বিষয়টি ভুয়া

মানবজমিন প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে রমজান মাস উপলক্ষে ৫ হাজার টাকা করে উপহার দিচ্ছেন- এমন তথ্য দিয়ে প্রতারণায় নেমেছে একটি চক্র। তারা এমন তথ্য দিয়ে গ্রাহকদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। পরে কৌশলে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসিকে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে। প্রতারণার টোপ হিসেবে বলা হচ্ছে রমজান মাস উপলক্ষে মহামান্য প্রেসিডেন্টের নির্দেশে সরকার সবার বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৫,০০০ টাকা উপহার দিচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপ, ইমু, টুইটারসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে চক্রটি। প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন মানবজমিনকে জানিয়েছেন বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুয়া। এর কোন ভিত্তি নেই। প্রতারক চক্রটি একটি লিঙ্ক ব্যবহার করেছে। ওই লিঙ্কে ক্লিক করলে নাম, পিতার নাম , বয়স ও জেলার নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। এটা পূরণ করে সাবমিট করার পর বলা হচ্ছে আপনি সফলভাবে ফর্ম পূরণ করেছেন এবং ৫,০০০ টাকা জিতেছেন। আপনি কীভাবে টাকা নিতে চান নিচ থেকে তা নির্বাচন করুন। সিলেকশন অপশনে বিকাশ, নগদ, রকেট, ও মোবাইল রিচার্জ রাখা হয়েছে। নম্বর দেয়ার পর বলা হচ্ছে এ তথ্যটি কমপক্ষে ১০টি গ্রুপে শেয়ার করুন। তাদের কথা মতো কেউ শেয়ার করলে শেষ পর্যন্ত বলা হচ্ছে আপনি সব শর্ত পূরণ করেননি এজন্য টাকা পাননি। প্রতারক চক্রটি বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করতে বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্ট চাইলেও পিন নম্বর চায়নি। এজন্য অনেকে বিষয়টি বিশ্বাসও করছে। আর এভাবেই ফাঁদে পা দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, বিকাশ, নগদ ও রকেট নম্বর দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এভাবে বিকাশ, রকেট ও নগদ নম্বর পাওয়ার পর নানাভাবে বা মোবাইল হ্যাক করে পিন নম্বরও পেয়ে যায় প্রতারক চক্রটি। অনেকে হন সর্বস্বান্ত। প্রতারক চক্রটি আরো বলছে, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ অনেক আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন। তাই সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভেবে সরকার দেশের সবাইকে ৫,০০০ টাকা করে সরকারি অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ক্যাশ আউট চার্জ ফ্রি। আমি এইমাত্র আমার বিকাশ নম্বরে ৫,০০০ টাকা পেলাম। আমার মতো আপনিও খুব সহজে এই টাকা নিতে পারবেন। নিচের লিংকে ঢুকে আপনার বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বরে দিলেই সঙ্গে সঙ্গে টাকা চলে যাবে আপনার নম্বরে। কোনো পিন নম্বর দিতে হবে না। অনেকের হয়তো অবিশ্বাস হচ্ছে, অবিশ্বাস করার আগে ১ বার চেষ্টা তো করে দেখুন’।  বলা হয়েছে- টাকা পেতে এই লিংকে ক্লিক করুন...। ওই লিঙ্কে ক্লিক করলে অনেকের নাম ও অসম্পূর্ণ মোবাইল নম্বর আসছে এবং বলা হচ্ছে তারা টাকা পেয়েছেন। অনেকে কমেন্ট বক্সে লিখেছেন তারা টাকা পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে এরাও প্রতারক চক্রেরই অংশ। ফারদিন প্রান্ত, মুনিম এহসান, নিলয় রহমান, তন্ময় সাকিব, আদিশা ইসলাম, রিপন খান, পারভেজ হাসান, তাসনিয়া সুলতানা ও নাদিয়া আফরোজের নামের তালিকা ও অসম্পূর্ণ মোবাইল নম্বর দিয়ে বলা হয়েছে তারা ৫,০০০ টাকা করে পেয়েছেন। মন্তব্য কলামে নাইমুর রহমান নামের একজন লিখেছেন, আমি আজ বিকাশে টাকা পেয়েছি। অনেক ধন্যবাদ। ইফতেখারুজ্জামান নামের একজন লিখেছেন, আমি ভেবেছিলাম এটি ভুয়া, তবে আজ সকালে টাকা পেয়েছি। তৌহিদুল আরেফিন শিপন লিখেছেন, আমি এবং আমার বন্ধুরা টাকা পেয়েছি। তানিয়া সুলতানা লিখেছেন, আমি ভেবেছিলাম এটি একটি রসিকতা ছিল তবে আজ সকালে আমি ৫,০০০ টাকা পেয়েছি এবং আমার পরিবারের সবাইকে এখানে আবেদন করতে বলেছি! নিপা সুলতানা নামের একজন লিখেছেন, প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটি মিথ্যা। কিন্তু অবশেষে আমি টাকা পেয়েছি। আমি এটি সম্পর্কে বন্ধুদের বলেছি, যাতে তারাও পেতে পারে। এরকম অসংখ্যজন মন্তব্য কলামে লিখেছেন তারা টাকা পেয়েছেন। তাদের মন্তব্য দেখে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী বিশ্বাসও করছে বিষয়টি। তারা সব শর্ত পূরণ করেও কোনো টাকা পাননি। আমিন আহমেদ নামের একজন মানবজমিনকে বলেন, তিনি সব শর্ত পূরণ করেছেন। তার নাম-ঠিকানা ও বিকাশ নম্বর দিয়েছেন। তিনি কোনো টাকা পাননি। তাকে বলা হয়েছে তিনি সব শর্ত পূরণ করেননি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রতারক চক্রটি মানুষের বিকাশ, নগদ, রকেট ও  ?ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিচ্ছে এভাবে। এরপর নানা কৌশলে বা মোবাইল হ্যাক করে পিনও নিয়ে যাচ্ছে। সমপ্রতি এমনই প্রতারণার শিকার হন একটি সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী। তাকে ফোন দিয়ে বলা হয় কলেজের অধ্যক্ষ কথা বলবেন। বলা হয় ওই ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য বিকাশ নম্বর ও পিন নম্বর প্রয়োজন। ওই ছাত্রী প্রতারক চক্রের কথামতো তার বাবার বিকাশ ও পিন নম্বর বলে দেন। পরে দেখা যায়, ওই বিকাশ অ্যাকাউন্টের সব টাকা উধাও। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ ধরনের কোনো উদ্যোগের নোটিশ পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষয়টি তদন্ত করতে ও প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন মানবজমিনকে বলেন, মহামান্য প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো  উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us