাইভেটকারে ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী এবং মাইক্রোবাসে কমপক্ষে ১৫ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। এসব গাড়িতে যারা যাতায়াত করছেন তাদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি। ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ক্রমেই ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। লকডাউন বিধি অমান্য করে মহাসড়কে চলছে দূরপাল্লার বাসও। সকাল থেকেই প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। তবে গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। মহাসড়কে স্বাভাবিক গতিতেই গাড়ি চলাচল করছে। সোমবার কোথাও কোথাও যানবাহনের দীর্ঘ সারি লক্ষ্য করা গেছে। বাস টার্মিনালগুলোতে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। সড়কের গোড়াই, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল বাইপাস, রাবনা বাইপাস, এলেঙ্গা ও বঙ্গবন্ধু সেতু-পূর্ব পাড়ে যাত্রীদের জটলা দেখা যায়। কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। আগের মতোই গাদাগাদি করে কর্মস্থলে ফিরছেন তারা। গাজীপুর পরিবহনের বাসচালক মাহিম মানবজমিনকে বলেন, সকালে গাজীপুরের যাত্রী নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসেছি। সরকারিভাবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হলেও পয়সার জন্যই বাস চালাতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোথাও বাধার সম্মুখীন হইনি। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাস এলেও তাদের ছেড়ে আসা স্থানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে ।এদিকে মাগুরা প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুরে মাগুরা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ। সীমিত পরিসরে চলছে সিএনজি ও মাইক্রোবাস। ঢাকাগামী যাত্রীদের নিয়ে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত যাচ্ছে সিএনজি। আর মাইক্রোবাস যাচ্ছে গাবতলী-আমিন বাজার পর্যন্ত যাচ্ছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। প্রশাসনের নজরদারি তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। ঢাকাগামী যাত্রী শরিফুল জানান, ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলাম। আমি ঢাকায় একটি কারখানার শ্রমিক। ঈদে ভেঙে ভেঙে অনেক কষ্ট করে আসতে হয়েছে। আবার যাচ্ছি অনেক কষ্ট করে। এখন মাগুরা থেকে সিএনজি ভাড়া খুবই বেশি। জনপ্রতি ঘাট পর্যন্ত ৩৫০-৪০০ টাকা নিচ্ছে নিচ্ছে। যা আমাদের মতো মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর। ঢাকার গার্মেন্টকর্মী রাশিদা বেগম জানান, মা-বাবাকে দেখতে শুধু ঈদে বাড়িতে এসেছি। ঢাকায় সামান্য বেতনে গার্মেন্টকর্মী হিসেবে কাজ করি। পূর্বে  যেখানে আমাদের ঢাকা আসা-যাওয়া করতে ১ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে যেতো কিন্তু এখন ঢাকা পৌঁছাতে লাগছে ৪ হাজার টাকা তাহলে আমরা বাঁচবো কি করে। ঢাকাগামী অন্যান্য যাত্রীদের অভিযোগ, সুযোগ বুঝে কিছু অসাধু সিএনজি ও মাইক্রোবাস চালক আমাদের কাছ থেকে অধিক ভাড়া আদায় করছে। এখানে যদি প্রশাসন থেকে নজরদারি থাকতো তাহলে ভালো হতো।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us