দেশে করোনার সংক্রমণ রোধে আগামী এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ রবিবার (৪ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে আগামী সোমবার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত জরুরি সেবা ব্যতিত সব বন্ধ থাকবে। জরুরি সেবার মধ্যে- পণ্যপরিবহন, জ্বালানি, ওষুধ, পচনশীল, ত্রাণবাহী পরিবহন, সংবাদপত্র, গার্মেন্টস সামগ্রী আওতাভুক্ত থাকবে।
মহামারী সামাল দিতে ‘লকডাউনের’ মধ্যে সোমবার থেকে সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, "আগামীকাল থেকে সারাদেশের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে পণ্যপরিবহন, জরুরিসেবা, জ্বালানি, ওষুধ, পচনশীল, ত্রাণবাহী পরিবহন, সংবাদপত্র, গার্মেন্টস সামগ্রী এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।"
সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে লকডাউন। শনিবার (৩ এপ্রিল) এই বার্তা প্রচারের পর থেকেই রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় বাস, ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত ব্যক্তিরা ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। বাড়তি ভাড়া দিয়েই তারা যাত্রা শুরু করছেন। পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার ও তারপরের দিনগুলোর জন্য কেনা আগাম টিকিট অনেকে ফেরত দিচ্ছেন।
রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলি বাস টার্মিনালে যাত্রী বেড়েছে। শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় বাড়িমুখো মানুষের ভিড় বেড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাস পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তাই সিএনজি-অটোরিকশা এমনকি রিকশায় করেও টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
লকডাউনেও চলবে টিকাদান কর্মসূচি
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লকডাউনের ভেতরে আমাদের টিকাদান কর্মসূচি চলমান থাকবে। তবে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হচ্ছে, দ্বিতীয় ডোজ আগামী ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা টিকা নেবেন তারা কাছের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে কার্ড দেখিয়ে নেবেন।’
যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে সেটা গতবারের পিকের সময় অর্থাৎ জুন-জুলাইয়ের চেয়েও ভয়াবহ। এভাবে চললে আগামী কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটবে দেশে। এমনটাই বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মার্চের শুরু থেকেই সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। ৩ এপ্রিল শনাক্ত পাঁচ হাজার ৬৮৩ জন। তার আগের দিন রেকর্ড পরিমাণ ছয় হাজার ৮৩০ জন শনাক্ত হন।
‘আমরা খুব খারাপ পর্যায়ে আছি’ মন্তব্য করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাতে সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে।’
ডা. মুশতাক হোসেন আরও বলেন, ‘কোনও এক জায়গায় কনসেনট্রেটেড এপিডেমিক (গুচ্ছ মহামারি) হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের লক্ষণ সেটাই বলে। তবে সারাদেশেই সংক্রমণ বাড়ছে।’