শহীদ মুরিদুল আলম : মুক্তির অশঙ্ক চিন্তক

দৈনিক আজাদী প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৪৩

.tdi_2_606.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_606.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});জাতীয় কবি নজরুলের ‘সত্য-কবি’ কবিতার কয়েকটি পংক্তি উপস্থাপনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুরিদুল আলমকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই – ‘উন্নতশির কালজয়ী মহাকাল হ’য়ে জোড়পাণি/ স্কন্ধে বিজয়-পতাকা তাহারি ফিরিবে আদেশ মানি !/ আপনারে সে যে ব্যাপিয়া রেখেছে আপন সৃষ্টি-মাঝে,/ খেয়ালী বিধির ডাক এলো তাই চ’লে গেল আন্‌-কাজে।’ মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অপরিমেয় অবদানের জন্য দৃঢ়চেতা শহীদ মুরিদুল আলম ইতিহাসের অধ্যায়ে এক অত্যুজ্জ্বল স্বকীয় সত্তা নির্মাণ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ-দেশবাসী বিশেষ করে বীর প্রসবনী এই চট্টগ্রাম মুক্ত মাতৃভূমির লড়াই-সংগ্রামে পরাক্রম চিন্তা-চেতনার নিপুণ কারিগর এবং অসাধারণ চিন্তক হিসেবে তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। ব্রিটিশ ভারতের বরেণ্য ও সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত যাত্রা মোহন সেন, যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং বাংলার স্বাধীনতার উৎসসূত্র মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ অধ্যক্ষ আবুল কাশেমের জন্মসমৃদ্ধ দক্ষিণ চট্টগ্রাম বর্তমান চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়ন পূর্ব কেশুয়া গ্রামে ১৯৪০ সালের ১লা জানুয়ারি এই শহীদ মুরিদুল আলমের আবির্ভাব। সুপরিচিত বনেদি ব্যবসায়ী পিতা আহমেদুর রহমান দম্পতির ছয় সন্তানের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন শহীদ মুরিদুল। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে প্রথম গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে শৈশব কাল থেকেই তিনি উঁচুমার্গের মেধাবী শিক্ষার্থীর স্মারক স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে নবম শ্রেণির ছাত্রের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারির ঘটনা নিতান্তই বিরল। এই ধরনের হুলিয়ার কারণে বাবার কঠিন শাসনে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার গৃহীত পদক্ষেপেও তাঁকে আদর্শিক চেতনার লড়াই থেকে বিচ্যুত করা যায়নি। ১৯৫৬ সালে বরমা হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করে ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রামের খ্যাতিশীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজে কলা শাখায় ভর্তি হন। একই বছর আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী ও কৃতী সংগ্রামী অতিসম্প্রতি প্রয়াত ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীও চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হলে উভয়ের নিগূঢ় বন্ধুত্বের মেলবন্ধন ছাত্রলীগে যোগদান এবং আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞে নিরবচ্ছিন্ন নিয়োজিত রাখার সুযোগ সৃষ্টি করেন। চট্টগ্রাম কলেজ প্রকাশিত ‘শহীদ মুরিদুল আলম : সূর্য অভিযানের অভিযাত্রী’ তথ্যসূত্র মতে; একই সালে তৎকালীন পাকিস্তানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ইংরেজিতে লেখা অনবদ্য এক মানপত্র প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জ্ঞাপনের অংশ হিসেবে এই মানপত্র রচনা এবং পাঠ করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে শহীদ মুরিদুল বিমুগ্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল ও সামরিক শাসন জারি করে রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ নিষিদ্ধ করে। মুক্তির চেতনাকে জাগরুক রাখার বিকল্প পন্থা হিসেবে চলমান প্রক্রিয়া সৃজনে ১৯৫৯ সালে সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি গুরুত্বের সাথে পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন শহীদ মুরিদুল। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর সার্বিক সাহসী উদ্যোগে চট্টগ্রাম কলেজে নবনির্মিত অডিটোরিয়ামে প্রথম ‘ভোলা মাস্টার’ নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। উল্লেখ্য কর্মকান্ডের বিপুল শ্রম ও সময় অতিবাহিত করার পরেও শহীদ মুরিদুল একই সালে আই.এ. পরীক্ষায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৬তম স্থান অধিকার করে মেধার অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্যে সমাদৃত হন। বি.