সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা সংবিধানের লঙ্ঘন

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

পূর্বানুমতি ছাড়া ঢাকায় সভা-সমাবেশ ও জমায়েতে নিষেধাজ্ঞায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। একইসঙ্গে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়েছে। দলগুলো বলছে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের স্পষ্ট বিরোধী। সংবিধানের চেয়ে অন্যকোনো আইন বা নির্দেশনা বড় হতে পারে না। ঢাকা মহানগরীতে সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বলেন, হঠাৎ করে ডিএমপিকে দিয়ে পূর্বানুমতি ছাড়া রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার আবারো সংবিধান লঙ্ঘন করলো। অথচ ক্ষমতাসীন দল বা তাদের সমর্থক সংগঠন কোনো পূর্বানুমতি বা শর্ত ছাড়াই যখন তখন রাস্তা বা লোকালয় দখল করে সভা-সমাবেশ করছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সংবিধানে অবাধে সভা-সমাবেশ করার অধিকার যেকোনো নাগরিক ও সংগঠনের আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংবিধান স্বীকৃত জনগণের এই অধিকার বিভিন্ন সময় কেড়ে নিয়েছে অথবা সংকুচিত বা নিয়ন্ত্রিত করেছে। যা সংবিধানের লঙ্ঘন। বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, অনুমতির নামে সরকার রাজনীতিকে বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে আটকে নিয়ন্ত্রণ করছে, জনগণের অধিকার হরণ করছে। রাজনীতির স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ ও সংকুচিত করছে। মূলত প্রশাসনকে অপব্যবহার করে জনরোষ ও গণআন্দোলন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সরকার সংবিধান স্বীকৃত জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে।ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, পুলিশের এমন সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। সংবিধানের চাইতে পুলিশের আইন কখনো বড় হতে পারে না। পুলিশ যে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে এটা গ্রহণযোগ্য না। পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সভা- সমাবেশ করতে হবে কেন? এর জন্য শুধু পুলিশকে অবহিত করলেই তো হয়। এখন যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এতে অগণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে উঠবে। সারা দেশে মৌলবাদের বিস্তার বাড়বে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের মানবজমিনকে বলেন, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পেছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। একটি হচ্ছে কোভিড-১৯। সভা-সমাবেশ করলে করোনার বিস্তার বাড়তে পারে, এমন সংশয় থেকে হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে রাজনৈতিক কারণ। হয়তো সরকারের কাছে কোনো  মেসেজ আছে। ফলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আমাদের কিছু বলার নাই।   ঢাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবান্বিত বিজয়ের মাসে জনগণ যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল ও সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করে ’৭১-এর বিজয়কে উদ্‌যাপন করবে, তখন সরকার বিজয় মাস উদ্‌যাপনে বিকল্প হিসেবে মিছিল ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের ওপর কালিমা লেপন করেছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ভিন্নমত ও পথকে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা বল প্রয়োগ করে রুদ্ধ করার মানসিকতা জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনছে। রাজনীতিবিহীন সমাজ জনমনে বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেয়, জনগণকে আত্মোপলব্ধি থেকে  বঞ্চিত করে  এবং ব্যক্তির আত্মবিকাশের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।জননিরাপত্তার অজুহাতে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশকে নিষিদ্ধ করা রাষ্ট্রকে আরো দুর্বৃত্তপরায়ণ করার অপচেষ্টা। গণতন্ত্রহীনতা সমগ্র সমাজকে ভয়ঙ্কর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অর্থাৎ সমাজকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে স্থবির করে মধ্যযুগের দিকে ধাবিত করছে। ভয়াবহ দুর্নীতি, হত্যা, ধর্ষণ ও  চরম অব্যবস্থাপনা এই গণতন্ত্রহীনতারই ফসল যা সরকার উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সংবিধান বহাল রেখে প্রতি ক্ষেত্রেই সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের যে বয়ান দিচ্ছে তা জাতির সঙ্গে নিম্নমানের একটি তামাশামাত্র। জনবিচ্ছিন্ন সরকার জননিরাপত্তা নয়,  বৈধতা সংকটে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রায়শই  সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার বাহানা খুঁজে।  সেই ধারাক্রমেই সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধকরণে সরকারের সর্বশেষ এ পদক্ষেপ। দেশকে গণতন্ত্রহীন করে সরকার তাদের যে ‘স্বপ্ন রাজ্য’ গড়ে তুলেছে জনরোষের কারণে তা ক্রমাগতই অরক্ষিত হয়ে পড়ছে এবং সরকারের জন্য তা ভবিষ্যতে বড় ধরনের কুফল বয়ে আনবে। আমরা সরকারের এই অবিবেচক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।ওদিকে ঢাকা মহানগরীতে অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে বলা হয়, বুধবার ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বানুমতি ছাড়া ঢাকা মহানগরীতে যেকোনো ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।  বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ বিজয়ের মাসে ডিএমপি কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অগণতান্ত্রিক, জনবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। একইসঙ্গে সভা-সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে সংবিধান পরিপন্থি কাজ থেকে ডিএমপি কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। এতে আরো বলা হয়, আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো- জনগণকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনগণের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের স্বৈরতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, করোনা মহামারিতে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি, লুটপাটসহ সামপ্রতিক সময়ের নানা অপকর্মের কারণে সরকারের প্রতি যে জনরোষ তৈরি হয়েছে সেটা রুখতেই সরকার ও প্রশাসন এমন মানবতাবিরোধী ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই বিজয়ের মাসে সংবিধানবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার ও প্রশাসনকেও গণবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us