নন্দিত মতিহারের নিন্দিত এক উপাচার্য

বাংলাদেশ প্রতিদিন পীর হাবিবুর রহমান প্রকাশিত: ১২ মে ২০২১, ০০:০০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান তাঁর মেয়াদের শেষ দিন নির্লজ্জ স্বেচ্ছাচারীভাবে সব নিয়মনীতি চোখের পর্দা বিবেক বোধকে কবর দিয়ে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে দেশজুড়ে এখন সমালোচিত, নিন্দিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশই তিনি অমান্য করেননি, এমন নিয়োগ বাণিজ্যের বাজিকর বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে ১৪১ জনকে নিয়োগদান পত্রে সই করতে অস্বীকার করায় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালামকে অব্যাহতি দিয়ে একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেন। অধ্যাপক আবদুস সোবহান তাঁর এ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এর ক্ষমতাকেই সামনে এনেছেন এবং এজন্য তাঁর বাসভবনে হামলা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগ স্থগিত এবং তদন্ত কমিটি গঠন করলেও গায়ে মাখেননি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, তাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিয়োগ বাণিজ্যের বিতর্ক অতীতে কখনো হয়নি। আজকাল অনেক বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এবং প্রশাসন নিয়ে নানা অভিযোগ, অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী কর্মকান্ডসহ ব্যর্থতার কাহিনি বারবার উঠে এলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী ভিসি অধ্যাপক আবদুস সোবহানের মতো জঘন্য কাজ কোথাও ঘটেনি। দায়িত্ব পালনের শেষ দিনই নয়, এর আগেও তিনি সিন্ডিকেটকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে তাঁর ছেলে, মেয়ে এবং মেয়েজামাইকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানিয়েছেন। অধ্যাপক আবদুস সোবহানের বিতর্কিত কর্মকান্ড দীর্ঘদিন থেকে তাঁকে সমালোচনার নরকের দরজায় নিয়ে গেলেও তিনি কখনো গায়ে মাখেননি। এখন রীতিমতো নরকের আগুনের তাপেও তাঁর মধ্যে কোনো অনুতাপ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলতেই সমাজের সবার শ্রদ্ধা-সম্মানের আলোয় বাস করা আদর্শ মানুষ বোঝায়। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে সেখানে যে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তা ছড়িয়েছে আজ সবখানে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলতে একজন প্রখর ব্যক্তিত্বশীল দক্ষ আদর্শ শিক্ষক নেতাকে বোঝায়। যিনি সব নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সততার সঙ্গে পরিচালনার নজির স্থাপন করেন। কিন্তু আজকে চারদিকে তাকালে দেখা যায় চরম দলবাজিতে ডুবন্ত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে উঠে আসেন আর ক্যাম্পাসের ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন। মনে হয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কি একজন নীতিমান আদর্শিক প্রখর ব্যক্তিত্বের শিক্ষক নেই যে, তাঁকে উপাচার্যের দায়িত্ব দিলে তিনি মেধা যোগ্যতা দক্ষতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন সুনামের সঙ্গে? তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মেধা মননশীলতার বিকাশই ঘটাবেন না অনন্যসাধারণ ভূমিকা রাখবেন গবেষণায়? সব নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে মেধাবী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে রাখবেন ভূমিকা? আছেন। অবশ্যই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন জ্ঞানের আলোয় নেতৃত্বের গুণাবলি ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে দক্ষ শিক্ষক। কিন্তু তাঁরা দুয়ারে দুয়ারে উপাচার্য পদের জন্য ভিখিরির মতো ঘোরেন না। কত বড় দলবাজ- এ অন্ধ আনুগত্য প্রমাণে মরিয়া হন না। তাঁরা আসলে থাকেন, তাঁদের খুঁজে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয় না। অধ্যাপক আবদুস সোবহানকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার আগে যদি বিবেচনা করা হতো তাহলে আজ দেশের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় বিদ্যাপীঠ একজন ভিসির জন্য কলঙ্কিত হতো না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একরকম বিব্রতকর বিতর্কে পড়তে হতো না। এমনকি করোনাকালেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তাকে ছুটে যেতে হতো না। যাদের নিয়োগ দিতে গিয়ে একটা অস্থিরতা, বিতর্ক এবং যাদের নিয়োগ আজ স্থগিত হয়েছে তাদেরও লজ্জায় পড়তে হতো না। ভিসি অধ্যাপক আবদুস সোবহান ’৭৩-এর অধ্যাদেশেপ্রাপ্ত তাঁর ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে অনুসরণ করতে। রাবি ভিসি তা লঙ্ঘন করেছেন দলবাজির মুখোশে নিজের নির্লজ্জ নিয়োগ বাণিজ্যের মুনাফা লুটতে। ভিসি আবদুস সোবহান হেফাজত নেতা মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা নিয়েছেন মানবিকতার। কতটা লাজলজ্জা না থাকলে বলেন, ‘মানবিক কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের চাকরি দিয়েছি। তারা আওয়ামী পরিবারের সন্তান।’ আসলে তিনি ছাত্রলীগ রাজনীতি করে আসা ২৫ জনকে চাকরি দিয়েছেন। আড়ালে তাঁর ঘনিষ্ঠ নাপিত ও ব্যক্তিগত ফার্নিচার তৈরির মিস্ত্রিকেও নিয়োগ দিয়েছেন। একজন উপাচার্য নামতে নামতে কতটা নিচে নামতে পারেন তার তাজা টাটকা উদাহরণ অধ্যাপক আবদুস সোবহান। টানা দুই বছর ক্যাম্পাসে তাঁর অনিয়ম নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকরা আন্দোলন করে এলেও তিনি গায়ে মাখেননি। এমন চামড়া মোটা ভিসি রাবিতে অতীতে এসেছেন কি না জানা নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us