আমরা তোমাকে ভুলবো না

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

ম্যারাডোনা ছিলেন ফুটবল আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে খ্যাপাটে, পরোয়া না করা মানসিকতা, মাদক, একের পর এক বিতর্ক। শৈশবে দারিদ্র্য, ফুটবল প্রেম। কৈশোরে নাম কুড়ানো, তারুণ্যে দুনিয়া মাত। তিনি জীবনকে নিয়ে খেলেছেন বিস্তর। এক জীবনে পেয়েছেন বহু জীবনের স্বাদ। তার ৬০ বছরের জীবনে এক মুহূর্তের জন্যও ধূসর হননি। প্রস্থানে যেন হয়ে উঠলেন আরো বর্ণিল। তার মৃত্যুতে কাতর পুরো বিশ্ব। আরেক কিংবদন্তি পেলে আকাশে একসঙ্গে ফুটবল খেলার কথা বলেছেন। মেসি বলেন, দিয়েগোরা মরে না। ম্যারাডোনার মৃত্যুতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ রাখা হয়েছে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ভবনে। বুয়েন্স আয়ার্সের কাছে ছোট্ট শহর লানুসে ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। দরিদ্র বাবা-মায়ের ঘরে চার মেয়ের পর জন্ম নেন দিয়েগো। মাত্র ৮ বছর বয়সে একটি ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা থেকে প্রথম ক্লাব এস্তেলা রোজা তাকে বেছে নেয়। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। বেঁটে এবং গাঁট্টাগোট্টা, উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি; শারীরিক গঠনে ঠিক অন্যান্য অ্যাথলেটদের মতো ছিলেন না। তবে তার দক্ষতা, নৈপুণ্য, দৃষ্টি, বল নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, ড্রিবলিং এবং গতি তার ওজন সমস্যার থেকে বেশি আলোচিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে ১৯৮৬’র মেক্সিকো বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। চার বছর পর আবার আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নেন তিনি। ছিয়াশির বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনাল এমনিতেই ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। সে সময়ে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ডের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উত্তাপ ম্যাচটিকে এমনিতেই তাতিয়ে রেখেছিল। ফুটবল ম্যাচ নয়, যেন যুদ্ধের উত্তাপ। ৫১ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর ম্যারাডোনা বিপক্ষ গোলরক্ষক পিটার শিল্টনের সঙ্গে শূন্যে লাফিয়ে হাত দিয়ে গোল করেন ম্যারাডোনা। এই গোল নিয়েই যত বিতর্ক। পরে নিজেই সেই গোলের ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, ঈশ্বরই তার হাত দিয়ে গোলটা করিয়ে নিয়েছেন! উত্তর ছিল এমন, ‘ম্যারাডোনার খানিকটা মাথা আর ঈশ্বরের খানিকটা হাত, এ দিয়েই গোল!’ অবশ্য ওই বিতর্কিত গোলের চার মিনিট পর তার দ্বিতীয় গোলটি আসে। সেটি ছিল অনন্য, অসাধারণ। বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ও গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে তিনি জালে বল জড়ান। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা তার এই গোল দুর্দান্ত ও সত্যিকারের ফুটবল প্রতিভা বলে মন্তব্য করেন। ম্যারাডোনা দু’বার ক্লাব পরিবর্তনে রেকর্ড গড়েছিলেন- ১৯৮২ সালে বোকা জুনিয়র্স ছেড়ে স্প্যানিস ক্লাব বার্সেলোনায় যান ৩ মিলিয়ন পাউন্ডে। এর দুই বছর পর তখনকার রেকর্ড ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬-৮৭’ সিরি আ শিরোপা কুড়ায় নাপোলি। