লকডাউনে সরকারি সহায়তা পাননি দুস্থরা

মানবজমিন প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

কঠোর লকডাউনে দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়নি কোনো প্রকার নগদ সাহায্য-সহযোগিতা। কাগজে কলমে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হলেও তা গতকাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে পৌঁছেনি। এদিকে ১৪ই এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সাতদিনের লকডাউন ২৮শে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৫ই এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সরকারি বিধি-নিষেধের পর লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। এতে শ্রমজীবী মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। শহর কিংবা গ্রামে একই চিত্র। শিল্প মালিকদের অনুরোধে কল-কারখানা খোলা থাকলেও শহর ছেড়েছেন বহু মানুষ। অপরদিকে লকডাউনের কারণে অফিস-আদালত-বিপণি বিতান বন্ধ থাকায় দিনমজুররা রয়েছেন বিপাকে। একই চিত্র গ্রামীণ জনপদেও। লকডাউনের কারণে বেকার জীবনযাপন করছেন অনেকে। নগদ কোনো সরকারি সহায়তা পৌঁছেনি প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, করোনা উপলক্ষে কোনো প্রণোদনা বিতরণের বিষয়ে তারা জানা নেই। ঈদকে সামনে রেখে ভিজিএফ কর্মসূচির অধীনে সহায়তা আসার কথা ছিল। তবে তা স্থগিত হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। দরিদ্রদের নগদ অর্থ সহায়তার কথা জানেন না বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানা। বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসক এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। বরগুনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য তিনি কোনো বরাদ্দ পাননি। এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিন্ধি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন বলেন, গত বছর করোনা মোকাবিলায় নগদ অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু এ বছর তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো সাহায্যের খবর নেই। করোনার নগদ অর্থ সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সরকারি সহায়তার ৫ লাখ  টাকার একটি চেক এসেছিল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। মোস্তফার ভাষ্য, রংপুর সিটি করপোরেশনে মোট ৩০টি ওয়ার্ড আছে। সরকারি এই বরাদ্দ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে মাত্র ২৩টি পরিবার ৫০০ টাকা পাওয়ার কথা। ২০/২৫ হাজার জনসংখ্যার একেকটি ওয়ার্ডে ২৩টি পরিবার খুবই নগণ্য। এই ২৩ পরিবার বাছাই করতে গিয়ে বিতর্কের মধ্যে পড়তে হতে পারে। আর ৫০০ টাকা দিয়ে একটি পরিবারের একদিনের খরচ মেটানো দুষ্কর। বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রাখেন মোস্তফা। গত বছর করোনার প্রণোদনার অর্থ জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল দরিদ্রদের কাছে। কিন্তু এ বছর সে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ না করায় জনপ্রতিনিধিরা বিতর্কিত হতে পারেন বলে মনে করছেন রংপুর সিটি মেয়র।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি-২, ত্রাণ) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সাধারণত ঈদের আগে ভিজিএফের অর্থ ছাড় করা হয়। আজকালের মধ্যে জিআর-এর ১২১ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা পৌঁছানোর কথা রয়েছে। নিম্ন আয়ের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের বিষয়গুলো সমন্বয় হয়ে থাকে। তাই পুরো প্রক্রিয়াটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ৩১শে মার্চ দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে এক কোটি নয় হাজার ৯৪৯টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে ৪৫০ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫০ টাকা বরাদ্দও প্রদান করা হয়। এর আগে ২৫শে মার্চ পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশের দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে বিতরণের জন্য এক শ’ ২১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এবং জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ তথা লকডাউন শুরু হওয়ায় ওই দুটি বরাদ্দ স্থগিত করা হয়। ৮ই এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর ২য় ঢেউয়ের কারণে চলাচল সীমিতকরণের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মহীন মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ৫৭২ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ পরিবারকে এ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সারা দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলার জন্য ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩টি কার্ড  এবং ৩২৮টি পৌরসভার জন্য ১২ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৬টি কার্ডসহ মোট ১ কোটি ৯ হাজার ৯৪৯টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ৪৫০ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫০ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। পরিবার প্রতি ১০ কেজি চালের সমমূল্য অর্থাৎ কার্ড প্রতি ৪৫০ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে উপজেলাসমূহের জন্য ৩৯৫ কোটি ৬ লাখ ৪১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং পৌরসভাসমূহের জন্য ৫৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।কোভিড পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য সহায়তার জন্য ১২১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলার ৪ হাজার ৫৬৮টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হারে মোট ১১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রদানের জন্য এ অর্থ ছাড় করা হয়। সারা দেশের ৩২৮টি পৌরসভার অনুকূলে মোট ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে এ ক্যাটাগরির প্রতিটি পৌরসভার জন্য ২ লাখ টাকা, বি ক্যাটাগরির প্রতিটি পৌরসভার জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সি ক্যাটাগরির প্রতিটি পৌরসভার জন্য ১ লাখ টাকা হারে বরাদ্দ দেয়া হয়। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর, গাজীপুর এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য ৭ লাখ টাকা হারে বরাদ্দ দেয়া হয়। ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের জন্য ৫ লাখ টাকা হারে বরাদ্দ দেয়া হয়। তাছাড়া দেশের ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসনের অনুকূলে এ ক্যাটাগরির জন্য  ২ লক্ষ টাকা, বি ক্যাটাগরির জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সি ক্যাটাগরির জন্য ১ লাখ টাকা হারে মোট ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us