এসিডদগ্ধ এক নারীর লড়াইয়ের গল্প

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২১, ০০:০০

‘একদিন সন্ধ্যার সময় রান্না করছিলাম। চুলায় আগুন জ্বলছিল। হঠাৎ করে পেছন দিক থেকে এসে ও আমার শরীরে এসিড নিক্ষেপ করলো। আমার মুখ ও শরীর ঝলসে গেল। আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। সে যে কি যন্ত্রণা সেটা বলে বোঝানো যাবে না। এসিড যাকে দেয়া হয় এই যন্ত্রণা সে ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারে না। ও আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু ভগবানের দয়ায় এখনো বেঁচে আছি।’ বলছিলেন এসিডে দগ্ধ ফরিদপুরের মধুখালীর গৃহবধূ সরস্বতী বিশ্বাস। ২০১১ সালে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন সরস্বতী ও চৈতন্য মালো। ছিল সুখের সংসার। কিন্তু সেই সুখের সংসারে বিষাদের আগুন জ্বালিয়ে দেয় সুজন হালদার নামে এক ব্যক্তি। এই ব্যক্তি ছিল চৈতন্যেরই কাছের বন্ধু। চৈতন্যের সঙ্গে ব্যবসা করতো সুজন। সেই সুবাদে তার বাসায় যাতায়াত ছিল সুজনের। সে সময় তার কুনজর পড়ে সরস্বতীর ওপর। প্রায়শই সরস্বতীকে বিরক্ত করতো সে। বিষয়টি তার স্বামী চৈতন্যকে জানালে তিনি সুজনকে বারবার সাবধান করে দেন। তা সত্ত্বেও সুজন সরস্বতীকে বিরক্ত করতো। পরে চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্যদের জানিয়ে সালিশের মাধ্যমে সুজনকে সাবধান করা হয় এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়। এরপর থেকে সুজন অনেকদিন শান্ত থাকলেও ২০১৯ সালে একদিন সন্ধ্যায় সরস্বতীর বাড়িতে গিয়ে তার শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে। এসিডে ঝলসে যায় সরস্বতীর মুখ ও শরীর। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও সরস্বতী এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই যন্ত্রণা। তবে এ ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার স্বামী চৈতন্য মালো ও শাশুড়ি বিলা রানী। এসিডে সুন্দর চেহারাটি ঝলসে গেলেও সরস্বতীকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন তারা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরস্বতীকে সার্বক্ষণিক সাহস যুগিয়েছেন চৈতন্য। জীবনে এত ঝড় বয়ে গেলেও এখনো আগের মতোই প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসেন চৈতন্য। তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। সঙ্গে আছেন চৈতন্যের মা। তিনিও পুত্রবধূকে মেয়ের মতো ভালোবেসে আগলে রেখেছেন। সবাই মিলে সংসারটাকে আগের মতোই গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে একটি আতঙ্ক এখনো তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। চৈতন্যের মা বিলা রানী মানবজমিনকে বলেন, সুজন যদি জেল থেকে বের হয়ে আবারো সমস্যা সৃষ্টি করে! তাদের তো টাকা পয়সা আছে। মানুষকে টাকা খাইয়ে জেল থেকে বের হলে সুজন আবারো আমাদের সুখের সংসারে হানা দেবে। এবার আসলে আমার ছেলেকেও সে মেরে ফেলবে। তাই আশা করি, সে যেন আর ছাড়া না পায়। তার উপযুক্ত শাস্তি চাই। পুত্রবধূ সম্পর্কে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সরস্বতী একটি লক্ষ্মী মেয়ে। ওকে আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু সুজন তার সোনার দেহটাকে পুড়িয়ে দিলো। সারাজীবন সে এই কষ্ট বয়ে বেড়াবে। ওতো মারাই যেত। অনেক চিকিৎসার পর সে এখন অনেকটা ভালো। তারপরও তার কানে এখনো সমস্যা আছে। কান দিয়ে পুঁজ বের হয়।সরস্বতী বলেন, জীবনে এমন একটি দুর্ঘটনায় পড়তে হবে কখনো ভাবিনি। আমাকে ভালোবেসে পছন্দ করে চৈতন্য আমাকে বিয়ে করে। এই সুন্দর চেহারা দেখলে মানুষ এখন ভয় পায়। শুরুতে আমার বাচ্চাও ভয় পেতো। তবে এখন খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রতিবেশীরাও এখন আর কিছু বলে না। যে ঝড় আমার ওপর দিয়ে গেছে, এখান থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহস যুগিয়েছেন আমার স্বামী চৈতন্য এবং আমার শাশুড়ি। তারা আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে। এখন সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক মনে হয়। যদিও সেই যন্ত্রণার কথা মনে হলে খুবই খারাপ লাগে। যখন মন খারাপ লাগে তখন চৈতন্য আমাকে বিভিন্নভাবে বোঝায়। আমাকে সান্ত্বনা দেয়। তাদের ভালোবাসাই আমার বেঁচে থাকার শক্তি। আমার সন্তানকে নিয়ে আমি আপাতত ভালোই আছি। তবে মাঝে মধ্যে মনে হয়, যদি সুজন জেল থেকে বের হয়ে এসে আবারো আমাদের সমস্যা সৃষ্টি করে! এটা ভেবে ভয় হয়। তবে আমি বিশ্বাস করি সে উপযুক্ত শাস্তি পাবে।সরস্বতীর স্বামী চৈতন্য বলেন, আমি তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। তাকে আগে যেভাবে ভালোবাসতাম এখনো সেভাবেই ভালোবাসি। সে অনেক সময় মন খারাপ করে। কিন্তু আমি তাকে বিভিন্নভাবে বোঝাই, সান্ত্বনা দেই। চৈতন্য একজন মাছ ব্যবসায়ী। তার সঙ্গেই ব্যবসা করতো সুজন। কিন্তু সুজন এভাবে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে সেটা কখনোই তিনি কল্পনা করতে পারেননি। তিনি বলেন, আমি চাই সুজনের উপযুক্ত শাস্তি হোক। কিন্তু তারপরও মনে হয়, কখনো যদি আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসে, তবে সে আবারো ঝামেলা করবে। এরমধ্যে একদিন সুজন কারাগার থেকেই আমাকে একটি নাম্বার থেকে কল দিয়ে হুমকি দেয়। সে বলে, ‘আমি বের হয়ে আসি তারপর তোদের মজা দেখাবো।’
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us