করোনা টেস্টে এখনো ভোগান্তি

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

ঢাকাসহ সারা দেশে করোনা পরীক্ষায় এখনো ভোগান্তি হচ্ছে। নমুনা দেয়া থেকে শুরু করে রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত সর্বত্রই ভোগান্তি। আর ভোগান্তির কারণে রোগী নমুনা দিতে নিরুৎসায়িত হচ্ছে। ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই নমুনা দিতে চান না। এতে করে সারা দেশে এখনো নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হচ্ছে। সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১২১টি পিসিআর ল্যাবের ৭২টি ঢাকায়। বাকি ৪৯টি ঢাকার বাইরে। ঢাকায় ৭২টি ল্যাব থাকা সত্ত্বেও রোগীরা সহজে করোনা পরীক্ষা করাতে পারেন না। নমুনা সংগ্রহের বুথে গিয়ে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। যারা নমুনা দিতে পারছেন রিপোর্ট পাওয়ার জন্য তাদেরকে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রে ঢাকার বাইরের চিত্র আরো খারাপ। উপজেলা-জেলা শহর থেকে যারা নমুনা দিচ্ছেন ফলাফল পাওয়ার জন্য তাদেরকে চার থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নমুনা প্রদানের প্রক্রিয়া এখনো সহজতর হয়নি। শুধুমাত্র উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া নমুনা সংগ্রহের আর কোনো বুথ নাই। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের করোনা উপসর্গ থাকলেও তারা ঝামেলা এড়াতে নমুনা দেন না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন নমুনা পরীক্ষা কম হওয়াতে দেশে কি পরিমাণ করোনা আক্রান্ত আছে তার সঠিক হিসাব মিলছে না। কারণ নমুনা পরীক্ষা কম হলে শনাক্ত কম হচ্ছে। আর পরীক্ষা বেশি হলে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। ১১ই এপ্রিল সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সারা দেশ থেকে। এসব নমুনা থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৬৮টি। শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২০১ জন। এরআগে ৬ই এপ্রিল ৩৪ হাজার ৬৩৯টি পরীক্ষায় ৭৬২৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসূত্র জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ২৫৫টি পরীক্ষাগার চালু করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১২১টি আরটি পিসিআর, ৩২টি জিন এক্সপার্ট ও ১০০টি র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগার আছে। ১০ই এপ্রিল ২৪৮টি পরীক্ষাগারে ২৯ হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৮১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। ৯ই এপ্রিল ২৪৩টি ল্যাবে ২৬ হাজার ৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৩৪৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। ৮ই এপ্রিল সমপরিমাণ ল্যাবে ৩১ হাজার ৬৫৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ৪৬২ জন রোগী শনাক্ত হয়। একইভাবে ৭ই এপ্রিল ৩৩ হাজার ১৯৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৮৫৪ জন রোগী, ৫ই এপ্রিল ৩৪ হাজার ৩১১টি পরীক্ষায় ৭ হাজার ২১৩ জন, ৪ঠা এপ্রিল ৩০ হাজার ২৩৯টি পরীক্ষায় ৭ হাজার ৭৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে সেই তুলনায় পরীক্ষাগারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখনো পর্যাপ্ত পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি অনেক পিসিআর ল্যাব অকেজো পড়ে আছে। এসব ল্যাব চালু করলে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা আরো সহজতর হবে। এ ছাড়া নমুনা সংগ্রহের বুথ ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ খুব সহজেই নমুনা দিতে পারবে। একটি বেসরকারি অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন। খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা হোসেনের শরীরে এক সপ্তাহ ধরে করোনা উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তিনি ছাড়া তার পরিবারের আরো দু’জনের একই অবস্থা। তাই বাসায় বসে করোনা পরীক্ষার জন্য তিনি যোগাযোগ করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারে। পরিবারের সদস্যদের নাম, বয়স, ঠিকানা ও ফোন নম্বর মেসেজ করে ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠান। তারপর পরবর্তী তিনদিন ল্যাব ইনচার্জ থেকে শুরু করে নমুনা কালেক্টর এমনকি ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি নমুনা দিতে পারেননি। হতাশ হয়ে মোহাম্মদ হোসেন আর করোনা পরীক্ষা করাননি। ঢাকার বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার মুকুল। স্ত্রীসহ কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বর, কাশি শরীর ব্যথায় ভুগছিলেন। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য সস্ত্রীক আসেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শাহরিয়ার মানবজমিনকে বলেন, সকাল ৭টায় এসে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে আরেক লাইনে দাঁড়াই। আমি যখন লাইনে দাঁড়াই তখন আমার সামনে অন্তত আড়াইশ’ রোগী। অসুস্থ শরীর নিয়ে বসে দাঁড়িয়ে যখন বেলা আড়াইটা বাজে তখনও আমরা নমুনা দিতে পারি নাই। আমাদের একজন আনসার সদস্য এসে জানান ওইদিন আর নমুনা নেয়া হবে না। পরেরদিন আসার জন্য। পরেরদিন আসার পর আবার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দেই। তিনদিন পর ফলাফল পাই আমাদের করোনা পজেটিভ। সিলেটের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন। সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাসা। করোনার উপসর্গ থাকায় সপরিবারে এসে নমুনা দিয়ে যান ৫ই এপ্রিল। ৪ দিন পর সেই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল মেসেজের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন। জয়নাল বলেন, অসুস্থ হওয়ার তিনদিন পর নমুনা দিলাম। তার চারদিন পর পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারলাম। এখানেই ৭ দিন চলে গেল। এখন পজেটিভ ফলাফল আসছে। তাহলে চিকিৎসা শুরু করবো কখন?করোনা পূর্বাভাস বিষয়ক দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক শাফিউন শিমুল মানবজমিনকে বলেন, মনে হচ্ছে অফট্র্যাক। যা দেখছি সেটি কম। এর চেয়ে বেশি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরীক্ষা বাড়ালে সেটি বুঝা যাবে। যদি পরীক্ষা ৫০ হাজারে নেয়া যায় তবে গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজারের মতো শনাক্ত হবে। তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে ইউনিয়ন পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া যেখানে ক্যাপাসিটি আছে সেগুলো ব্যবহার করা। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পিসিআর ল্যাব আছে সেটি ব্যবহার করা হয় না। আগে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু মন্ত্রণালয় টাকা দেয় না তাই এটি এখন ব্যবহার করা হয় না। এ রকম অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিসিআর ল্যাব আছে। তাই জটিলতাগুলো নিরসন করে কীভাবে ওই ল্যাবগুলোকে কাজে লাগানো যায় সেটি চিন্তা করতে হবে দ্রুত। যে হারে আক্রান্ত বাড়ছে অন্তত ৫০ হাজার পরীক্ষার ক্যাপাসিটিতে নিয়ে যেতে হবে। সরকার চাইলেই সেটি সম্ভব হবে। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ও যেসব স্থানে সরকারি ল্যাব আছে সেগুলো চালু করলে হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us