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর এটি তাদের প্রথম সিরি আ শিরোপা। পরের দুই মৌসুম রানার্সআপ হওয়ার পর নাপোলিকে ১৯৮৯-৯০ এ আবারো সিরি আ শিরোপা এনে দেন ম্যারাডোনা। নাপোলিতে টানা সাত বছরের ক্যারিয়ারে ২৫৯ ম্যাচে করেন ১১৫ গোল। ১৯৯১ সালে কোকেন সেবনের দায়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা পান দিয়েগো ম্যারাডোনা। ২০০৫ সালে নেপলসে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘এম টেন’ জাদুঘর।এরপর ১৯৯৪’র যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে তার জীবনের সব ওলট-পালট হয়ে যায়। ডোপ টেস্টে ধরা পড়ায় বিশ্বকাপে তাকে নিষিদ্ধ করে ফিফা। এরপর তার ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। ১৯৯৪ এর বিশ্বকাপের তিন বছর পর আবারো ডোপ টেস্টে পজেটিভ আসায় অবসর নেন ফুটবলের এ জাদুকর। তবে পুরো জীবনে বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি। ড্রাগ রাখার দায়ে ২ বছর জেল খাটতে হয়েছিল ম্যারাডোনাকে। এমনকি সাংবাদিকদের দিকে গুলি ছুড়ে কুখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন ম্যারাডোনা।মদ্যপান ও কোকেনের অভ্যাসের কারণে তার স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দেয়। স্থূলতা সমস্যা দেখা দেয়, একপর্যায়ে ১২৮ কেজি ওজন হয় তার। ২০০৪ সালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। ওজন কমাতে সার্জারি করেছিলেন তিনি। মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি লাভের আশায় কিউবাতে নিরাময় কেন্দ্রে ছিলেন। এত বিতর্কের পরও ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনা ফুটবল এসোসিয়েশন ঘোষণা করে ডিসেম্বর ২০১০ থেকে আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের কোচ ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনা ওইবার কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নেয়। ম্যারাডোনার সম্মানে তার ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলি ১০ নম্বর জার্সি তুলে রেখেছে ২০০০ সাল থেকে। তবে তরুণ বয়সে ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্ট জিতে হইচই ফেলে দেয়া কোচ আন্দ্রেস ভিলাস বোয়াসের দাবিটা আরেক কাঠি উপরে। ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক মার্শেইয়ের পর্তুগিজ কোচ ভিলাস বোয়াস বলেন, ‘এটা বিরাট আঘাত। আমি ফিফাকে বলবো, ম্যারাডোনার সম্মানে সব প্রতিযোগিতা থেকে ১০ নম্বর জার্সি বাদ দেয়া হোক।’ ক্যারিয়ারে নন্দিত দিয়েগো ম্যারাডোনা নানা কারণে নিন্দিতও। তবে তার আলোকিত দিকটাকেই দেখতে চান স্প্যানিয়ার্ড কোচ পেপ গার্দিওলা। বার্সেলোনার সাবেক তারকা গার্দিওলা বলেন, ‘এক বছর আগে আর্জেন্টিনায় একটা ব্যানার দেখেছিলাম। তাতে লেখা ছিল- তোমার জীবনে তুমি কী করেছো তা ব্যাপার নয় দিয়েগো, ব্যাপারটা হলো তুমি আমাদের জীবনের জন্য কী করেছো’। নিজের জাদুকরী ফুটবল ক্যারিয়ারে দিয়েগো ম্যারাডোনার সান্নিধ্য পেয়েছেন লিওনেল মেসি। কোচ ম্যারাডোনার অধীনে ২০১০ বিশ্বকাপে অংশ নেন তিনি। আর গুরুর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মেসিও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইন্সটাগ্রামে মেসি লিখেছেন ‘সব আর্জেন্টাইন ও ফুটবলের জন্য দুঃখের দিন। তিনি চলে গেছেন তবে প্রস্থান করেননি কারণ, দিয়েগো অমর। তিনবারের বিশ্বকাপ শিরোপাজয়ী ফুটবল লিজেন্ড পেলেও ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোকাতুর। ফুটবলের কালোমানিক বলেন, ‘নিশ্চয় একদিন আকাশে একসঙ্গে ফুটবল খেলবো আমরা।’ ৮০-৯০ দশকের একটা বড় প্রজন্মের শৈশবের মূল নায়ক ছিলেন ম্যারাডোনা। বিপুল মানুষের রঙিন শৈশব নিয়েই যেন বিদায় নিলেন এই ফুটবল জাদুকর।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us