কিংবদন্তি এক ফুটবলারের বিদায়

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

আগেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে শরীরের এক পাশ অবশ ছিল। মাঝে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কিছুদিন। এরপর পেটে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটাছুটি করেন। পরে জানা যায় লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত বাদল রায়। শেষ পর্যন্ত সেই লিভার ক্যান্সারের কাছে হার মানলেন এই কিংবদন্তি। সবাইকে কাঁদিয়ে গতকাল বিকালে বাংলাদেশ মেডিকেলে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সাবেক এই ক্রীড়াবিদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। ২০১৭ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে বাদল রায়ের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাদল রায়কে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলেন। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন। মাঝে করোনায় আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শে বাসাতে চিকিৎসা করে সুস্থ হন। সপ্তাহ দু’য়েক আগে আবারো অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত আজগর আলী হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা- নিরীক্ষার পর জানা যায় লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি। স্কয়ার হাসপাতালে অবস্থার উন্নতি না হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডায়ালাইসিসের সমস্যা হওয়ায় শনিবার বাদল রায়কে ধানমণ্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সাবেক জাতীয় ফুটবলার আবদুল গাফফার। সাবেক এই তারকা ফুটবলার বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডায়ালাইসিস করাতে সমস্যা হচ্ছিল তাই বাদলকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই তাকে আইসিইউতে রেখে ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছিল। গতকাল দুপুর থেকেই অবস্থা খারাপ হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিকালে সেখানে মারা যান বাদল রায়। জাকারিয়া পিন্টু ও প্রতাপ শঙ্কর হাজরাদের প্রজন্মের পর বাদল রায়ই ছিলেন সেরাদের কাতারে। কুমিল্লার সুতাকল ক্লাব দিয়ে ফুটবলে হাতেখড়ি তার। এরপর ১৯৭৭ সালে মোহামেডানের হয়ে তার ঢাকার মাঠে যাত্রা শুরু। ক্যারিয়ারের শেষটাও এখানেই। আবাহনী, ব্রাদার্স অনেক লোভনীয় প্রস্তাব দিলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন অবলীলায়। ঢাকার মাঠে সাদা-কালোর প্রতীক মোহামেডানের অনেক শিরোপা জয়ের পেছনে বিশাল অবদান রয়েছে বাদল রায়ের। খেলা ছাড়ার পর সংগঠক হিসেবে দেশের ফুটবল উন্নয়নে অবদান রেখে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সালে মোহামেডানের অধিনায়ক ছিলেন বাদল রায়। ৮৬-তে তিন বছর পর মোহামেডানের লীগ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৮২ সালে আবদুস সালাম মুর্শেদীর ২৭ গোলের পেছনে বড় অবদান ছিল বাদলের। নিজে গোল করার মতো অবস্থানে থেকেও আবাহনীর কাজী সালাউদ্দিনের ২৪ গোলের রেকর্ড ভাঙার জন্য সালাম মুর্শেদীকে দিয়ে গোল করিয়েছেন। শুধু মোহামেডান নয়, জাতীয় দলেও বাদল রায় ছিলেন অপরিহার্য ফুটবলার। ১৯৮২ দিল্লি এশিয়াডে তার জয়সূচক গোল রয়েছে ভারতের বিপক্ষে। ইনজুরির জন্য বাদল রায়ের ক্যারিয়ার খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি।বাদল রায় খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই ছিলেন রাজনীতি সচেতন। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৯১ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বাদল রায়। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ক্রীড়া কমিটির সহ-সম্পাদক পদে ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ছিলেন বেশ ক’বার। খেলা ছাড়ার পর সংগঠক হিসেবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান বাদল রায়। নিজের ক্লাব মোহামেডানের ম্যানেজার ও পরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হন। যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন দুই মেয়াদে। পরবর্তীতে ২০০৮-২০ সাল পর্যন্ত সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনেও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন বাদল রায়।প্রধানমন্ত্রীর শোকবাদল রায়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের পাঠানো বার্তায় বলা হয়, জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠক বাদল রায় এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।এছাড়া যুব ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশন (বিএসপিএ) গভীর শোক প্রকাশ করেছে। বাদল রায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন দৈনিক মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। পৃথক পৃথক শোক বার্তায় মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করার পাশাপাশি তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us