টিকার দ্বিতীয় ডোজ জট খুলছে না সহসাই

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২১, ০০:০০

টিকা সংকটের কারণে প্রায় ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া নিয়ে জটিলতা কাটছে না সহসা। কোন উৎস থেকে এই টিকা আসবে- তা এখনো নিশ্চিত নয়। আগামী এক মাসের মধ্যে এই টিকার সংস্থান হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো উৎসই এই টিকা দেয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়নি। তিন মাসের মধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যাবে এমনটা বলা হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফে। তবে এই সময় পেরিয়ে গেলে করণীয় কী হবে। এ নিয়ে এখনও কোনো বিস্তর গবেষণা নেই। এ কারণে টিকার প্রথম ডোজ নেয়া ১৪ লাখ মানুষ উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেই এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। টিকা বিতরণ পৌনে ৯৬ লাখ ডোজ: দেশে ২৮তম দিনে গতকাল টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৫৬ হাজার ৯৪০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে নিয়েছেন ১২ হাজার ৬৬৪ জন। এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার ২৩ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় মিলে টিকা দেয়া হয়েছে ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৫ ডোজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিতরণ করা টিকা বাদ দিলে হাতে মজুত আছে মাত্র ৬ লাখ ২৩ হাজার ৬৫ ডোজ। ঘাটতি টিকার পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৪ ডোজ। অন্যদিকে এ পর্যন্ত দেশে মোট প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৯৭৯ জন এবং নারী ২২ লাখ ১০ হাজার ৯৩৩ জন। টিকা নেয়ার পর সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ১০০১ জনের। অন্যদিকে অনলাইনে নিবন্ধনও ২রা মে’র পর থেকে বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত: স্বাস্থ্যমন্ত্রীটিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সরকার খুবই চিন্তিত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় ডোজের বিষয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ করছেন। আমাদের তো তিন কোটি ডোজের অর্ডার আছে। তারা এ পর্যন্ত আমাদের ৭০ লাখ ডোজ দিয়েছে। এ ছাড়া টিকার বিষয়ে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কিছু অগ্রগতিও আছে। উৎপাদনের চেয়ে টিকা কেনার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, টিকা উৎপাদন সময় সাপেক্ষে। তবে, টিকা উৎপাদনের বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। তাই টিকা উৎপাদনের বিষয়ে যাদের সক্ষমতা আছে, তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমোদন দেয়া অনেক বড় সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনো ভ্যাকসিন ব্যবহার বা তৈরি করতে হলে আমাদের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগে এবং সরকারেরও অনুমোদন লাগে। ঔষধ প্রশাসনে আবেদন করলে তারা যাচাই-বাছাই করে। আমরা যেহেতু নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভ্যাকসিন ক্রয় করবো; আবার যদি সঠিক প্রস্তাব আসে তাহলে দেশে উৎপাদন করবো। উৎপাদন করতে হলে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা যাদের আছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। অনেকেই এগিয়ে আসছে। তাদের বিষয়গুলো ঔষধ প্রশাসন দেখছে। দেখে আমাদের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাবে এবং তারপর সিদ্ধান্ত হবে। এখনও তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ আরো বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের দূরপাল্লার বাস-ট্রেন-লঞ্চ বন্ধ আছে। আমরা মনে করি, এটা আরো কিছুদিন বন্ধ রাখা দরকার। জেলার ভেতরে চলাচলটা রেখেছি। আমরা প্রস্তাব করবো, যেন এই দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ রাখা হয়। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন যাতে দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব রাখেন তিনি। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট খুবই অ্যাগ্রেসিভ। আমাদের দেশে কিছু পাওয়া গেছে। আমরা ট্রেস করেছি। খুব বেশি ছড়ায়নি। সীমান্ত বন্ধ রাখার মতো সঠিক উদ্যোগ নেয়ার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। লকডাউনের মধ্যে ঈদযাত্রার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম নাড়ির টানে বাড়ি যাচ্ছেন, যান। কিন্তু, দেখবেন নাড়ি যেন ছিঁড়ে না যায়। অনেকে ফেরিতে গাদাগাদি করে বাড়ি গেছেন। আমরা সেটা চাইনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, এবারের ঈদে যারা গাদাগাদি করে বাড়ি গেছেন, তাদের বেশির ভাগ যুবক বয়সী। তার মন্তব্য, বেশি সংক্রমিত হলেও এদের মৃত্যুর হার কম। এ ছাড়া, ঈদের কেনাকাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দোকানপাটে অনেক ভিড় ছিল। অর্থনৈতিক কারণে এটা প্রয়োজন। তবে, এবার মাস্ক পরার হার আগের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।প্রসঙ্গত, গত ২৭শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে গণ টিকাদান শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে। আর দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয় ৮ই এপ্রিল থেকে। দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা এবং উপহার পাওয়া মিলে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ। এছাড়া এ মাসের ১২ তারিখে চীনের কাছ থেকে উপহার পাওয়া টিকার পরিমাণ ৫ লাখ ডোজ। যা এখনো প্রয়োগ শুরু হয়নি। চীনের দেয়া এই টিকা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রয়োগ শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us