সিলেটে হাসপাতালমুখী রোগীর চাপ বেড়েছে। তাদের বেশির ভাগই যাচ্ছেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। অনেকেরই প্রয়োজন পড়ে আইসিইউ। সিলেটের একমাত্র কোভিড হাসপাতাল শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। একটু সুস্থ হওয়া রোগীদের ছুটি দিয়ে অন্য রোগীদের ভর্তি করতে হচ্ছে। আইসিইউ’র জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন রোগীরা। হাসপাতালের আরএমও ডা. সুশান্ত মহাপাত্র জানিয়েছেন- প্রতিদিন তার হাসপাতালে নতুন করে ১৫ জন রোগী আসছে। যেসব রোগী আসছে তারা শ্বাসকষ্টসহ জটিল অবস্থায় আসছেন। এ কারণে অনেকেরই প্রয়োজন হয় আইসিইউ’র। অক্সিজেন কমবেশি সবারই প্রয়োজন পড়ছে। তিনি বলেন, যেসব রোগী বাসায় আইসোলেশনে থাকছেন তাদের দিকেও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে হাসপাতালমুখী রোগীর চাপ কমাতে এমন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শামসুদ্দিন হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে ১শ’র উপরে রোগী ভর্তি হয়েছে। অনেকেই কোভিড আক্রান্ত আবার অনেকেই উপসর্গ নিয়েও আসছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- যেসব রোগী সুস্থ হচ্ছেন তাদের ছুটি দিয়ে অন্য রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই অবস্থা চলছে। ১৬টি আইসিইউতে সার্বক্ষণিক রোগীরা রয়েছে বলে জানান তারা। এদিকে, সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা পজেটিভ হওয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৬৯ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৪৮, হবিগঞ্জে ১০, মৌলভীবাজারে ৫ জন। পরিসংখ্যান দেখে সিলেট জেলায় অন্তত ১০০ জন করোনা রোগী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের অর্ধেক রোগীর জন্য লাগছে আইসিইউ সাপোর্ট। বেসরকাার হাসপাতালগুলোতেও প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- গত বছর করোনা শুরু হওয়ার পর অনেক হাসপাতাল সাপোর্টের অভাবে করোনা চিকিৎসা দিতে পারেনি। কিন্তু এবার প্রায় সব হাসপাতালেই করোনা রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে চিকিৎসাও। সিলেটের নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পার্কভিড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালেও করোনা ইউনিট চালু করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন- ‘সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। নতুন করে ওয়ার্ড করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা প্রস্তুত আছি। বিশেষ করে করোনা রোগীদের বিচ্ছিন্ন করতে অক্সিজেন সংযোজনসহ আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপনের চিন্তাভাবনা রয়েছে। বর্তমানে করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট এর প্রতিবেদনে জানা গেছে- গতকালও সিলেটের ৪টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ১৩৯ জন করোনা শনাক্ত হন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ১০৫, সুনামগঞ্জের ১০ ও হবিগঞ্জের ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। সিলেটের দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা মোছা. মেহবাজিন দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং নগরীর শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা আঙ্গুরা বেগম সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। সিলেট বিভাগে করোনা প্রমাণিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৫৭ জনে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সিলেট জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯৭৭ জন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৬৪৩ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ১৭৫ জন ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ১৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সিলেটে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩০৫ জনে। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২৩৬ জন, সুনামগঞ্জে ২৬ জন, হবিগঞ্জে ১৮ জন ও মৌলভীবাজারের ২৫ জন রয়েছেন।