এ. তে ভর্তি হয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকাকালে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃত্বের সমন্বয়ে ‘ইউএসপিপি’ ব্যানারে ১৯৬০-৬১ সালে ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। সমধিক বিনয়ী-সৃজনশীল-মননশীল-নির্লোভ-নির্মোহ-আকর্ষণীয় চরিত্রের অবগাহনে শিক্ষার্থীদের কাছে অনুস্মরণীয় মেধা ও আদর্শের জনপ্রিয় পথিকৃৎ মানসে পরিণত হন শহীদ মুরিদুল। স্বৈরচারী আইয়ুব বিরোধী সর্বপ্রথম পরিকল্পিত আন্দোলন গড়ে তোলার সূচনাস্থল ছিল চট্টগ্রাম কলেজ। শহীদ মুরিদুল আলমের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার পরিশীলিত নেতৃত্বে চট্টগ্রাম কলেজ, কমার্স কলেজ, সিটি কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লড়াকু শিক্ষার্থীদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ১৯৬১ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি উদ্‌যাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কমার্স কলেজের তৎকালীন প্রভাষক দেশবরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব আমাদের সকলের সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রয়াত মমতাজ উদ্দিন আহমেদকে অগ্রগণ্য করে মুসলিম হলে সুধী সমাবেশের আয়োজন এবং ঐ সমাবেশ থেকেই চট্টগ্রামে প্রথম সামরিক শাসন বিরোধী মিছিলের অভিযাত্রা শোভিত হয়। ১৯৬০-৬১ সালে ইউএসপিপির প্রার্থী হিসেবে ভিপি-জিএস পদে মনোনয়ন নির্ধারণে মুরিদুল আলমের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল অনন্য। ইংরেজিতে লেখা প্রার্থীদের পরিচিতি উপস্থাপন এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত ভিপি হিসেবে অভিষেক অনুষ্ঠানে মাহবুবুল আলম তারার বক্তব্যও রচনা করেছিলেন শহীদ মুরিদুল। ১৯৬১ সালে দেশের মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তজ্ঞান চর্চার প্রগতিবাদী বিবেক অধ্যাপক আবুল ফজলের প্রচেষ্টায় কঠোর প্রতিকূলতাকে অবজ্ঞা করে রবিঠাকুরের জন্মশত বার্ষিকী অনুষ্ঠান সফল করার পিছনে অন্যতম সংগঠক ছিলেন শহীদ মুরিদুল। ৬২’র গৌরবোজ্জ্বল শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কৃষাণ হিসেবে মুরিদুলের অবস্থান ছিল অনন্য উচ্চতায়। ১৯৬১-৬২ সালে ইউএসপিপি থেকে বেরিয়ে এসে শহীদ মুরিদুল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রকৃষ্ট ‘আশ্রয়-ছাউনি’ ‘যাত্রিক’ প্রতিষ্ঠা করেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বি.এ. পাস করার পর ১৯৬২-৬৩ সালে শহীদ মুরিদুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এম.এ. অধ্যয়নে নিয়োজিত হন। তৎকালীন ছাত্রলীগের প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র-যুবক এবং জনতার আন্দোলন-সংগ্রামের প্রণিধানযোগ্য কাণ্ডারী শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাকসহ প্রমুখ কৃতী নেতৃবৃন্দ। মেধাবী শহীদ মুরিদুল সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি ও প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের অতি নিকটবর্তী সহযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সে সময় সংঘটিত আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে ‘সংহতি’ নামে নতুন ফোরাম তৈরির অন্যতম নেপথ্য রূপকার ছিলেন শহীদ মুরিদুল। উল্লেখ্য যে, এই ‘সংহতি’র মাধ্যমে তৎকালীন ঢাকসু নির্বাচনে শ্রদ্ধেয় রাশেদ খান মেনন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি এবং বেগম মতিয়া চৌধুরী রোকেয়া হলের জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ শেষে সরকারি চাকরি বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে অনীহায় কোন ধরনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। সে সময় তাঁর সহপাঠীদের অনেকেই তুলনামূলকভাবে জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় কম যোগ্যতা সম্পন্ন হলেও, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম ফিরে এসেই জামালখান রোডের একটি বাড়িতে অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রামের প্রধান নেতা প্রয়াত এম. এ. আজিজ ও জহুর আহমদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের আঞ্চলিক ও জাতীয় সাংগঠনিক পুনর্গঠন কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। তাঁরই সক্রিয় সহযোগিতায় প্রয়াত এম.এ. আজিজ নতুন প্রজন্মের বিত্তশালী ব্যক্তিত্বদের আওয়ামী পরিবারে সম্পৃক্ত করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ অনেক বরেণ্য ত্যাগী নেতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতার ‘ম্যাগনাকার্টা’ খ্যাত বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার জন্য লালদীঘির মাঠে জনসভার আয়োজনে শহীদ মুরিদুলের অদম্য সাহস-বিচক্ষণতা-বুদ্ধিমত্তার অসামান্য পরিচয় ছিল নির্বিকল্প। তিনি ছয় দফার ইংরেজি অনুবাদও করেছিলেন। শহীদ মুরিদুল মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর এতই আস্থাভাজন ছিলেন যে; সাংগঠনিক কাজে বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম শাহজাহান হোটেলে অবস্থানকালে অন্য কারোর উপর নির্ভর করতে পারছিলেন না বলেই শহীদ মুরিদুলকে ঢাকায় এসে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারির দায়িত্ব নিতে বলেন। শহীদ মুরিদুল চট্টগ্রামে সাংগঠনিক কাজে অত্যধিক জোরালো ও সক্রিয়ভাবে জড়িত হওয়ার কারণে ঢাকায় গিয়ে তাঁর পক্ষে এই দায়িত্ব আর নেয়া হলো না। আমরা সকলে অবগত আছি যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে ১১ টি সেক্টর কার্যকর ছিল। