প্রায় ২০ বছর ধরে তেলের ঘানি টানছেন ছয়ফুল ইসলাম ও মোর্শেদা বেগম দম্পতি। গরু কেনার অর্থ নেই। তাই বাধ্য হয়ে বছরের পর বছর এ কষ্টের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন এ দম্পতি। সারাদিন ঘাটি টেনে ৫-৭ লিটার তেল তৈরি করা যায়। প্রতিদিন সেই তেল ও খৈল বিক্রি করে আয় আসে ২৫০-৩০০ টাকা। এই দিয়ে ৫ জনের সংসার চলে নানা টানা পোড়নের মধ্যে দিয়ে। কোন সঞ্চয় থাকে না। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউপির তেলিপাড়ার গ্রামের বাসিন্ধা ছয়ফুল ইসলাম ও মোর্শেদা বেগম দম্পতি। তাদের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। গ্রামটি এক সময় খুবই সমৃদ্ধ ছিল। তখন এই গ্রামের প্রতিটি ঘরেই ছিল সরিষা তৈল মাড়াইয়ের ঘানি (মেশিন)। এই ঘাটি টানতে ব্যবহার করা হতো গরু অথবা মহিষ। গরু ও মহিষের চোখ বেঁধে দিয়ে ঘানি ঘুরাতে গরু ও মহিষের কাঁধে তুলে দেয়া হতো ঘানির জোয়াল। এক টানা একটি গরু বা মহিষ ৫-৬ ঘণ্টা ঘানি টানতে পারত। এই সময়ের মধ্যে তৈল উৎপাদন হতো ৫-৬ লিটার। তখনকার দিনে বাজারে ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেল খুবই জনপ্রিয় ছিল। দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ সরিষার তেল দিয়ে রান্না করা খাবার তৈরি করে খেত। এছাড়াও সরিষার তেল শরীরে মাখার কাজেও ব্যবহার হতো। সরিষার তেল দিয়ে তৈরি করা হতো আচার, ভর্তাসহ নানা খাবার। এমন কি হোটেলগুলোতেও সরিষার তেলের খাবার তৈরি করা হতো। সরিষার তেলের চাহিদা থাকায় তৈলিপাড়া ছিল ব্যবসা বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র। সারাদিন তেলি পাড়ায় ঘানি টানার কেরাত কেরাত শব্দে মুখর ছিল। ছিল পাইকারদের আনাগোনা।