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য দ্বাদশ সেক্টর এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের সেক্টর কমান্ডার মুরিদুল আলমের সেক্টর হিসেবেই বিপুল পরিচিতি অর্জন করে। শহীদ মুরিদুল ছিলেন একমাত্র সেক্টর কমান্ডার যিনি যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণ বিসর্জন দিয়ে শহীদের মর্যাদায় গৌরবদীপ্ত হয়েছেন। বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুলতান উল কবির চৌধুরী ও নুরুল কবির চৌধুরীর মধ্যে কঠিন এক বিরোধ সৃষ্টি হলে তা মীমাংসার জন্য ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার শহীদ মুরিদুলকে তাঁর রাজাখালীর আশ্রয়স্থলে যেতে বলেন। বিরোধী দুইপক্ষ একমাত্র শহীদ মুরিদুল ছাড়া আর কারো সিদ্ধান্ত মানতে সম্মত ছিলেন না। ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে শহীদ মুরিদুল চারজন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধা এবং কয়েকজন সঙ্গীসহ রাজাখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাহারছড়ার নিবেদিত প্রাণ জনাব মফজলের বাড়িতে বিরতি এবং মধ্যাহ্নভোজ গ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় তাঁরা আবার যাত্রা শুরু করে ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার খুব ভোরে জলকদর খালে ট্যাঙ ঘরের সম্মুখে সাঁকোর নিচে পৌঁছান। এই সংবাদ কোন না কোন ভাবে অদৃশ্য শক্তির কারসাজিতে রাজাকারদের কাছে পৌঁছে যায়। শহীদ মুরিদুল সাঁকো পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা স্থানীয় কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার শফি তাদের মূল টার্গেট মুরিদুল আলমকে রাইফেল দিয়ে আক্রমণ করলে তিনি আহত অবস্থায় খালের মধ্যে পড়ে যান। প্রতিরোধ করতে গিয়ে তাঁর সহযোদ্ধা ফরিদুল আলমকে রাজাকারেরা হত্যা করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। কী অজানা কারণে অস্ত্রধারী সহযোদ্ধারা রাজাকারদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা না করে পালিয়ে গিয়েছিলেন; বিষয়টি এখনো রহস্যাবৃত। আহত মুরিদুল খালের ঝোঁপের মধ্যে লুকিয়ে থাকাকালে ২১ সেপ্টেম্বর সকালে ঘৃণ্য এক রাজাকার তাঁকে দেখতে পায় এবং দা দিয়ে কুপিয়ে সেখানে হত্যা করে। ১৮ বছরের বিধবা স্ত্রী এবং পিতার মুখ দেখার সৌভাগ্যবঞ্চিত কনিষ্ঠপুত্র মাহবুব আলম চিশতির হৃদয় গভীরে সেই বেদনার নিরন্তর অনুরণন কিছুতেই নিবারণ করার নয়। আরেক পুত্র মাহাবুবুর রহমান শিবলী পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অবিনাশী চেতনাকে ধারণ করে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে পিতৃহত্যার শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পরিবারের সকল সদস্য; লড়াই-সংগ্রামে অবিচল ব্রত-ত্যাগ-আদর্শের অনুপম দৃষ্টান্ত শুধু শহীদ মুরিদুলকে হারান নি; যারপরনায় দু:খ-কষ্ট-যন্ত্রণাকে সারথি করে জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছেন। সাম্প্রতিককালে বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরি-হত্যা ষড়যন্ত্রের কুশীলব, হত্যাকারীদের মদদদাতা, হত্যাকরীদের যারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে আছে, সামরিক শাসকদের আমলে যারা দল-নীতি বদল করে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ঘৃণ্য ব্যক্তির চিহ্নিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় হয়ত শহীদ মুরিদুলের হত্যাকাণ্ডের পিছনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে অনেকের মতো আমারও গভীর বিশ্বাস রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে সম্যক অবহিত করার স্বার্থেই সত্য ইতিহাস আবিষ্কার ও প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তার ব্যত্যয় ঘটলে দেশ ও আগামী প্রজন্ম আমাদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই – নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। আধুনিক কবিতার খ্যাতিমান পুরোধা কবি বিষ্ণু দের ‘সে কবে’ কবিতার পংক্তি – ‘সে কবে গিয়েছি আমি তোমার কীর্তনে কৃতার্থ দোহার।/ পদাবলী ধুয়ে গেছে অনেক শ্রাবণে; স্মৃতি আছে তার।/ রৌদ্রে-জলে সেই স্মৃতি মরে না, আয়ু যে দুরন্ত লোহার।/ শুধু লেগে আছে মনে ব্যথার স্নায়ুতে মর্‌চের বাহার ॥’ উচ্চারণে শহীদ মুরিদুলের স্মৃতির প্রতি আবারো গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে নিবন্ধের ইতি টানছি।লেখক: শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।.tdi_3_005.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_005.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us